খুলনা, বাংলাদেশ | ৪ আশ্বিন, ১৪৩১ | ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  আ’লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরুল্লাহ গ্রেপ্তার

পিকে হালদারের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

গেজেট ডেস্ক

প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগের মুখে বিদেশে পালিয়ে যাওয়া প্রশান্ত কুমার হালদারকে (পিকে হালদার) গ্রেফতারে ইন্টারপোলের জন্য পরোয়ানা জারি করেছেন ঢাকার একটি আদালত।

বুধবার ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ কেএম ইমরুল কায়েশ এ পরোয়ানা জারি করেন। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে বুধবারই দুদকের পদক্ষেপের হালনাগাদ প্রতিবেদন দাখিলের সময় বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ আড়াই মাসেও পিকে হালদারকে গ্রেফতারে ইন্টারপোলের জন্য পরোয়ানা জারি না হওয়ায় উষ্মা প্রকাশ করেন।  এ সময় উষ্মা প্রকাশ করে বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক বলেন, খুবই আনফরচুনেট! আড়াই মাস হয়ে গেল ওয়ারেন্ট অব অ্যারেস্টের একটা অর্ডার হল না। তখন দুদকের আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান আদালতকে বলেন, আমি যোগাযোগ করেছি, জানিয়েছি। তখন বিচারক তাকে বলেন, আপনি বলবেন, এটা নিয়ে উচ্চ আদালত কনসার্ন্ড।

এর আগে বেঞ্চে দাখিল করা প্রতিবেদনে পিকে হালদারকে গ্রেফতারের জন্য ইন্টারপোলের সহায়তা নিতে আদালতের কাছে পরোয়ানা চাওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়।

দুদকের দাখিল করা প্রতিবেদনে বলা হয়, পিকে হালদারকে দেশে ফেরাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে অনুরোধ করা হলে ইন্টারপোল কিছু তথ্য চেয়েছে, যার মধ্যে আদালতের পরোয়ানা অন্যতম। গ্রেফতারি পরোয়ানার জন্য ১৫ সেপ্টেম্বর মহানগর দায়রা জজ ও জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতের কাছে আবেদন করা হয়েছে। পরোয়ানা জারি হলে পিকে হালদারকে দেশে ফেরাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ইন্টারপোলকে ফের অনুরোধ করা হবে।

এর আগে গত ১৯ নভেম্বর হাইকোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে পিকে হালদারকে দেশে ফিরিয়ে আনতে বা গ্রেফতার করতে দুদক কী পদক্ষেপ নিয়েছে- তা  জানতে চান হাইকোর্ট।

আদেশে দুদক চেয়ারম্যান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, ঢাকা জেলা প্রশাসককে ১০ দিনের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়। পরবর্তী আদেশের জন্য ২ ডিসেম্বর দিন রেখেছিলেন আদালত।

উল্লেখ্য, পিকে হালদারকে দেশে ফিরিয়ে আনতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ইন্টারপোলের সহায়তায় আবেদন করে দুদক। এই আবেদনের প্রেক্ষিতে পিকে হালদারের বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মামলার নথি চায় ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল পুলিশ অর্গানাইজেশন (ইন্টারপোল)।

প্রসঙ্গত, প্রায় দেড়শ’ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের মামলা তদন্তে রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এ ছাড়া আর্থিক খাত থেকে আত্মীয়স্বজন চক্রের মাধ্যমে অন্তত ১০ হাজার কোটি টাকা সরিয়ে নেয়ার কারিগর পিকে হালদারের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত ৪০০ কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অফিসিয়াল তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানা গেছে। দুদক ছাড়াও বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগ পিকে হালদার ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করছে।

এছাড়া দুদকের ক্যাসিনো দুর্নীতির মামলায় চার্জশিট তালিকায় লিজিং কোম্পানি ও আর্থিক খাত থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকা পাচারে জড়িত পিকে হালদারের নামও রয়েছে। ক্যাসিনো সংশ্লিষ্টতায় তার বিরুদ্ধে গত ৮ জানুয়ারি মামলা করেন দুদকের উপ-পরিচালক মো. সালাহউদ্দিন।

এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক পিকে হালদার পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স সার্ভিস লিমিটেডের (আইএলএফএসএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন। গ্রাহকের কোটি কোটি টাকা লোপাট করে তিনি বিদেশে পালিয়ে যান বলে চলতি বছরের শুরুতে খবর আসে। এরপর আইএলএফএসএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে তাকে অপসারণের পাশাপাশি তার সম্পত্তি জব্দ করা হয়।

আইএলএফএসএলের গ্রাহকদের অভিযোগের মুখে চলতি বছরের শুরুতে বিদেশে পালিয়ে যান পিকে হালদার।  বর্তমানে তিনি কানাডায় অবস্থান করছেন।  তবে পিকে হালদার পালিয়ে যাওয়ার পরই দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তার বিরুদ্ধে ৩০০ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করে।

দুদকের এই মামলার মুখে নিরাপত্তা চেয়ে গত ১৯ অক্টোবর হাইকোর্টে আবেদন করে আইএলএফএসএল জানায়, আত্মসাত করা অর্থ ফেরত দিতে জীবনের নিরাপত্তার জন্য আদালতের আশ্রয়ে পিকে হালদার দেশে ফিরতে চাইছেন।  এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক পিকে হালদারের জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে আদালতে আবেদন করে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স সার্ভিস লিমিটেড (আইএলএফএসএল)।

এ আবেদন গ্রহণ করে ২১ অক্টোবর বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।  আদেশে আদালত বলেন, পিকে হালদার বিমান থেকে দেশের মাটিতে পা রাখার সঙ্গে সঙ্গে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশের হেফাজতে নেয়ার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।  তিনি যাতে ‘নিরাপদে’ দেশে ফিরে আত্মসমর্পণ করতে পারেন সেজন্য পুলিশ প্রধান, ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ এবং দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) নির্দেশ দেন আদালত।

কিন্তু ২৪ অক্টোবর জানা গেল পিকে হালদার দেশে ফিরছেন না। ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স সার্ভিস লিমিটেডের (আইএলএফএসএল) আইনজীবী ই-মেইল করে অ্যাটর্নি জেনারেলেরে কার্যালয় ও দুর্নীতি দমন কমিশনকে পিকে হালদারের এই সিদ্ধান্তের কথা জানান তার আইনজীবীরা।

খুলনা গেজেট/কেএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!