পারিবারিক কলহের জেরে খুন করা হয় মো: মিজানুর রহমান সবুজকে। এ ঘটনার অভিযোগে শনিবার রাতে নিহতের শ্বাশুড়ি ও স্ত্রীকে আটক করেছে পুলিশ। এ ব্যাপারে থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, সবুজ ট্রান্সপোর্টের ব্যবসা করত। গত চার বছর পূর্বে পূর্ব বানিয়াখামার এলাকার বাসিন্দা সিদ্দিকের মেয়ে রেশমার সাথে একই এলাকার চান মিয়ার ছেলে সবুজের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে তার স্ত্রী রেশমা ছেলের পরিবারের সাথে ভাল আচরণ করত না।
পারিবারিকভাবে আলাদা হওয়ার চেষ্টা সবসময় অব্যাহত ছিল। মানসিক শান্তি পাওয়ার জন্য দু’বছর আগে মিয়াপাড়া পাইপের মোড় নতুন রাস্তা এলাকার আইনজীবী সালামের বাড়ি ভাড়া নেয়। সেখানে গিয়েও তার সাথে খারাপ ব্যবহার শুরু করে দেয় রেশমা।
শনিবার দুপুরে সবুজ বাইরে থেকে এসে রেশমার নিকট খাবার চায়। খাবার দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাদের মধ্যে মন মালিন্য হয়। এরপর সে বাইরে গিয়ে দুপুরের খাবার গ্রহণ করে। রাত নয়টার দিকে শ্বশুর ও শ্বাশুড়ি তাকে বাড়ি আসার জন্য ফোন দেয়। সে তখন মডার্ন মোড়ে অবস্থান করছে বলে জানান। এরপর সবুজ তার ছোট ভাইকে ফোন দেয়। রাত সাড়ে নয়টার দিকে বাড়ির গেটের সামনে পৌঁছালে পরিকল্পিতভাবে রেশমার পরিবার তার ওপর আক্রমণ করে।
সবুজকে যেভাবে হত্যা করা হয়
মীমাংসার কথা বলে ফোন দেয় শ্বশুর সিদ্দিক। এর আগে থেকে শ্বাশুড়ি ফাতেমা বেগম, শ্বশুর সিদ্দিক ও শালা সাগর হাওলাদারসহ আরও ১০ জন ঘটনাস্থলে অবস্থান নেয়। সবুজ বাড়ির গেটের সামনে মোটরসাইকেল নিয়ে পৌঁছালে অতর্কিত হামলা করা হয় তার ওপর। প্রথমে শ্বাশুড়ি ইট দিয়ে ঘাড়ে আঘাত করে। এরপর স্ত্রী রেশমা আক্তার মাথায় ইট দিয়ে আঘাত করে। পরে শালা ও তার সহযোগীরা সবুজের ঘাড়ে, বুক, পিঠসহ পায়ের উরুতে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করতে থাকে। তার শরীরে ৯ টি ক্ষত চিহ্ন দেখতে পাওয়া যায়।
নিহতের মা হোসনে আরা জানান, গৃহ পরিচারিকার কাজ করে তিনি সন্তানদের মানুষ করেছেন। সন্তানদেরকে কোন দিন কাউকে আঘাত করতে দেয়নি। চার বছর আগে এ এলাকার সিদ্দিকের মেয়ের সাথে তার ছেলে সবুজের বিয়ে হয়। বিয়ের দু’বছর যেতে না যেতে রেশমা পরিবারে অশান্তি শুরু করে দেয়। এরপর স্ত্রীকে নিয়ে মিয়াপাড়া এলাকার ওই বাড়ি ভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করে। তারপরও ছেলেকে এভাবে মরতে হল। এ হত্যাকান্ডের ন্যায় বিচার চেয়েছেন তিনি।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে পূর্ব বানিয়াখামার এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, সবুজের স্ত্রী খালাতো ভাইয়ের সাথে পরকিয়ায় জড়িয়ে পড়ে। যে কারণে স্বামীর সাথে সবসময় খারাপ ব্যবহার করতো রেশমা। বিষয়টি জানতে পেরে সবুজ স্ত্রীকে সরে আসার পরামর্শ দেন। এ ঘটনার পর থেকে পারিবারিক কলহ আরও বেড়ে যায়।
খুলনা থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) মোহাম্মাদ আবু হানিফ খুলনা গেজেটকে জানান, রাতে তার লাশ উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনার সাথে জড়িত থাকার সন্দেহে শ্বাশুড়ি ফাতেমা বেগম ও তার মেয়ে রেশমা আক্তারকে আটক করা হয়েছে। অন্যান্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। হত্যাকান্ডের ব্যাপারে মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে তিনি আরও জানান।
খুলনা গেজেট/এনএম