দেশের প্রথম কুমির খামারের স্বপ্নদ্রষ্ট ও অন্যতম অংশীদার ছিলেন লেখক মুশতাক আহমেদ। বৃহস্পতিবার রাতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আটক অবস্থায় কারাগারে মারা যান তিনি।
সেই কুমির খামারের মালিক এখন আলোচিত প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদার। ২০০৪ সালের ২২ ডিসেম্বর ময়মনসিংহের ভালুকা থেকে ১৭ কিলোমিটার দূরে হাতিবেড় গ্রামে ১৩ একর জমিতে দেশের প্রথম বাণিজ্যিক কুমির খামার করেন মুশতাক।
তার আগে বাংলাদেশে কুমির চাষের ধারণা কারো ছিল না। তার খামারটির নাম – রেপটাইলস ফার্ম লিমিটেড।
আর মুশতাকের সেই খামার এখন সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করে বিদেশে পালানো আলোচিত প্রশান্ত কুমার ওরফে পি কে হালদারের দখলে!
পিকে হালদার খামারটি নিয়ন্ত্রণে নিয়েই রেপটাইলস ফার্মের নামে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে বিপুল পরিমাণ ঋণ তুলে নেন পি কে হালদার, যার কোনোটিই শোধ হয়নি এখনও।
সূত্র জানায়, ২০১৩ সালে রিলায়েন্স ফাইন্যান্সের এমডি থাকার সময় পি কে হালদার মুশতাকের খামারটি কৌশলে দখলে নেন। এ কাজে তাকে সহায়তা করেন মুশতাকের ব্যবসায়িক অংশীদার মেজবাহুল হক। মেজবাহ সে সময় একটি বেসরকারি ব্যাংকের পরিচালক ছিলেন এবং খামারের চেয়ারম্যান পদে ছিলেন। মুশতাক ছিলেন এমডি। খামারটি পি কে হালদারের হাতে তুলে দিয়েই মেজবাহুল হক দেশে ছেড়ে চলে যান। এর কিছুদিন পরে পি কে হালদারের চাপে পড়ে মুশতাক আহমেদ তার নামে থাকা খামারটির শেয়ার হস্তান্তরের দলিলে স্বাক্ষর করতে বাধ্য হন। পি কে হালদারের ধানমন্ডি ১ নম্বর রোডের বাসায় স্বাক্ষর করেন মুশতাক।
খামার হাতছাড়া হওয়ারও সাত বছর পর দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন মুশতাক আহমেদ।
২০২০ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি নিজের ফেসবুকে খামারটির মালিকানা বদল নিয়ে মুশতাক লিখেছিলেন, ‘কুমিরের খামার এখন হায় হায় কোম্পানি। ২০১০ সালের ৩রা জুন ছিল বিশেষ দিন। প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ থেকে কুমির রপ্তানি হবে। এর দুই মাস পর চেয়ারম্যান মেজবাহুল হক ঘোষণা দিলেন, কোম্পানি বিক্রি করে দেবেন, আমাকে একটা সাদা কাগজ দিয়ে বললেন সেখানে সাইন করতে। আমি বলে দিলাম সেটা সম্ভব না। শুরু হলোকোর্ট–কাচারি। এরপর প্রশান্ত কুমার হালদার এলেন সামনে। তিনি আমাকে যা বললেন, তাতে বুঝলাম, প্রশান্তের কথায় রাজি না হলে, আমার আম ও ছালা দুইটাই যাবে। একপর্যায়ে আমি আমার শেয়ার বিক্রি করতে বাধ্য হলাম।’
রেপটাইলস ফার্মের বিষয়ে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, খামারটি গঠনের সময় ৩৬ শতাংশ শেয়ার ছিল মেজবাহুল হকের। ১৫ শতাংশ শেয়ার ছিল মুশতাক আহমেদের। মেজবাহুল হক সম্পর্কে মুশতাক আহমেদের মামা। বাংলাদেশ ব্যাংকের ইইএফ প্রকল্পের ঋণ নিয়েছিলেন মুশতাক। সে হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শেয়ার ছিল ৪৯ শতাংশ।
খুলনা গেজেট/ টি আই