খুলনা, বাংলাদেশ | ৩ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৮ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  রাজধানীর উত্তরা থেকে সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম গ্রেপ্তার
  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৬ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১০৮৩
  ১৬ ডিসেম্বর ঘিরে কোনো ধরণের হামলার শঙ্কা নেই : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

পার্বত্য এলাকায় যৌথ অভিযানের প্রস্তুতি, সোনালী ব্যাংকের সব শাখা বন্ধ

গেজেট ডেস্ক

বান্দরবানে ১৬ ঘণ্টার ব্যবধানে দুটি ব্যাংকের তিনটি শাখায় লুটের ঘটনায় যৌথ অভিযানে নামছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। সেনাবাহিনী, পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি সমন্বিতভাবে এই অভিযান পরিচালনা করবে। ব্যাংক লুটের ঘটনায় অভিযুক্ত করা হচ্ছে পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টকে (কেএনএফ)। যারা পার্বত্য চট্টগ্রামের স্বায়ত্তশাসন দাবি করে আসছে। তাদের পোশাক পরিহিত সদস্যরাই তিনটি শাখায় লুটপাট চালিয়েছে বলে দাবি করছে পুলিশ।

বুধবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রামের রেঞ্জের ডিআইজি নুরে আলম মিনা বলেন, ব্যাংক লুট ও অপহরণের ঘটনায় জড়িত কেএনএফ। পরপর দুটি ঘটনায় কোনোরকম ছাড় দেওয়া হবে না। যৌথভাবে অপারেশন করব। যেসব ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, সেগুলো রিকভারি করার চেষ্টা করব। সেনাবাহিনী, পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, মিলে অভিযান হবে, সেভাবেই প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানিয়েছেন, কেএনএফের পোশাক পরিহিতি ২০ থেকে ২৫ সদস্য মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে মসজিদ থেকে ধরে নিয়ে আসে বান্দরবানের রুমা উপজেলার সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজার নিজামুদ্দিনকে। এরপর সোনালী ব্যাংকের একটি ভল্ট ভাঙার চেষ্টা করে। কিন্তু তারা ব্যর্থ হয়ে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ ও আনসার সদস্যদের অস্ত্রও নিয়ে যায়। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে চলে তাদের এই কার্যক্রম। অস্ত্র লুট শেষে ম্যানেজার নিজামুদ্দিনকেও অপহরণ করে নিয়ে যায় তারা।

বান্দরবান পুলিশ জানিয়েছে, হামলাকারীরা দুটি এসএমজি এবং এর ৬০টি গুলি, ৮টি চীনা রাইফেল ও ৩২০টি গুলি, ৪টি শটগান ও ৩৫টি কার্তুজ নিয়ে গেছে।

গতকাল রাতে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও আফজাল করিম  বলেন, রুমাতে আমাদের আর্থিক কোনো ক্ষতি হয়নি। আজ (গতকাল) পুলিশ নিয়ে সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, ডাকাতরা ভল্ট ভাঙতে পারেনি। তবে ম্যানেজারকে অপহরণ করে নিয়ে গেছে। আর থানচিতে ব্যাংক চলাকালীন একই ঘটনা ঘটেছে। সেখানেও ভল্ট ভাঙতে পারেনি। তবে ক্যাশের সামনে থেকে কয়েক লাখ টাকা নিয়ে গেছে। তবে সেটার পরিমাণ কত তা বৃহস্পতিবার (আজ) জানা যাবে।

তিনি আরও বলেন, ওই এলাকার শাখাগুলোকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি ডাকাতির ঘটনায় বান্দরবানের উপজেলা পর্যায়ের ৬টি শাখা সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এসব শাখাকে লোকাল অফিসের নির্দেশনা মেনে কাজ করতে বলা হয়েছে।

মঙ্গলবার রাতে রুমার ঘটনার খবর পেয়ে গতকাল দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। তিনি ঘটনাস্থলে থাকা অবস্থাতেই বান্দরবানের আরেক উপজেলা থানচিতে আরও দুটি শাখায় লুটের ঘটনা ঘটে। গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে থানচির সোনালী ও কৃষি ব্যাংকের দুটি শাখা থেকে আনুমানিক সাড়ে ১৭ লাখ টাকা নিয়ে যায় অস্ত্রধারীরা।

সোনালী ব্যাংক থানচি শাখার ম্যানেজার ফয়সাল হুদা জানান, দুপুরে অস্ত্র তাক করে ৫ থেকে ৭ জন ব্যাংকের ভেতরে ঢোকে। বাইরে আরও ১০ থেকে ১২ জন অস্ত্রধারী ছিল। ক্যাশিয়ারের সামনে আনুমানিক ১৫ লাখ টাকা ছিল। যেগুলো তারা নিয়ে যায়। যাওয়ার সময় তারা গুলি ছুড়তে ছুড়তে যায়। সোনালী ব্যাংকের পাশেই কৃষি ব্যাংকের থানচি শাখা। কৃষি ব্যাংকেও সোনালী ব্যাংকের মতো অস্ত্র তাক করে ক্যাশিয়ারে সামনে থাকা আড়াই লাখ টাকা নিয়ে যায় অস্ত্রধারীরা।

রুমায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, আনসার, পুলিশের অস্ত্র নিয়েছে এবং সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজারকে নিয়ে গেছে। আমরা দেখছি, অস্ত্রগুলো কোথায় আছে, খুঁজে দেখব। এর সঙ্গে যারা জড়িত এদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আইজিপি রুমা উপজেলা পরিদর্শনকালে থানচিতে আরও দুটি শাখায় হামলা ও লুটের ঘটনা ঘটে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইজিপি বলেন, একটু আগেই বিষয়টি শুনেছি। আমরা সতর্ক ছিলাম বলেই তারা এসে পালিয়ে গেছে। আমরা এ বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করছি।

এদিকে ব্যাংক লুটের ঘটনা কুকি-চিন জড়িত জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, বান্দরবানের রুমা এবং থানচিতে ব্যাংক লুটের ঘটনায় কেএনএফ নামে জঙ্গিগোষ্ঠী জড়িত বলে জানা গেছে। তবে এ বিষয়ে এখনো বিস্তারিত তথ্য জানা যায়নি। এ নিয়ে সরকার সব কিছুই করবে।

যৌথ অভিযানের ইঙ্গিত দিয়ে মন্ত্রী বলেন, কুকি-চিন একটি জঙ্গিগোষ্ঠী। কুকি-চিনের তৎপরতা ইদানীং বেড়েছে। বিজিবি-পুলিশ অপারেশন চালাচ্ছে। গোলাগুলি চলছে বলে জানা গেছে। ব্যাংক লুট করে চলে যাওয়ার পর পুলিশ ও বিজিবি সেখানে অপারেশন চালাচ্ছে। সেনাবাহিনী সদস্যরাও সেখানে যোগ দেবেন।

বান্দরবানে সোনালী ব্যাংকের সব শাখার কার্যক্রম বন্ধ

নিরাপত্তাজনিত কারণে বান্দরবান সদর শাখা ছাড়া থানচি, রুমা, রোয়াংছড়ি, আলীকদম, লামা ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সোনালী ব্যাংকের কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল সোনালী ব্যাংকের এজিএম ওসমান গনি বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সোনালী ব্যাংক তাদের কার্যক্রম বন্ধ রাখার ঘোষণা করেছে।

 

খুলনা গেজেট/এইচ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!