এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের সাবেক এমডি ও পলাতক আসামি প্রশান্ত কুমার হালদারের (পি কে হালদার) বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা দায়ের করতে যাচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
এবার এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড থেকে ৪৪ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হচ্ছে ওই মামলায়। দিয়া শিপিং লিমিটেড নামে কাগুজে প্রতিষ্ঠানের নাম দেখিয়ে জাল নথিপত্র তৈরি করে ওই টাকা আত্মসাৎ করে পি কে হালদার চক্র। যার অন্যতম সহযোগী ছিলেন এফএএস ফাইন্যান্সের তৎকালীন এমডি ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রাসেল শাহরিয়ার। এছাড়া এফএএস ফাইন্যান্সের সাবেক এক চেয়ারম্যান ও একাধিক পরিচালকসহ আরও ১০ জনকে আসামি করা হচ্ছে মামলায়।
অনুসন্ধান সূত্রে জানা যায়, পি কে সিন্ডিকেট ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রতারণা ও জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে দিয়া শিপিং লিমিটেডের নামে একটি ভুয়া ও কাগুজে প্রতিষ্ঠানকে এফএএস ফাইন্যান্স থেকে ৪৪ কোটি টাকার ঋণ অনুমোদন করে। এরপর ওই অর্থ লেয়ারিংয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন কোম্পানি ও ব্যক্তির ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর ও রূপান্তরের মাধ্যমে অবস্থান গোপন করে আত্মসাতের ছক তৈরি করে পি কে হালদার চক্র।
এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড থেকে এক হাজার ৩০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগের অনুসন্ধান শুরু করে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাটি। এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড থেকে ‘কাগুজে’ প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ দেখিয়ে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে এখন পর্যন্ত ১৩টি মামলা করেছে দুদক। এসব মামলায় পি কে হালদারকে প্রধান আসামি করা হয়।
ঘটনার বিষয়ে আরও জানা যায়, ২০১৬ সালের দিকে দিয়া শিপিং লিমিটেড ঋণের জন্য এফএএস ফাইন্যান্সে আবেদন করে। ঋণ আবেদনের সময় জামানত হিসেবে ঢাকার এক এলাকার জমির জাল দলিল মর্টগেজ দেখানো হয়। আবেদনের কয়েক দিনের মাথায় ঋণ প্রদানের চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় এফএএস ফাইন্যান্স লিমিটেড।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করে দুদকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত ১৬ ফেব্রুয়ারি এফএএস (ফাস) ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড থেকে ৫২৩ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ১৩টি মামলার অনুমোদন দিয়েছিল দুদক। এর মধ্যে দিয়া শিপিং লিমিটেডের নামও ছিল। কিন্তু অনুসন্ধান প্রতিবেদনে জটিলতা দেখা দিলে এটি পুনরায় অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন জমা ও মামলার সুপারিশ করে কমিশন। এর পরিপ্রেক্ষিতে মামলা হতে যাচ্ছে। মামলায় পি কে হালদারকে প্রধান আসামি করে মোট ১২ জনকে আসামি করা হচ্ছে।
মামলার অন্যতম আসামি এফএএস ফাইন্যান্সের সাবেক এমডি রাসেল শাহরিয়ারকে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধানের নেতৃত্বে একটি টিম মোহাম্মদপুর থেকে গ্রেপ্তার করে। তিনি বর্তমানে কারাগারে আছেন।
দুদক সূত্র জানায়, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড থেকে এক হাজার ৩০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগের অনুসন্ধান শুরু করে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাটি। এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড থেকে ‘কাগুজে’ প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ দেখিয়ে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে এখন পর্যন্ত ১৩টি মামলা করেছে দুদক। এসব মামলায় পি কে হালদারকে প্রধান আসামি করা হয়।
এর আগে পি কে হালদারের অন্যতম সহযোগী রতন কুমার বিশ্বাসের বিরুদ্ধে গত ১৭ মে অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলা করে দুদক। রতন কুমার বিশ্বাস আনান কেমিক্যাল লিমিটেডের পরিচালক ও আরবি এন্টারপ্রাইজের মালিক। মামলায় তার বিরুদ্ধে প্রায় ছয় কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়।
আলোচিত পি কে হালদার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত মোট ৩৯টি মামলা দায়ের করেছে দুদক। সংস্থাটির অনুসন্ধান শুরুর চার মাস পর প্রথম মামলা হয় পি কে সিন্ডিকেটেরে বিরুদ্ধে। ২০২০ সালের ৮ জানুয়ারি ২৭৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করেন সংস্থাটির উপপরিচালক মো. সালাউদ্দিন। পরবর্তীতে দুদকের আরেক উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধানের নেতৃত্বে একটি টিম আর্থিক কেলেঙ্কারির বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করে। ওই টিম গত দুই বছরে মোট ৩৭টি মামলা করে।
গত ১৬ ফেব্রুয়ারি এফএএস (ফাস) ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড থেকে ৫২৩ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ১৩টি মামলার অনুমোদন দিয়েছিল দুদক। এর মধ্যে দিয়া শিপিং লিমিটেডের নামও ছিল। কিন্তু অনুসন্ধান প্রতিবেদনে জটিলতা দেখা দিলে এটি পুনরায় অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন জমা ও মামলার সুপারিশ করে কমিশন। এর পরিপ্রেক্ষিতে মামলা হতে যাচ্ছে। মামলায় পি কে হালদারকে প্রধান আসামি করে মোট ১২ জনকে আসামি করা হচ্ছে।
এছাড়া অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলার চার্জশিট ২০২১ সালের নভেম্বরে দাখিল করা হয়। যেখানে ৪২৬ কোটি টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে প্রায় ৬ হাজার ৮০ কোটি টাকা লেনদেনের অভিযোগে এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের সাবেক এমডি পিকে হালদারসহ মোট ১৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় দুদক।
মামলার তদন্তকালে এখন পর্যন্ত ১২ আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে উজ্জ্বল কুমার নন্দী, পিকে হালদারের সহযোগী শংখ বেপারী, রাশেদুল হক, অবান্তিকা বড়াল ও নাহিদা রুনাইসহ ১০ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এছাড়া এক হাজার কোটি টাকা সমমূল্যের সম্পদ অবরুদ্ধ ও জব্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে আদালতের মাধ্যমে ৬৪ জনের বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। একই ইস্যুতে ৩৩ ব্যক্তির সম্পদ বিবরণীর নোটিশ জারি করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত শনিবার (১৪ মে) ভারতের কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার অশোক নগরের একটি বাড়ি থেকে পি কে হালদার ও তার পাঁচ সহযোগীকে গ্রেপ্তার করে। পরে তাকে আদালতে হাজির করলে তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন বিচারক। মঙ্গলবার (১৭ মে) তার বিরুদ্ধে আরও ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন কলকাতার একটি আদালত।
২০১৬ সালের দিকে দিয়া শিপিং লিমিটেড ঋণের জন্য এফএএস ফাইন্যান্সে আবেদন করে। ঋণ আবেদনের সময় জামানত হিসেবে ঢাকার এক এলাকার জমির জাল দলিল মর্টগেজ দেখানো হয়। আবেদনের কয়েক দিনের মাথায় ঋণ প্রদানের চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় এফএএস ফাইন্যান্স লিমিটেড।
হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করে দেশত্যাগ করেন পি কে হালদার। একপর্যায়ে নাম পাল্টে তিনি ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বসবাস শুরু করেন। গ্রেপ্তার হওয়ার আগ পর্যন্ত রাজ্যের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার অশোক নগরের একটি বাড়িতে আত্মগোপনে ছিলেন তিনি।
পি কে হালদার নিজেকে শিবশঙ্কর হালদার নামে ভারতে পরিচয় দিতেন। পশ্চিমবঙ্গ থেকে ভারতীয় রেশন কার্ড, ভারতীয় ভোটার আইডি কার্ড, প্যান ও আধার কার্ডও সংগ্রহ করেন। তার অন্য সহযোগীরাও ভারতীয় এসব কার্ড জালিয়াতির মাধ্যমে সংগ্রহ করেন।