খুলনায় পাট কনভেনশনে বক্তারা বলেছেন, মাত্র ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দের মাধ্যমে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের আধুনিকায়ন করা সম্ভব। সরকার তা না করে ৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করে কারখানা বন্ধ করেছে। উৎপাদন বন্ধ রেখে বিজেএমসি ও মিল কর্মকর্তা-কর্মচারিকে বেতন ভাতা প্রদান করছে। ২৬টি পাটকলের জায়গা-জমি-রাস্তা-গোডাউন-নদীরঘাট এবং যন্ত্রপাতির বাজারমূল্য প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা। লোকসানের অজুহাতে জাতীয় স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে লিজ ও পিপিপির নামে রাষ্ট্রের এই সম্পদ তুলে দেয়া হচ্ছে ব্যক্তির হাতে। দরকার ছিল লোকসানের জন্য দায়ি মন্ত্রণালয় ও বিজেএমসির দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের অপসারণ ও বিচার করা, বিজেএমসিকে পুনর্গঠিত করা। দরকার ছিল ভারতকেন্দ্রীক সা¤্রাজ্যবাদী স্বার্থের চাপ মোকাবিলা করে, ভ্রান্তনীতি ও ব্যবস্থাপনাগত দক্ষতার অভাব কাটিয়ে, প্রতিষ্ঠানটিকে দুর্নীতিমুক্ত করে এবং পুরাতন যন্ত্রপাতি আধুনিকায়ন করে রুগ্ন দশা থেকে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটশিল্পকে বের করে এনে পাটশিল্পের যথাযথ সম্প্রসারণ ঘটানো। আধুনিকায়ন করলে উৎপাদন ক্ষমতা তিনগুন বৃদ্ধি পাওয়ায় কিছু নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হতো। উৎপাদিত পণ্যের গুণগতমান, বহুমুখিনতা ও বৈচিত্র্য বৃদ্ধি পেতো। বিশ^বাজারে প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ প্রাধান্য বিস্তার করতে সক্ষম হতো।
পাটকল রক্ষায় সম্মিলিত নাগরিক পরিষদ এর উদ্যোগে শনিবার (১৭জুন) শনিবার বিকেল ৩টায় প্রেসক্লাব অডিটোরিয়ামে এ কনভেনশনের আয়োজন করে।
কনভেনশনে জানানো হয়, সামগ্রিকভাবে বিজেএমসি আত্মনির্ভরশীল, কার্যকর এবং সরকারি কোন আনুকূল্য সাবসিডি ছাড়াই লাভজনক ও ব্যবসায়িকভাবে পরিচালিত হতে পারতো। কিন্তু সরকার সে পথে হাটেনি। লোকসানের অজুহাতে সরকার রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল বন্ধ করে দিয়েছে। অথচ সরকার এ সময়ে খেলাপি ঋণ মাফ করেছে ৪৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি। গত সাত-আট বছরে কোন কাজ না করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্যুইক রেন্টাল কোম্পানি সরকারের কাছ থেকে ভর্তূকি নিয়েছে ৯০ হাজার কোটি টাকার উর্ধ্বে। তাহলে পাটকল কেন সরকারের ভর্তূকি পাবে না? ইউরোপ-আমেরিকার শত শত সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান যুগ যুগ ধরে বিপুল পরিমান রাষ্ট্রীয় ভর্তূকি পেয়ে আসছে। ২০০০ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত ১৮ ট্রিলিয়ন ডলার দেয়া হয়েছে আমেরিকার ৫০০ বড় কোম্পানিকে। গত কয়েক দশকে আমেরিকার ম্যানুফ্যাকচারিং খাত লোকসান দেয়া শুরু করলে রাষ্ট্রীয় ভর্তূকির শীর্ষ তালিকায় উঠে আসে দেশটির বড় বড় শিল্প কারখানা। পাট ও পাটশিল্পের গুরুত্ব বিবেচনায় না নিয়ে সা¤্রাজ্যবাদী সংস্থা ও দেশগুলোর পরামর্শে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলে ভর্তূকি প্রদানের নীতি থেকে সরে আসা ছিল জাতীয় অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর। এখন আইএমএফ ও বিশ^ ব্যাংকের ভুল প্রেসক্রিপশন এবং সরকারের ভ্রান্ত নীতি বাদ দিয়ে, বিজেএমসির ব্যবস্থাপনার দক্ষতার অভাব দূর করে, ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তাদের দুর্নীতি প্রতিরোধ করে, পুরাতন যন্ত্রপাতি আধুনিকায়ন করে প্রকৃতিবান্ধব পাট ও পাটশিল্পকে রাষ্ট্রীয় মালিকানায় পুনরুজ্জীবিত করাই হবে জাতীয় স্বার্থের সবচেয়ে যুক্তিযুক্ত পদক্ষেপ।
কনভেনশনে সভাপতিত্ব করেন নাগরিক পরিষদের আহবায়ক এ্যাড. কুদরত-ই-খুদা এবং সঞ্চালনা করেন সদস্য সচিব এস এ রশীদ। কনভেনশনে ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন সিপিবি নেত্রী সুতপা বেদজ্ঞ। কনভেনশনে অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)’র সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড মুহাম্মদ ইয়াহইয়া আখতার, সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল- বাসদ কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ, বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবীর জাহিদ, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ এবং ঢাবি শিক্ষক ও অর্থনীতিবিদ এমএম আকাশের অনুপস্থিতিজনিত কারণে তাঁদের প্রেরিত লিখিত বক্তব্য পাঠ করে শোনান যথাক্রমে গণসংহতি আন্দোলন খুলনা জেলা আহবায়ক মুনীর চৌধুরী সোহেল ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ খুলনা জেলা আহবায়ক জনার্দন দত্ত নান্টু।স্থানীয়দের মধ্য থেকে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) কেন্দ্রীয় সদস্য ও খুলনা জেলা সভাপতি ডা. মনোজ দাশ, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল বাসদ খুলনা জেলা আহবায়ক জনার্দন দত্ত নান্টু, বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য মোঃ মোজাম্মেল হক খান। এছাড়াও বন্ধ ২৬টি পাটকলের আন্দোলনরত শ্রমিক নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
লিজ বা ব্যক্তি মালিকানায় নয়,বন্ধ সকল রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল অবিলম্বে রাষ্ট্রীয় মালিকানায় চালু, আগামী বাজেটে পাটখাতের জন্য বিশেষ বরাদ্দ, ৫টি পাটকলের (খালিশপুর, দৌলতপুর, জাতীয়, কেএফডি, আরআর জুটমিল) শ্রমিকসহ সকল শ্রমিকের পাওনা (এরিয়ার, একটি বোনাস, একটি ইনক্রিমেন্ট, ৮টি বোনাসের ডিফারেন্স, ২০২০ সালের জুলাই মাসের ২দিনের মজুরি, অবশিষ্ট শ্রমিকদের সঞ্চয়পত্রের কাগজপত্র ঈদুল আযহার আগে প্রদানের দাবিতে এবং বন্ধ সকল রাষ্ট্রায়ত্ব পাটকল চালু ও আন্দোলনের নীতি-কৌশল প্রণয়নের লক্ষ্যে এ কনভেনশনের আয়োজন করা হয়।
কনভেনশনে বক্তারা আরো বলেন, করোনাকালে যখন অসংখ্য মানুষ কর্মহীন, খাদ্য ও চিকিৎসা সংকটে বিপর্যস্ত, যখন বিশ^জুড়ে একদিকে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রগুলো মজবুত করার চেষ্টা চলছে, যখন পরিবেশবান্ধব শিল্প আর অর্থনৈতিক তৎপরতাকে গুরুত্ব দেয়ার তাগিদ বাড়ছে ঠিক সেই সময়ে লক্ষাধিক শ্রমিক ও কৃষক পরিবারকে অনিশ্চয়তায় ফেলে ২০২০ সালের ২ জুলাই দেশের প্রধান পরিবেশবান্ধব শিল্প ২৬টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল বন্ধ করে দেয়া হয়। সরকার মিল বন্ধের দুইমাসের মধ্যে সকল পাওনা পরিশোধের অঙ্গীকার করলেও অদ্যাবধি অনেক শ্রমিক এরিয়ারসহ তাদের বকেয়া পাওনা পায়নি। খুলনার খালিশপুর জুট মিল ও দৌলতপুর জুট মিল, সিরাজগঞ্জের জাতীয় জুট মিল এবং চট্টগ্রামের কেএফডি ও আর আর জুটমিলের শ্রমিকরা এখনও বকেয়া কোনো টাকা পায়নি। এছাড়াও বিভিন্ন মিলের শ্রমিকরা যাদের মামলা আছে তাদের দ্রুত মামলা নিস্পত্তি করে বকেয়া পাওনা পরিশোধ করা হচ্ছে না। অনেকে সঞ্চয়পত্রের কাগজ এখনও পায়নি। ফলে শ্রমিকেরা নিদারুণ যন্ত্রণা ও উৎকণ্ঠার মধ্যে দিনাতিপাত করছেন। মিলগুলির স্কুলের ছাটাইকৃত শিক্ষক-কর্মচারিরা অনেক কষ্টে আছেন। অন্যদিকে উৎপাদন বন্ধ থাকার পরেও দুর্নীতিবাজ বিজেএমসি ও মিলের ২৫১৭ জন কর্মকর্তা-কর্মচারি সবেতনে বহাল তবিয়তে আছেন। সরকার তাদের জন্য বছরে বেতন বাবদ প্রায় ১৪০ কোটি টাকা প্রদান করছে।
বক্তারা বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল বন্ধ করার মধ্য দিয়ে পাটের চাষ ও পাটের বাজারজাতকরণ এক চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। পাট-পাটশিল্প ও পাটশ্রমিকদের ওপর সর্বশেষ আক্রমণ আকস্মিক কোনো ব্যাপার নয়। এটা বহু বছরের পরিকল্পিত কার্যক্রমের ফলাফল। সরকারের সা¤্রাজ্যবাদ-আধিপত্যবাদ কেন্দ্রীক নয়া উদারবাদী নীতিগত অবস্থানই পাটকল বন্ধের মূল কারণ। এই নয়া উদারবাদ দেশি-বিদেশী লুটেরাদের স্বার্থে রাষ্ট্রের সবধরনের কল্যাণমূলক কর্মসূচির সংকোচন ঘটাতে অতিমাত্রায় আগ্রহী। বিশ^বাজারে যখন পাট ও পাটজাত পণ্যের চাহিদা বাড়ছে, এমন একটি সম্ভাবনাময় সময়ে সরকার এই নয়া উদারবাদী ভাবাদর্শে সজ্জিত হয়ে লোকসানের অজুহাতে সকল রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল বন্ধ করে দিয়েছে। এর সাথে সরকারের অগণতান্ত্রিক কর্তৃত¦বাদী শাসনের পক্ষে আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায়ের সম্পর্কও জড়িত।
বক্তারা বলেন, পাট চাষ ও পাটশিল্প আমাদের ইতিহাস-ঐতিহ্য-সংস্কৃতির সাথে জড়িত। বাংলার পরিচয়ের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হচ্ছে পাট ও পাটশিল্প। ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানসহ বাংলাদেশের আত্মপরিচয়ের সাথে পাট শিল্পের ইতিহাস জড়িয়ে আছে। স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে দেড় যুগ পাট ও পাটজাত পণ্যই ছিল প্রধান রপ্তানিকারক পণ্য। আজও আমাদের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি হচ্ছে পাট ও পাটশিল্প। পরিবেশ সুরক্ষায় পাটের বিরাট অবদান আছে। দেশী-বিদেশী লুটেরাদের স্বার্থে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল বন্ধের সিদ্ধান্ত আমাদের সংবিধানে ঘোষিত মৌলিক নীতির লংঘন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনা ও লক্ষ্যকে সুপরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র। তাই আমাদের আত্মপরিচয়ের অবিচ্ছেদ্য অংশ পাট-পাটচাষিদের এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের সুফল রাষ্ট্রায়ত্ত পাট শিল্পকে পুনরুজ্জীবিত করার সংগ্রাম গড়ে তোলা আমাদের একটা জাতীয় দায়িত্ব।
বক্তারা বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোর বিকাশের বিরাট সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু পাটকলসহ শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলি রাষ্ট্রায়ত্তকরণ খুব সুচিন্তিত ও সুপরিকল্পিত ছিলো না, ব্যবস্থাপনা ছিলো খুব দুর্বল। রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলো ক্রমে ক্রমে নতুন ধনিকশ্রেণি গড়ে ওঠার একটা মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হতে থাকে। এই প্রক্রিয়ায় স্বাধীনতার পর পর জাতীয়করণ নীতির ফলে যেসব বুর্জোয়ারা সম্পত্তি হারিয়ে দারুণভাবে আশাহত হয়েছিলো তাদের পুনরুত্থানকে নিশ্চিত করা হয়। রাষ্ট্রায়ত্ত পাটশিল্প ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে আসার জন্য বাংলাদেশের শাসকশ্রেণির রাজনীতি ও অর্থনীতির ছত্রছায়ায় দেশী-বিদেশী লুটেরা চক্রই দায়ী। আইএমএফ-বিশ^ব্যাংক-এডিবির ভুল প্রেসক্রিপশন, এদেশের লুটেরা সামাজিকভাবে দায়হীন শাসকশ্রেণির ভ্রান্তনীতি, ব্যবস্থাপনার দক্ষতার অভাব, ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তাদের দুর্নীতি, সর্বোপরি পুরাতন যন্ত্রপাতি আধুনিকায়ন না করে এই শিল্পকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেয়া হয়েছে।
বক্তারা বলেন, আমাদের পাটশিল্পের ক্রম অবনতির বিপরীতে ভারতে রয়েছে রাষ্ট্রীয় আনুকূল্যে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটশিল্পের অগ্রযাত্রার ইতিহাস। বাংলাদেশে মেশিনপত্র একবারও নবায়ন ও আধুনিকায়ন করা হয়নি। ভারতে নবায়নের জন্য রাষ্ট্রীয় ভর্তুকি দেয়া হয়েছে এবং হচ্ছে। বাংলাদেশে ২০১০ সালে প্রণয়ন করা হয়েছিলো ম্যান্ডেটরি প্যাকেজিং এ্যাক্ট। এতে পলিথিন ও প্লাস্টিকের ব্যবহার কমিয়ে পাটের ব্যবহার বাড়ানোর সুনির্দিষ্ট দিক নির্দেশনা ছিলো । সরকার সেই এ্যাক্ট বাস্তবায়নে কখনোই মনোযোগী হয়নি। আমাদের দেশে পাটকলগুলোর বহু বছরের পুরোনো ব্যাংক ঋণ সুদ-আসলে বেড়েছে। ঋণ খেলাপিদের নানা সুবিধা দেয়া হলেও পাটশিল্পে কোন ছাড় দেয়া হয়নি। ভারতে নতুন করে ব্যাংক ঋণ দেয়া হয়েছে, সুদ মওকুফ করা হয়েছে। ভারতে খাদ্যশস্য ও চিনির বস্তাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে পাটের বস্তা ব্যবহারে বাধ্যবাধকতা আরোপ করে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশ করার জন্য বিভিন্ন ব্যয়বহুল অফিস খোলা হলেও কোন কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ভারত আন্তর্জাতিক বাজারে ক্রমান্বয়ে আধিপত্য বিস্তার করেছে। আধুনিকায়ন না করায় উৎপাদনশীলতা কমেছে। ভারতে আধুনিকায়নের মাধ্যমে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশ রাষ্ট্র আশির দশক থেকে পাটশিল্পের প্রতি বৈরি দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করছে। অন্যদিকে ভারত রাষ্ট্র পাটশিল্পের প্রতি বিশেষ মনোযোগ দিয়েছে।বিশ^ব্যাংকগোষ্ঠীর উন্নয়ন কর্মসূচি আমাদের দেশিয় শিল্পের প্রতি সব সময় বৈরি আচরণ করেছে। ভারতের ক্ষেত্রে তাদের উন্নয়ন কর্মসূচি অনেক সময় শিল্প সহযোগী থেকেছে।
বক্তারা বলেন, আমাদের অভিমত হচ্ছে–প্রথমত দরকার ৭৭টি পাটকল পরিচালনা করতে গঠিত বিজেএমসি-র বর্তমান কাঠামোকে পরিবর্তন করে ২৬ টি পাটকলকে পরিচালনার মতো দক্ষ ব্যবস্থাপনা কাঠামো তৈরি করা। দ্বিতীয়ত প্রয়োজন দুর্নীতি টিকিয়ে রাখার জন্য যে অশুভ চক্র ক্রিয়াশীল থেকে বছরের পর বছর লোকসানের পরিস্থিতি তৈরি করেছে তাকে সমূলে নির্মূল করা। সবক্ষেত্র জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতার পথ বেছে নেয়া। তৃতীয়ত এবং সর্বোপরি বিজেএমসিকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে হলে কারখানাগুলির পুরাতন যন্ত্রপাতি পরিবর্তন করে আধুনিক যন্ত্র স্থাপনের মাধ্যমে উৎপাদন হার বৃদ্ধি করে মাথাপিছু ব্যয় কমানোর কৌশল গ্রহণ করা দরকার। শ্রমিকদের কাজের সুযোগ অব্যাহত রেখে বিদ্যমান চীনা প্রযুক্তির মাধ্যমেশত বছরের পুরোনো স্কটল্যান্ড টেকনোলজি পর্যায়ক্রমে ধাপে ধাপে আমূল পরিবর্তনের মধ্যদিয়ে আধুনিকায়ন বাস্তবায়নের কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করাই হবে যুক্তিসংগত।
বক্তারা বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত পাটশিল্প রক্ষার প্রশ্ন শুধু পাট শ্রমিকদের বেঁচে থাকার প্রশ্ন নয়, এটা জাতীয় স্বার্থের প্রশ্ন, মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনা ও লক্ষ্যের সাথে এটা যুক্ত। মহান মুক্তিযুদ্ধের সুফল রাষ্ট্রায়ত্ত পাট শিল্পকে পুনরুজ্জীবিত করার সংগ্রাম গড়ে তোলা আমাদের একটা জাতীয় এজেন্ডা ও দায়িত্ব।‘বাংলাদেশের পাট ও পাটশিল্পের অমিত সম্ভাবনা আছে। এই সম্ভাবনা বাস্তবায়নের সঙ্গে সম্পর্ক আছে বাংলাদেশের শিল্পায়নের দৃঢ়ভিত্তি নির্মাণের, বিশাল কর্মসংস্থান সৃষ্টির, পরিবেশ অনুকূল কর্মতৎপরতায় সুস্থ জীবন লাভ এবং আন্তর্জাতিক অর্থনীতিতে দৃঢ় অংশগ্রহণের। একারণে বিপ্লবী গণতান্ত্রিক ধারার শ্রমিক আন্দোলনের পাশাপাশি পাট শিল্প রক্ষা ও বিকাশের জন্য গড়ে তুলতে হবে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনায় জাতীয় জাগরণ ও প্রতিরোধ। বাম ও গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল, শক্তি, বিশিষ্ট নাগরিকবৃন্দ, ছাত্র-যুব, বিশেষ করে শ্রমজীবী-মেহনতি মানুষকে বৃহত্তর একটি মঞ্চ তৈরি করে ঐতিহাসিক ও জাতীয় দায়িত্ব পালনে আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সাহসের এগিয়ে আসতে হবে।
খুলনা গেজেট/কেডি