সাতক্ষীরায় পাড় নির্মাণের নামে ভরাট করা হচ্ছে পৌরসভার সরকারপাড়ার বহুল পরিচিত ‘ধোপাপুকুর। সরকারি নিয়মনীতি লঙ্ঘন করে প্রশাসনের নির্দেশ উপেক্ষা করে প্রতি দিনই মাটি ফেলে ভরাট করা হচ্ছে পুকুরটি। এ বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে এলাকাবাসী জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
খোঁজ নিয়ে ও এলাকাবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে জানা যায়, বহুকাল আগে থেকেই সাতক্ষীরা পৌরসভার সরকারপাড়া এলাকার ব্যক্তিগত এই পুকুরটি ধোপাপুকুর নামে পরিচিত। খননের পর থেকে ধোপাপুকুরটি এলাকার বাসিন্দারা ব্যবহার করে আসছিলেন। এখন থেকে প্রায় বছর দশেক আগে পুকুরটি কিনে নেন জলিল মোল্লা নামের জনৈক ব্যক্তি। কিছুদিন পর পুকুরটির চারপাশে উঁচু প্রাচীর দিয়ে গেটে তালা লাগিয়ে রাখা শুরু করেন তিন। তবে এসময় পুকুরে মাছ চাষ করা চলছিল। পুকুরটি ক্রয়ের সময় তারা জানিয়েছিলেন, পুকুরটি সর্বসাধারণের জন্য আগের মতোই উন্মুক্ত থাকবে। কিন্তু তারা পুকুরটি উন্মুক্ত না রেখে মৎস্য চাষে ব্যবহার করে আসছেন।
অভিযোগে আরও দেখা যায়, পুকুরের মালিকপক্ষ পুকুরের পাড় তৈরীর নামে সাতক্ষীরা ভূমি অফিসের একটি অনুমতি লাভ করে। প্রকৃতপক্ষে পুকুরটির কোন পাড় নেই। ভেতরে পানি এবং পানির গা দিয়েই সুউচ্চ প্রাচীর। পাড় বলতে প্রাচীরের বাইরে বোঝায়। কিন্তু সেখানে তাদের কোন জায়গা নেই। এমন অবস্থায় কর্তৃপক্ষকে ভুল বুঝিয়ে পুকুরের ভেতরে পাড় ভরাটের নামে পুকুরটি ভরাট করা হচ্ছে। অবৈধভাবে পুকুর ভরাটের কাজ জনসাধারণের গোচরে আসলে তারা সরকারের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবগিত করলে কর্তৃপক্ষ একটি আদেশ দ্বারা পুকুরটি ভরাট কাজ বন্ধ করে দেয়। কিন্তু এর ২/৩ দিন পর এই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে তারা পুনরায় পুকুর ভরাট কার্যক্রম শুরু করলে এলাকাবাসী বাধা প্রদান করে।
এসময় জনৈক মোঃ আব্দুল জলিল, মোঃ হাফিজুর রহমান, মোছাঃ মাহমুদা পারভীন ববি, মোঃ নাসির প্রকাশ্যে জনসাধারণের সম্মুখে ঘোষণা করেন যে, জেলা প্রশাসকের অনুমতিক্রমে তারা ভরাট কার্যক্রম সম্পাদন করছেন। এসময় তাদের কাছে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের অনুমতি পত্র দেখতে চাইলে তারা বলেন, অনুমতিপত্র আপনারা দেখতে চাইলে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের থেকে দেখে আসেন।
অভিযোগে আরও দেখা যায়, স্থানীয়রা খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন যে, পুকুরের মালিকপক্ষ পুকুরের পাড় নির্মাণের নামে গত ২৯ নভেম্বর জেলা প্রশাসকের রাজস্ব (এসএ) শাখা থেকে ৩১.৪৪.৮৭০০:০০৬,১০.০০১.২১-১৭০৩ নং স্মারকে রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর মোঃ আক্তার হোসেন স্বাক্ষরিত একটি পত্র পান যাতে সীমানা প্রাচীর সংলগ্ন স্থান (পুকুর পাড়) মাটি ভরাট করার জন্য অনুমতি প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু জেলা প্রশাসকের অনুমতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে পুকুরটির বর্তমান স্বত্ত্বাধিকারী জনৈক মোঃ আব্দুল জলিল ট্রলি যোগে মাটি এনে সরাসরি পুকুর ভরাটের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এঘটনায় এলাকাবাসীর মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। এ বিষয়ে এলাকাবাসী জেলা প্রশাসকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আবেদন করেছেন। একই সাথে এলাকাবাসী আইন অনুযায়ী পুকুর ভরাট বন্ধের উদ্যোগ গ্রহণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আহবান জানিয়েছেন।
এবিষয়ে সাতক্ষীরা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক সরদার শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি জানার পর আমরা তাকে নোটিশ করেছিলাম। তারপরও কাজ অব্যহত রাখায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়। এসময় পুকুর ভরাট করবে না মর্মে তারা ম্যাজিস্ট্রেট এর কাছে অঙ্গিকার নামা দিয়েছিল। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হলো সদর সহকারি কমিশনার (ভূমি) তাদেরকে পুকুরের পাড় বাধানোর জন্য অনুমতি দিয়েছেন। এজন্য তারা পুকুরের কতটুকু জায়গা ভরাট করতে পারবে তার কোন নির্দেশনা দেয়া হয়নি। এরপরও আমরা আমাদের অবস্থানে অনড় থাকবো। আবারও তাদেরকে নোটিশ করা হবে। তৃতীয় দফায় নোটিশ করার পর পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্টদের নামে মামলা করা হবে বলে জানান তিনি।’
খুলনা গেজেট/ এস আই