পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতে প্রস্তাবিত বাজেটে যে সুযোগ রাখা হয়েছে, তার কঠোর সমালোচনা করেছেন সরকারি ও বিরোধী দলের একাধিক সংসদ সদস্য। তাঁরা বলেছেন, এভাবে দায়মুক্তি দিলে মানুষ অবৈধভাবে টাকা উপার্জনে উৎসাহী হবে।
গতকাল রোববার সংসদের বৈঠকে ২০২১-২২ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে তাঁরা এসব কথা বলেন। এর আগে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হয়।
সরকারি দলের সদস্য প্রাণগোপাল দত্ত অর্থ ফিরিয়ে আনার প্রস্তাব পুনর্বিবেচনা করার পরামর্শ দিয়ে বলেন, সমাজে এটির ইতিবাচক প্রভাব নেই। যাঁরা বিদেশে টাকা পাচার করেছেন, তাঁরা সৎ হলে টাকা দেশেই রাখতেন। চোর ধর্মের কথা শোনে না, এটি মাথায় রাখা উচিত।
জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান বিদেশে টাকা পাচারকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান। তিনি বলেন, অন্যথায় অর্থ পাচার প্রতিরোধ আইনের কোনো প্রয়োজন ছিল না। এই দেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে গেছে। এটা রোধ করতে ব্যর্থ হয়েছেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, যাঁরা অর্থ আত্মসাৎ করে বিদেশে পাচার করে দিলেন, তাঁদের দায়মুক্তি উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। এটি সমর্থনযোগ্য নয়।
ফজলুর রহমান বলেন, মানুষ সন্দেহ করছে, একটা বিশাল গোষ্ঠী অবৈধভাবে টাকা আয় করে বিদেশে পাচার করার জন্য বসে আছে। প্রস্তাবিত উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে তাদের সেই উদ্দেশ্য সফল হবে। তিনি বলেন, মানুষ সৎ পথে আয় করতে সংগ্রাম করছে। অন্যদিকে, লুটপাট করে যাঁরা টাকা বিদেশে পাঠিয়েছেন, তাঁরা সামান্য কিছু কর দিয়ে টাকা ফিরিয়ে আনবেন। দেখা যাবে চোরেরা হয়ে যাবেন শ্রেষ্ঠ করদাতা।
জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারি বলেন, ব্যাংক ডাকাতি করে টাকা বিদেশে নিয়ে গেলে কি ডাকাতির মামলা হবে না? দুর্নীতি করলে মামলা হবে না? যদি কারও বিরুদ্ধে মামলা চলমান থাকে, এ সময় তিনি যদি টাকা ফিরিয়ে আনেন তাহলে কি মামলা চলবে না? তিনি বলেন, এমন একটি বিধান রাখা উচিত, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে এই সুযোগটি নেওয়া যাবে না। ভারতেও এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সফলতা আসেনি।
শামীম বলেন, চলতি অর্থবছর সরকার অনুমোদিত বাজেটের চেয়ে ১১ হাজার কোটি টাকা বেশি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে। এ ক্ষেত্রে সংসদের আগাম অনুমতি নেওয়া হয়নি। সব টাকা যদি সরকারই ঋণ নিয়ে নেয়, তাহলে জনগণ কী নেবে? এ কারণেই অনেক উন্নয়ন হলেও মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বাড়েনি।
একটি বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে একডজন শীর্ষ দুর্নীতিবাজকে সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়ার দাবি জানান গণফোরামের সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান। তিনি বলেন, এটি করা হলে এক দিনে দুর্নীতি ৫০ শতাংশ কমে যাবে। তিনি বলেন, দুর্নীতিবাজেরা সিন্ডিকেট করে ভোজ্যতেলের দাম বাড়িয়ে হাজার কোটি টাকা ডাকাতি করেছে। মানুষের পকেট কেটেছে। ক্লার্ক, ড্রাইভারের মতো ছোট ছোট দুর্নীতিবাজের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু যারা বড় পদে, হাজার কোটি টাকা দুর্নীতি করে, তাদের লোম স্পর্শ করার সাহস নেই।
সরকারি দলের সদস্য শহীদুজ্জামান সরকার, আবুল হাসান মাহমুদ আলী ও মহীউদ্দীন খান আলমগীরও আলোচনায় অংশ নেন।