কাঁচা পাটের কৃত্রিম সংকট ঠেকাতে পাট অধিদপ্তর খুলনার দৌলতপুর মোকামে মোবাইল কোর্ট চালনার পরামর্শ দিয়েছে। অবৈধ মজুদ ও লাইসেন্সবিহীন পাট ব্যবসা, কাঁচা পাটে বালি বা পানি মেশানো বন্ধ করার জন্যই এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পাট উৎপাদন কম এবং বেসরকারি পাট কলগুলোতে কাঁচা পাটের চাহিদা বেড়েছে। অধিক মুনাফার জন্য অসাধু ব্যবসায়ীরা অজ্ঞাতস্থানে কাঁচা পাট মজুদ করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করছে।
গত বছরের ফেব্রুয়ারির শেষদিক থেকে করোনা মহামারী আকার ধারণ করায় সারা বিশ্বে অর্থনীতিতে মন্দাভাব বিরাজ করে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাটের চাহিদা কমে যায়। সে কারণেই চাষিরা পাট কম উৎপাদন করে। সারা দেশে ৮৫ লাখ বেলের স্থলে ৫৫ লাখ বেল পাট উৎপাদন হয়। আম্ফানের কারণে উৎপাদিত পাট নষ্ট হয়। মিল বন্ধ থাকার পর কৃষকদের ধারণা ছিল যে, কাঁচা পাট বিক্রির পরিমাণ কম হবে। কিন্তু এ ধারণা পুরোপুরি পাল্টে গেছে। খুলনাঞ্চলের ২২টি বেসরকারি পাট কলের চাহিদা অনেক বেড়েছে। সে পরিমাণ কাঁচা পাট যোগান দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। ফলে অসাধু ব্যবসায়ীরা মজুদ করছে।
পাট অধিদপ্তরের মহা-পরিচালক হোসেন আলী খন্দকার গত ২৫ জানুয়ারি এক দাপ্তরিক পত্রে পাটের কৃত্রিম সংকট ঠেকাতে কয়েকদফা পরামর্শ দিয়েছেন। পরামর্শে বলা হয়েছে, ছোট ব্যবসায়ীরা এক হাজার মন কাঁচা পাট এক মাসের বেশি মজুদ করতে পারবে না, দৌলতপুর পাট মোকামে নিয়মিত মনিটরিং থাকতে হবে, কাঁচা পাটে বালি বা পানি মেশানো যাবে না, বৈধ লাইসেন্স ব্যতিত কেউ পাট ব্যবসা করতে পারবে না।
পাট অধিদপ্তরের খুলনাস্থ সহকারী পরিচালক এ এম আক্তার হোসেন এ প্রতিবেদককে জানান, গত ৩ জুলাই থেকে সরকারি পাট কলের উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। খুলনাঞ্চলে বেসরকারি ২২টি পাট কলে চাহিদা বেড়েছে। পাটের মন এখন চার হাজার আটশ’ টাকা। অধিক লাভের আশায় অসাধু ব্যবসায়ীরা কাঁচা পাট মজুদ করছে। তাদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা হবে। গত মঙ্গলবার প্লাস্টিকের বস্তা ব্যবহার করায় মোবাইল কোর্ট দৌলতপুর ইসমাইল হোসেন নামক এক ব্যবসায়ীকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে। তিনি বলেন, অতি বৃষ্টি, আম্ফানে ক্ষতি এবং উৎপাদন কম হওয়ায় দৌলতপুর মোকামে কাঁচা পাটের সংকট দেখা দিয়েছে।
বাংলাদেশ জুট এসোসিয়েশনের সাবেক চেয়ারম্যান রেজাউল করিম বলেন, পাট মৌসুম শুরুর পর থেকে এবারে কৃষকরা ভালো দাম পাচ্ছে। বাজারে সংকট থাকলেও কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না বরং লাভবান হচ্ছে। তিনি বলেন, সরকারি পাট কল বন্ধ হলেও করোনা মহামারির কারণে লোকসানের ভয়ে কৃষকরা কম জমিতে পাটের আবাদ করায় এ সংকট সৃষ্টি হয়েছে।
খুলনা গেজেট/কেএম