কুয়েতে সাজাপ্রাপ্ত বাংলাদেশি এমপি কাজি শহিদ ইসলাম পাপুলের এমপি পদ থাকা-না-থাকার বিষয়ে সংসদ স্বতঃপ্রণোদিত হয়েই ব্যবস্থা নিতে পারে – এমন অভিমত দিয়েছেন আইন বিশেষজ্ঞরা। সম্প্রতি বাংলাদেশের লক্ষ্মীপুর-২ আসনের এমপি কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলকে অর্থ ও মানব পাচারের দায়ে কুয়েতের একটি আদালত চার বছরের জেল এবং ৫৩ কোটি টাকার বেশি জরিমানার দণ্ড দেয় ।
বৃহস্পতিবার (২৮ জানুয়ারি) কুয়েতের ফৌজদারি আদালত এই রায় দিয়েছে। কুয়েতের পত্রিকায় এই খবর প্রকাশ হয়েছে। বাংলাদেশের একটি কূটনৈতিক সূত্রও তা নিশ্চিত করে। এ ঘটনার পর বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে তার সদস্যপদ থাকবে কিনা – তা নিয়ে শুরু হয় আলোচনা।
এদিকে স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমগুলোর তথ্য অনুযায়ী, দুপুরে ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন বলেছেন, কুয়েত সরকারের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক কোন তথ্য না পাওয়ার কারণে সাজাপ্রাপ্ত সাংসদ শহীদ ইসলাম পাপুলের বিরুদ্ধে এখনই ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক তথ্য পাওয়ার পরই ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান মন্ত্রী।
তবে আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোন সাংসদের বিরুদ্ধে কোন সাজার রায় হলে সেটি আমলে নিতে আনুষ্ঠানিকভাবে কোন চিঠি বা আবেদনের প্রয়োজন “বাধ্যতামূলক নয়।”
এ বিষয়ে সিনিয়র আইনজীবী শাহদীন মালিক বলেন, “কোন মামলায় সাজা রায় দেয়ার পর সে বিষয়ে কোন প্রতিষ্ঠান বা কর্তৃপক্ষকে জানানো আদালতের দায়িত্ব নয়।”
তিনি বলেন, গণমাধ্যমের খবরও আমলে নিয়ে কোন সাংসদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসলে তা তদন্ত করতে নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দিতে পারেন স্পিকার।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও আইন বিশেষজ্ঞ খুরশিদ আলম খান বলেন, সংবিধান অনুযায়ী কোন সাংসদের বিরুদ্ধে নৈতিক স্খলন-জনিত কারণে দুই বছর বা তার বেশি সাজা হলে তিনি সংসদ সদস্য পদে থাকার অযোগ্য হবেন এবং পরবর্তী ৫ বছর কোন নির্বাচন করতে পারবেন না। সেটি না হলেও সংসদ সচিবালয় বা স্পিকার অভিযোগ বা সাজার বিষয়ে জানার পর সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষমতা সংসদ নেতার রয়েছে বলেও জানান তিনি। “সংসদ সচিবালয় যখন জানতে পারলো, স্পিকার জুডিশিয়াল নলেজে আসলো, তখন ওনারা সুয়োমুটো মোশন নিতে পারেন।”
তিনি বলেন, “পার্লামেন্টের প্রসিডিংসের মধ্যে স্পিকারের এই ক্ষমতা আছে।”
এছাড়া কোন সদস্য সংসদে ৯০ দিনের বেশি অনুপস্থিত থাকলেও তার সদস্যপদ বাতিল হওয়ার বিষয়টি আইনে রয়েছে বলেও জানান তিনি। তার সাংসদ পদ বাতিলের বিষয়ে সংসদের এখনই ব্যবস্থা নেয়া উচিত বলে মনে করেন আইন বিশেষজ্ঞ খুরশিদ আলম খান। “সাজার খবর আমলে নিয়ে ওনার সদস্যপদ এখনই খারিজ করে দেয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনকে একটা ডিরেকশন দিয়ে ওনার পদটা শূন্য করা উচিত।”
কাজি শহিদ ইসলাম পাপুলের বিরুদ্ধে কারাদণ্ডের রায় আসার পর রবিবার(৩১ জানুয়ারি) সংসদের প্রথম অধিবেশন বসলেও এ বিষয়ে কোন আলোচনা হয়নি।
সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামীলীগের সাংসদ আব্দুল মতিন খসরু বলেন, আইন অনুযায়ী, দেশ কিংবা দেশের বাইরে কোন সাংসদের বিরুদ্ধে সাজার রায় হলে তার নির্বাচনে অংশ নেয়ার যোগ্যতা থাকে না। একই কারণে সাংসদ পদে থাকারও যোগ্যতা থাকে না তার। “পার্লামেন্টারিয়ান কনভিকটেড হয়েছেন। উনার সংসদে আসার আর সুযোগ নাই।”
তিনি বলেন, “আইন অনুযায়ী তিনি নির্বাচনের অযোগ্য। নির্বাচনই যদি না করতে পারেন তাহলে নির্বাচিত হয়েও এমপি থাকার নৈতিক এখতিয়ার থাকে না।” এ কারণেই এমপি কাজী শহীদ ইসলাম পাপুলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আলোচনা চলছে বলেও জানান আব্দুল মতিন খসরু। “আমি মনে করে স্পিকার প্রধানমন্ত্রীর সাথে আলোচনা করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবেন।” তবে বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান বিরোধীদল বিএনপির সাংসদ রুমিন ফারহানা অভিযোগ করেছেন যে, শুরু থেকেই সাংসদ পাপুলের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়টি সংসদে ধামাচাপা দেয়ার প্রচেষ্টা ছিল। “আমরা জানি না যে কী ব্যবস্থা এই সংসদ নেবে। কারণ শুরু থেকেই একটা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা ছিল সংসদের।”
তিনি বলেন, “যেহেতু আমরা দেখেছি শুরু থেকেই সংসদে এক ধরণের ডিনায়ালের মধ্যে ছিলেন, এখন তো আসলে ডিনায়ালের মধ্যে থাকবার আর কিছু নেই।” তবে এখন যেহেতু অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে এবং সাজাও দেয়া হয়েছে তাই এই বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার আর কোন বাধা থাকলো না বলে মনে করেন তিনি।
রুমিন ফারহানা বলেন, তার সাংসদ পদ থাকা না থাকার পুরো বিষয়টি এখন সংসদের উপরই নির্ভর করবে। “পুরোটাই সংসদের উপরে। সংসদ চাইলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে।”
গত বছরের ৬ই জুন কুয়েতে নিজের বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয় এমপি কাজি শহীদ ইসলাম পাপুলকে। তিনি ২০১৮ সালে ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে লক্ষ্মীপুর-২ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে এমপি হন। পরে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যের কোটায় তার স্ত্রীও এমপি হন। বাংলাদেশেও কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল এবং তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক।