দখল-দূষণে ছন্দ হারিয়েছে জেলার একসময়ের স্রোতস্বিনী মরিচ্চাপ নদী। নাব্যতা ফেরাতে তাই সরকারিভাবে এটি পুনঃখননের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তবে স্থানীয়রা বলছেন, যেভাবে খনন করা হচ্ছে তাতে নদী কেটে আসলে খাল বানানো হচ্ছে। তাদের দাবি, মূল নদীর কমপক্ষে ৭৫ শতাংশ বাদ দিয়ে খননকাজ পরিচালনা করা হচ্ছে। এভাবে কাজ চললে সরকারি অর্থ অপচয় ছাড়া কাজের কাজ কিছুই হবে না।
আশাশুনির কাটাখালি গ্রামের বাসিন্দা আলী হায়দার, গোয়ালডাঙ্গা গ্রামের আজিজুল ইসলাম ও আব্দুল হান্নান গাজী জানান, যেভাবে মরিচ্চাপ নদী পুনঃখনন করা হচ্ছে তা জনসাধারণের কোনো উপকারে আসবে না। মূল নদীর ৭৫ শতাংশ বাদ দিয়ে খনন করা হচ্ছে। তাছাড়া কোথাও কোথাও ঘুরিয়ে ইচ্ছামতো খনন করছে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন।
আশাশুনি উপজেলা সদরের বাসিন্দা ও সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ এসএএম আব্দুল ওয়াহেদ জানান, মরিচ্চাপ নদীকে কেন্দ্র করে আশাশুনি বা দক্ষিণাঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রসার ঘটে। খুলনা ও বরিশালের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগমাধ্যম ছিল নৌপথ হিসেবে মরিচ্চাপ নদী। এই নদীর বুক চিরে চলত লঞ্চ, স্টিমার, বড় বড় নৌকা। সুন্দরবনসহ এ অঞ্চলের পণ্যসামগ্রী এক জেলা থেকে অন্য জেলায় পরিবহন করা হতো এই রুটে। এ কারণেই মরিচ্চাপ নদীর তীরে গড়ে ওঠে আশাশুনি বা বর্তমান উপজেলা সদর।
তিনি বলেন, মরিচ্চাপ নদীর নাব্যতা ফেরাতে সরকার পুনঃখননের ব্যবস্থা করেছে। দুঃখজনক হলেও সত্য, নদী কেটে খাল বানানো হচ্ছে। এক্সভেটর মেশিন দিয়ে জমাট পলিমাটি নদীর পাড়ে ফেলে রাখা হচ্ছে। আগামী বর্ষা মৌসুমে ওই মাটি ধুয়ে নদী ফের ভরাট হয়ে যাবে।
নদী বাঁচাও আন্দোলন কমিটির নেতা অধ্যক্ষ আশেক ই-এলাহী জানান, শুধু মরিচ্চাপ নদীই নয়, আদি যমুনা ও বেতনা নদীসহ জেলার সব নদী ও খাল পুনঃখননে অনিয়ম করা হচ্ছে। ফলে সরকার যে লক্ষ্য নিয়ে পুনঃখনন করছে তা পূরণ হবে না। কেবল কোটি কোটি টাকা নষ্ট হবে। কিন্তু জনগণের কোনো কাজে আসবে না।
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভাগ-২-এর নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশের সবকটি জেলার অভ্যন্তরীণ ছোট নদী, খাল ও জলাশয় পুনঃখননের প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এর আওতায় মরিচ্চাপ নদীর মধ্যচাপড়ার খোলপেটুয়া নদীর সংযোগ থেকে শুরু হয়ে উপজেলার তেঁতুলিয়া বেতনা নদী সংযোগ পর্যন্ত সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার পুনঃখননের উদ্যোগ নেয়া হয়। এজন্য ১৬ কোটি টাকার একটি প্রকল্প নেয়া হয়। টেন্ডারে কাজ পায় পটুয়াখালীর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এমএ জেভি। কার্যাদেশ দেয়া হয় গত বছরের অক্টোবরে। ওই কার্যাদেশ অনুযায়ী চলতি বছরের ২০ জুন কাজ শেষ করার কথা।
সিএস রেকর্ড অনুযায়ী আশাশুনির মরিচ্চাপ নদীর প্রস্থ কোথাও ৬০০ ফুট আবার কোথাও ৫৫০ ফুট ছিল। কিন্তু প্রকল্পটির ডিজাইন অনুযায়ী পুনঃখনন করা হচ্ছে ৯০-১৮০ ফুট।
এ ব্যাপারে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এমএ জেভির স্বত্বাধিকারী মোঃ অলিউল্লাহ বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডিজাইন অনুযায়ী খনন কাজ পরিচালনা করা হচ্ছে। এখানে ঠিকাদারদের কিছু করার নেই। এলাকার লোকজন পক্ষে-বিপক্ষে অভিযোগ বা কথা বলবে এটাই স্বাভাবিক। তবে খননকাজে কোনো অনিয়ম করা হচ্ছে না। এরই মধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, আগামী জুনের মধ্যে কাজ শেষ হবে।
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আশিকুর রহমান জানান, মরিচ্চাপ নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে যে পরিমাণ পুনঃখনন করা দরকার সে অনুযায়ী প্রকল্পের ডিজাইন করা হয়েছে। সিএস রেকর্ড অনুযায়ী মরিচ্চাপ নদীর প্রস্থ কোথাও ৬০০ বা কোথাও ৫৫০ ফুট ছিল। তবে একটি নদী পুনঃখনন করে আগের স্থানে ফিরে আনা যায় না।
আশাশুনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রনি আলম নূর বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের শিডিউল ও ডিজাইন অনুযায়ী পুনঃখনন করতে হবে। কোথাও কোনো অনিয়ম বা দুর্নীতির অভিযোগ পেলে তা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
খুলনা গেজেট/এনএম