দুর্নীতিবাজদের হাত ধরে বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ-সম্পদ ফেরাতে সরকারের উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বিশেষ টাস্কফোর্সের সভা বসছে আজ। দুপুরে অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে এ সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, কেন্দ্রীয় ব্যাংক, দুদক, সিআইডি, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), বিএফআইইউ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ মোট ১৪টি সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এমন এক সময় টাস্কফোর্সের সভা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে যখন দেশে দুর্নীতিবিরোধী বিশেষ অভিযান চলছে। ইতোমধ্যে পুলিশের সাবেক আইজি বেনজীর আহমেদসহ বেশ কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের সুনির্দিষ্ট তথ্য বিভিন্ন গণমাধ্যমে উঠে এসেছে। এছাড়া দুদকের অনুসন্ধানেও তাদের নামে-বেনামে অঢেল সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের যুগ্ম পরিচালক খন্দকার আসিফ রাব্বানী স্বাক্ষরিত পত্রে বলা হয়, বিদেশে পাচারকৃত সম্পদ বাংলাদেশে ফেরত আনার বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের ১৫ জানুয়ারি, ২০২৩-এর প্রজ্ঞাপনে টাস্কফোর্স পুনর্গঠন করা হয়। টাস্কফোর্সের প্রধান হিসাবে রয়েছেন দেশের প্রধান আইন কর্মকর্তা বা অ্যাটর্নি জেনারেল। ৪ জুলাই দুপুর ২টায় অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের কনফারেন্স রুমে ১১তম সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সভায় উপস্থাপনের জন্য দুদক ও সিআইডিসহ অর্থ পাচার নিয়ে কাজ করে এমন সব সংস্থার কাছ থেকে হালনাগাদ তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন দেশের বাংলাদেশ মিশনগুলোর কাছেও সন্দেহভাজনদের নাম ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে অর্থ পাচারকারীদের সম্পর্কে বেশকিছু তথ্য হাতে পেয়েছে টাস্কফোর্স। তবে পাচারকৃত অর্থ-সম্পদ ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। এটি একটি জটিল এবং দীর্ঘ প্রক্রিয়া।
সংশ্লিষ্টরা জানান, পাচারকারী এবং পাচারকৃত অর্থ শনাক্ত করা গেলেও বিদেশ থেকে তা ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে আইনগত জটিলতা রয়েছে। এ কারণে বিশ্বের কয়েকটি দেশে পাচারকৃত অর্থ শনাক্ত করা গেলেও শিগগিরই তা ফেরানো যাচ্ছে না। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দেশের সঙ্গে পারস্পরিক সমঝোতা স্মারক বা আইনগত সহায়তা চুক্তি প্রয়োজন। তা না হলে বিদেশ থেকে অর্থ বা সম্পদ ফেরানো কঠিন।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচার হয়ে থাকতে পারে এমন সম্ভাব্য গন্তব্য ধরে বিশ্বের ১০টি দেশের সঙ্গে পারস্পরিক আইনগত সহায়তা চুক্তি স্বাক্ষরের চেষ্টা করছে বাংলাদেশ। এগুলো হলো-কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র্র, যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সুইজারল্যান্ড, থাইল্যান্ড, হংকং ও চীন। এর মধ্যে কানাডা, মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও থাইল্যান্ডে বাংলাদেশিদের অবৈধ অর্থ-সম্পদের তথ্য বিভিন্ন গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রকাশিত হয়েছে।
জানা গেছে, চুক্তি স্বাক্ষরের আগে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর কর্তৃপক্ষের কাছে চুক্তির খসড়া পাঠাতে হয়। ইতোমধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে কয়েকটি দেশের কাছে খসড়া পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন থাইল্যান্ড সফরের সময় সে দেশের সঙ্গে যাতে এমএলএ স্বাক্ষরিত হয় সেজন্য কাজ করছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এছাড়া চুক্তি ছাড়াই যাতে পাচারকৃত সম্পদের তথ্য পাওয়া যায় সেজন্য একাধিক আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে সরকার।
খুলনা গেজেট/এইচ