পিরোজপুরে তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রীকে ধর্ষণের পর হত্যা মামলায় ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের সাজা পাওয়া দুইজনকে খালাস দিয়েছে হাইকোর্ট। বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ ও বিচারপতি এএসএম আব্দুল মবিনের ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ বুধবার এ রায় দেয়। খালাসপ্রাপ্ত দুইজন হলেন মেহেদি হাসান স্বপন (২২) ও সুমন জোমাদ্দার (২০)।
আদালতে আসামিপক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী শিশির মো. মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শাহীন আহমেদ খান। ডেথ রেফারেন্স খারিজ করে আসামিদের খালাস করে রায় দেয় আদালত। সংক্ষিপ্ত রায় দেয়া হয়েছে বুধবার । দুই সপ্তাহ পর এ বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ রায়ে বিস্তারিত থাকবে বলেও জানিয়েছে আদালত।
এ মামলায় ২০১৬ সালের ৩১ জানুয়ারি পিরোজপুরের জেলা ও দায়রা জজ এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. গোলাম কিবরিয়া দুইজনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন।
এ মামলায় মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য হাইকোর্টে আসে। একই সঙ্গে আসামিরাও আপিল করে। আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের শুনানি শেষে বুধবার আদালত এ রায় দেয়।
মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, পিরোজপুরের মঠবাড়ীয়া উপজেলার ঝাটিবুনিয়া গ্রামের ৯ বছর বয়সী মেয়েশিশুটি উপজেলার বুখাইতলা বান্ধবপাড়া গ্রামে তার নানার বাড়িতে থেকে স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ত।
২০১৪ সালের ৫ অক্টোবর সকালে মেয়েটি তার নানার একটি গরু স্কুল মাঠে ঘাস খাওয়াতে নিয়ে যায়। দুপুর গড়িয়ে গেলেও সে ঘরে ফিরে না আসায় নানাবাড়ির লোকজন বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুজি শুরু করে।
পরের দিন দুপুরে প্রতিবেশী শাহজাহান জমাদ্দারের বাগানে মেয়েটির বিবস্ত্র ওড়না পেঁচানো ক্ষতবিক্ষত মৃতদেহ পাওয়া যায়। খবর পেয়ে মঠবাড়িয়া থানা পুলিশ মৃতদেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পিরোজপুর জেলা হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।
ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ননী গোপাল রায় তার রিপোর্টে উল্লেখ করেন, মেয়েটিকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। পরে তার বাবা ৬ অক্টোবর একটি মামলা করেন।
এ মামলায় তদন্ত শেষ করে ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি দুই আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন তদন্ত কর্মকর্তা। ৭ এপ্রিল তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়।
আসামি সুমন জমাদ্দার ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পরবর্তী সময়ে এই জবানবন্দি প্রত্যাহার করেন। রাষ্ট্রপক্ষ সর্বমোট ১৩ জন সাক্ষী উপস্থাপন করে। অপরপক্ষে আসামিদ্বয় ১১ জন সাক্ষী হাজির করে।
আপিল শুনানিতে আইনজীবী শিশির মনির বলেন, ‘আসামি সুমন জমাদ্দার দাবি করেন যে, তিনি ঘটনার সময় একজন শিশু ছিলেন। অর্থাৎ তার বয়স ছিল ১৬ বছর। কিন্তু ৩১ জানুয়ারি ২০১৬ তারিখে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল, পিরোজপুর তাকে প্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে তার বিচার করে এবং মৃত্যুদণ্ড প্রদান করে।’
খুলনা গেজেট/এনএম