খুলনা, বাংলাদেশ | ১৫ আষাঢ়, ১৪৩১ | ২৯ জুন, ২০২৪

Breaking News

  চট্টগ্রামে সীতাকুণ্ডে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাস খাদে, উদ্ধারে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিস
  প্যারাগুয়েকে ৪-১ গোলে উড়িয়ে দিলো ব্রাজিল
পর্যাপ্ত খাদ্য ও সূপেয় পানির সংকট

পানিবন্দি মানুষের প্রাণের আকুতি : ত্রাণ নয়, টেকসই বেড়িবাঁধ চাই

শেখ নাদীর শাহ্, পাইকগাছা

ঘূর্নিঝড় রেমাল এর তান্ডবে সুন্দরবন উপকূলীয় খুলনার পাইকগাছা উপজেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চল লন্ডভন্ড হয়েছে। বিশেষ করে উপজেলার বিভিন্ন পোল্ডারে পাউবোর বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে গ্রামের পর গ্রামে মূহুর্তেই লবণ পানি প্রবেশ করে প্লাবিত হয়েছে হাজার-হাজার বিঘার চিংড়ি ঘের, ভেসে গেছে কোটি কোটি টাকার মাছ।

রবিবার রাতে জোয়ারের উপর জলোচ্ছ্বাসে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার বেড়িবাঁধের একাধিক পয়েন্টে ভেঙে ও বাঁধ উপছে লোকালয়ে লবণ পানি ঢুকে ঘর-বাড়ী, রাস্তাঘাট, পুকুর ও ফসলের ক্ষেত তলিয়ে ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয়েছে।

যদিও শীবসার শাখা মাঙ্গা নদীর দেলুটির ২০,২১ ও ২২ নং পোল্ডারের পাউবোর বেড়িবাঁধের বিভিন্ন পয়েন্টে ভেঙে গোপিপাগলা, হাটবাড়িয়া, ফুলবাড়িয়া, সৈয়দখালী, সেনের বেড়, খেজুরতলা, বিগরদানা, দূর্গাপূর, কালীনগর, দারুনমল্লিক, নলডাঙ্গাসহ অন্তত ১৪টি গ্রাম এখনও প্লাবিত রয়েছে। এসব এলাকার প্রায় ৯০ শতাংশ কাঁচা-ঘর বাড়ি ধ্বসে পড়েছে। এছাড়া সেখানকার সহস্রাধিক পরিবার ওয়াপদাসহ আশপাশের রাস্তার ধারে পলিথিনের নীচে কোন রকম আশ্রয় নিয়েছেন। যদিও সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে প্রতিদিন শুকনো খাবার পৌছালেও পর্যাপ্ত সূপেয় পানির অভাব দেখা দিয়েছে।

বৃহস্পতিবার দূর্গত এলাকায় সরেজমিনে কথা হয় দারুনমল্লিক এলাকার প্রশান্ত অধিকারী ও গোপি পাগলার বিল্লমঙ্গলের সাথে। তারা বলেন, রেমালের হানা দেওয়ার আগে ২৫ মে থেকে তারা সেখানকার বাঁধে স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করে বাঁধ রক্ষায় প্রাণপণ চেষ্টা করেছেন।

তেলিখালীর দেবাশীষ গাইন ও নজরুল মোড়ল জানান, ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে তাদের এলাকার ৯০ শতাংশ মাটির ঘর ধ্বসে পড়েছে। সেখানকার অধিকাংশ পরিবার এখনো খোলা আকাশের নীচে ওয়াপদার উপর জবুথবু বসবাস করছেন।

প্রসঙ্গত, ২৬ মে রবিবার রাতে ঘূর্ণিঝড় রিমেলের প্রভাবে উপজেলার পাউবোর বেড়িবাঁধের অন্তত ৩৫ টি স্থানে ভাঙ্গনে বিস্তীর্ণ অঞ্চল লবণ পানিতে প্লাবিত হয়। এতে হাজার হাজার বিঘার চিংড়ি ঘের, ফসলের ক্ষেত ভেসে গেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েন প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার পরিবার। এসময় প্লাবিত অঞ্চল সমূহের ৯০ শতাংশ কাঁচা ঘর-বাড়ি ধ্বসে পড়ে। বাতাসের একটানা গতিবেগের সামনে ও গাছ পড়ে বৈদ্যুতিক পিলার উপড়ে পড়ে ও সংযোগ তার ছিড়ে পড়ে। এখনো প্লাবিত সব এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া সম্ভব হয়নি।

যদিও প্রথম থেকেই উপজেলা পরিষদের মাধ্যমে পাউবো ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাসমূহে জিও ব্যাগ ও বস্তা সরবরাহ করে। তবে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসী স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ মেরামত কার্যক্রম এগিয়ে নিচ্ছেন। ভাঙ্গনকবলিত অনেক এলাকায় জোয়ারের পানির চাপে ফের লবণ পানি প্রবেশের আশংকা করা হচ্ছে।

এদিকে পানিবন্দি ওয়াপদার রাস্তার উপর ও আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান করা পরিবারসমূহের মধ্যে সুপেয় পানির অভাব দেখা দিয়েছে। উপজেলা পরিষদ ও বিভিন্ন জনপ্রতিনিধিসহ ব্যক্তি উদ্যোগে সরবরাহকৃত শুকনো খাবার তুলে দেওয়া হলেও সুপেয় পানির সংকট দেখা দিয়েছে। কোন কোন এলাকায় পানিবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়ারও আশংকা করা হচ্ছে।

সরকারি হিসাব অনুযায়ী তাৎক্ষণিক ১৩ হাজার ৪৬১ টি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েন। যার মধ্যে সম্পূর্ণ পানিবন্দি রয়েছে অন্তত ৮৩১ টি পরিবার। যাদের নারী, শিশু ও বয়স্কদের নিয়ে খানিকটা মানবিক সংকট তৈরি হয়েছে।

ইতোমধ্যে দূর্যোগ পরবর্তী সরকারের ভূমি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীসহ একাধিক প্রতিমন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্য গণ ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেন। এসময় তারা টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের পাশাপাশি সংকট মোকাবেলায় তাদের পাশে থাকার আশ্বাস প্রদান করেন।

এছাড়া দূর্যোগ পরবর্তী প্রায় সার্বক্ষণিক সকল কার্যক্রমের উপর নজর রাখছেন, খুলনা-৬ আসনের সংসদ সদস্য মো: রশীদুজ্জামান, উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ার ইকবাল মন্টু, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহেরা নাজনীন, সহকারী পুলিশ সুপার ডি-সার্কেল সাইফুল ইসলাম, থানা অফিসার ইনচার্জ ওবাইদুর রহমান, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ইমরুল কায়েসসহ জনপ্রতিনিধিরা।

সবচেয়ে বড় ব্যাপার আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থীরা স্বশরীরে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তারা প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকায় উপস্থিত হয়ে খাদ্যপণ্য সরবরাহের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ মেরামতে সহযোগীতা করছেন।

প্রার্থীদের একজন আনন্দ মোহন বিশ্বাস বলেন, তিনি উপজেলার দূর্যোগপীড়িত সব এলাকায় গিয়েছেন। তাদের একটাই কথা ত্রাণ নয়, তারা শুধুমাত্র টেকসই বাঁধ চান। তাই তিনি সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।

এমনকি বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শুরু করে নদীতে জোয়ার আসা পর্যন্ত আনন্দ মোহন বিশ্বাসকে দেলুটির বিভিন্ন এলাকায় স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ মেরামতে অংশ নেওয়া গণমানুষের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে দেখা যায়।

এদিকে দূর্যোগপীড়িতরা গণমাধ্যমকর্মী আঁচ করতে পারলেই এগিয়ে আসছেন। এসময় তারা মিডিয়ার মাধ্যমে তাদের দূর্দশার কথা তুলে ধরে সরকারের কাছে টেকসই বাঁধ নির্মানের দাবি জানান।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!