যে দিক চোখ পড়ে সেদিকে পানি আর পানি। যেন মাটি চোখে পড়ার কোন উপায় নেই। এ অবস্থায় মানুষের বাইরে বের হওয়া দুস্কর। আয় রোজগারে ভাটা পড়েছে মানুষের, জীবন যাত্রা পড়ছে হুমকিতে। প্রতিবারের ন্যায় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সব চেয়ে বড় উৎসব দুর্গো উৎসব (পূজা) কিভাবে শেষ হবে তা নিয়ে চিন্তার যেন শেষ নেই। তারপরও আশায় বুক বেঁধে অথৈই পানির মধ্যেই বালুর বাঁধ দিয়ে প্রতিমা প্রতিষ্ঠা করে উৎসব পালনের চেষ্টায় সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।
রামসরা গ্রামে দেখা যায় পানির মধ্যে পুজা অর্চণা চলছে। বালুর বস্তা ব্যবহার করে দর্শনাথীরা চলাচল করছে। সম্প্রতি দুই দফা টানা বৃষ্টিপাতে যশোরের অভয়নগর উপজেলার ২৫ গ্রামের হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। জলাবদ্ধতার কারণে ভবদহ অঞ্চলে মানুষের এই উৎসবের আনন্দ অনেকটাই ম্লান হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
সুন্দলী গ্রামে ৪০০ ফিট বাশেঁর সাকো পার হয়ে যেতে হচ্ছে পুজা মন্ডবে। সেখানে মাচা তৈরি করে স্থাপন করা হয়েছে অস্থায়ী মন্দির। সব মিলিয়ে একটা হযবরল পরিবেশ পুজার আয়োজনকে ঘিরে। এমন ভয়াবহ পরিস্থিতিতে হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীও উৎসব দূর্গাপুজা।
২ অক্টোবর মহলয়ার মধ্য দিয়ে পুজার আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয় এবং ১২ অক্টোবর বিজয়া দশমীর মধ্যদিয়ে শেষ হবে। তবে এ উপলক্ষে উৎসবের কোন আমেজ নেই ভবদহ অঞ্চলের প্রেমবাগ, সুন্দলী, পায়রা ও চলিশিয়া ইউনিয়নের ভুক্তভোগী সনাতন ধর্মাবলম্বী মানুষের মনে। চারিদিকে কেবল অথৈ পানি ও সীমাহীন দুর্ভোগে উৎসবের আনন্দকে ম্লান করে দিয়েছে। দু’মুঠো ভাত জোগাড় যেখানে চরম আরধ্য; উৎসব সেখানে বিলাসীতা বলে জানিয়েছেন পানিবন্দি এলাকার মানুষ।
উপজেলা পরিষদের তথ্য মতে, অভয়নগরে অর্ধশতাধীক মন্দির পানিতে তলিয়ে গেছে। পুজা অর্চনার নূন্যতম অবস্থা নেই ৩৫টি মন্দিরে। তাছাড়া পানির কারণে সুন্দলী ইউনিয়নের ৫টি ও আন্ধা গ্রামের একটি মন্দিরে কোন প্রকার পুজা হবেনা।
উপজেলার সুন্দলী ইউনিয়নের শেখর বিশ্বাস বলেন, আমাদের কোন পুজো নেই। পুজোর সময় ছেলে মেয়েদের নতুন জামাকাপড় কিনে দিতে পারছি না। পানিও সরছে না। আমাদের কষ্ট দেখার আসলে কেউ নেই।
এ ব্যাপারে অভয়নগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়দেব চক্রবর্তী বলেন, প্রতি বছর সরকারি যে বাজেট থাকে দুর্গাপূজার জন্য তা ইতিমধ্যে প্রদান করা হয়েছে। তাছাড়া যারা একান্ত অসহায় তারা যদি কোন প্রকার সাহায্যের জন্য আবেদন করে আমরা তাদেরকে সহায়তা করবো।
খুলনা গেজেট/এসজেড