পাকিস্তানের মাঠে বাংলাদেশের ইতিহাস গড়া দুই জয়েই ছিল মেহেদি হাসান মিরাজের অবদান। প্রথম ম্যাচে মিরাজের দুর্দান্ত কীর্তি ঢাকা পড়ে গিয়েছিল মুশফিকের রহিমের ১৯১ রানের সেই ম্যারাথন ইনিংসের সুবাদে। আর দ্বিতীয় ম্যাচে ২৬ রানে ৬ উইকেট হারানো দলকে দেখিয়েছিলেন পথ। স্বাভাবিকভাবেই ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কারটাও পেয়েছিলেন তিনি।
যেকোনো বিচারে হয়তো এটাই টেস্টে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অর্জন। তবে সিরিজ সেরা হওয়ার সেই মুহূর্তে মেহেদী মিরাজ স্মরণ করলেন অন্য এক বিজয়ীকে। যিনি বাংলাদেশে হওয়া বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে নিহত হয়েছিলেন। সে আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশে ক্ষমতার পালাবদলও হয়ে গেছে। তার আগেই আন্দোলনের সময় নিহত হন এক রিকশাচালক। সিরিজসেরা হয়ে পুরস্কারের অর্থ তার পরিবারকে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন মিরাজ।
আজ সেই নিহত রিকশাচালকের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের এই অলরাউন্ডার। তুলে দিয়েছেন সিরিজসেরা হয়ে পাওয়া অর্থের পুরোটাই। সিরিজসেরা হয়ে টাইগার এই অলরাউন্ডার ৫ লাখ পাকিস্তানি রুপি অর্থ পুরস্কার পেয়েছিলেন।
নিহত রিকশাচালকের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাতের ছবি নিজের ফেসবুকে পোস্ট করেছিলেন মিরাজ। ক্যাপশনে লিখেছেন নিজের অনুভূতির কথাগুলো। বাংলাদেশের এই অলরাউন্ডার লিখেছেন, ‘সম্প্রতি অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিও আমার চোখে পড়েছিলো। ভিডিওতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত এক রিকশাচালক ভাইয়ের সন্তানের কান্নাজড়িত কন্ঠের কথাগুলো আমাকে বারবার ভাবিয়ে তুলেছে। সে ভাইয়ের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর সংকল্প করেছিলাম। কথা দিয়েছিলাম পাকিস্তান সিরিজের ‘ম্যান অব দ্যা সিরিজ’ এর পুরষ্কারের অর্থ তুলে দেব তাদের হাতে।’
নিজের মা-বাবাকে নিয়েই সেই পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন মিরাজ, ‘গতকাল আমার বাবা ও মায়ের হাত দিয়ে এই অর্থ তুলে দিতে সক্ষম হয়েছি আরিয়ান, আরমান ও আমেনার মায়ের হাতে। জানি, হারানো জীবনের তুলনায় এই অর্থ কিছুই নয়। আমার এই সামান্য অর্থে তাদের জীবনকে কিছুটা সহজ করাটাই আমার সার্থকতা।’
পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের দুই টেস্টে সবমিলিয়ে ১৫৫ রান করেছেন ২৬ বছর বয়সী এই তারকা। একইসঙ্গে তিনি বল হাতে নিয়েছিলেন ১০ উইকেট। প্রথম টেস্টে বাংলাদেশ জয় পায় ১০ উইকেটের বড় ব্যবধানে। সেই জয়ে বড় অবদান রেখে মিরাজ দ্বিতীয় ইনিংসে নিয়েছিলেন ৪ উইকেট।
দ্বিতীয় টেস্টে বল-ব্যাট উভয় হাতেই ত্রাতার ভূমিকা নেন তিনি। প্রথম ইনিংসে ডানহাতি এই অফস্পিনার শিকার করেন ৫ উইকেট, এরপর ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ যখন মাত্র ২৬ রানেই ৬ উইকেট হারিয়ে বসে, তখন লিটন দাসের সঙ্গে ১৬৫ রানের রেকর্ডগড়া জুটি গড়েন।
খুলনা গেজেট/এএজে