জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেছেন, পাকিস্তান বর্তমানে এক ‘ডিফাইনিং মোমেন্টে’। আমাদের সামনে এখন দুটি পথ আছে।
‘তার আগে আমি আপনাদের বলতে চাই কেন আমার মতো একজন মানুষ রাজনীতিতে এসেছে। আল্লাহ আমাকে সব দিয়েছেন। খ্যাতি দিয়েছেন। অর্থ দিয়েছেন। তাই আমি নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করি। একটি স্বাধীন দেশে জন্মগ্রহণকারী প্রথম প্রজন্মের মানুষ আমি।’
ইমরান বলেন, আমার থেকে পাকিস্তানের বয়স ৫ বছর বেশি। দাসত্বের সময়কালে জন্মেছিলেন আমার পিতামাতা। তারা আমাকে বুঝতে শিখিয়েছিলেন যে, একটি স্বাধীন দেশে জন্মাতে পেরেছি, এ জন্য আমি নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করি। আমি রাজনীতিতে এসেছি। কারণ, আমি একটি সিদ্ধান্তে এসেছি যে- আল্লামা ইকবাল যেমন স্বপ্ন দেখেছিলেন, কায়েদে আযম ভগ্ন স্বাস্থ্য নিয়ে যে দেশের জন্য লড়াই করেছিলেন, সেই পাকিস্তান কখনো হবে না।
সাবেক এই ক্রিকেটারের মতে, পাকিস্তান রাষ্ট্রের মূল উদ্দেশ্যই ছিল একটি ইসলামিক কল্যাণময় রাষ্ট্র হবে, যেমনটা দেখা যায় মদিনায়। যখন আমি রাজনীতি শুরু করি আমার ম্যানিফেস্টোতে তিনটি জিনিস যুক্ত করেছিলাম। তা হলো ন্যায়বিচার। যার অর্থ হলো শক্তিধর এবং দুর্বল সবার জন্য একই আইন কার্যকর থাকবে। থাকবে মানবতা। কারণ, একটি ইসলামিক রাষ্ট্রে থাকবে দয়া, সহানুভূতি। তৃতীয়ত থাকবে খুদ্দারি। কারণ, মুসলিম জাতি কোনো দাস হতে পারে না। আল্লাহ যদি আমার প্রতি সন্তুষ্ট না থাকতেন তাহলে আমি রাজনীতিতে প্রবেশ করতে পারতাম না। আমি ১৪ বছর চেষ্টা করেছি। লোকজন বার বার আমার কাছে জানতে চেয়েছেন কেন রাজনীতিতে এলাম। একটি আদর্শের কারণে রাজনীতিতে এসেছি।
পাক প্রধানমন্ত্রী বলেন, যখনই রাজনীতিতে যোগ দিয়েছি, তখন থেকে সব সময়ই বলেছি, আমি কারো কাছে আমার মাথা নত করবো না। জাতিকেও মাথা নত করতে দেবো না। এর অর্থ আমার জাতিকে কারো দাস হতে দেবো না। এই অবস্থান থেকে কখনো আমি সরে যাইনি।
ইমরান খান আরও বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমার পররাষ্ট্রনীতি হবে স্বাধীন। এটা হবে পাকিস্তানের জন্য। এর অর্থ এই নয় যে, আমরা শত্রুতা চাই। যখন আমি সরকার পেয়েছি বলেছি, আমাদের পক্ষে যাবে না এমন কোনো পররাষ্ট্রনীতি আমাদের হবে না।
তিনি এরপরেই ‘থ্রেট লেটার’বা হুমকি দেওয়া চিঠির প্রসঙ্গে কথা বলেন। ইমরান বলেন, আমি আজ আপনাদের সামনে। এর কারণ হলো ৭ ও ৮ মার্চ যুক্তরাষ্ট্র, নট ইউএস থেকে আমরা একটি বার্তা পেয়েছি। একটি মুক্ত দেশের একজন প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে এই বার্তাকে শুধু প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে দেখা ঠিক হবে না। একই সঙ্গে এই বার্তা এই দেশটিরও বিরুদ্ধে।
এ ভাষণে তার বিরুদ্ধে আনীত অনাস্থা ভোট নিয়ে কথা বলেছেন। রোববার তার বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোট হবে। ইমরান খান দাবি করেছেন বিদেশীদের সহায়তা নিয়ে তাকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে বিরোধীরা।
তবে ইমরান খান জানিয়েছেন, তিনি শেষ পর্যন্ত লড়াই করে যাবেন। কারণ তিনি সব সময় শেষ বল পর্যন্ত লড়াই করেছেন।
এ ব্যাপারে ইমরান খান বলেন, রোববার ভোট হবে। এর মাধ্যমে এ দেশের ভাগ্য নির্ধারণ হবে। কেউ কেউ বলছে আমার পদত্যাগ করা উচিত। আমি সব সময় শেষ বল পর্যন্ত লড়াই করি। আমি পুরো দেশকে বলব, ওইদিন (অনাস্থা ভোটের দিন) দেখবেন কারা তাদের বিবেককে বিক্রি করে দিয়েছে।
ইমরানের ভাষ্য অনুযায়ী যারা বিদেশীদের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে দেশকে বিক্রি করে দেওয়ার চেষ্টা করছে তাদের জনগণ ক্ষমা করবে না।
এ ব্যাপারে ইমরান খান বলেন, যারা বিদেশীদের সঙ্গে দেশ বিক্রির চুক্তি নিয়েছেন, এটি আপনাদের ওপরই পড়বে। জনগণ আপনাদের ভুলবেও না ক্ষমাও করবে না। আপনাদের সবাই মনে রাখবে আপনারা দেশকে বিক্রি করে দিয়েছেন। বিদেশীদের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে আপনারা এমন একটি সরকারকে হটিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন যাদের নিজস্ব পররাষ্ট্রনীতি রয়েছে।
ইমরান খানকে সরিয়ে দিতে সবচেয়ে বেশি দৌড়-ঝাপ করছেন মুসলিম লিগ-নওয়াজের প্রধান শাহবাজ শরীফ। তিনি পাকিস্তানের বিরোধী দলীয় নেতা। এই শাহবাজ শরীফকে রাজকীয় দাস হিসেবে অবহিত করেন ইমরান খান।
এ ব্যাপারে ইমরান খান বলেন, বিদেশীরা শাহবাজ শরীফ, ফজলুর রেহমান এবং আসিফ আলী জারদারির সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলেছে। কারণ তারা জানে তাদের সম্পত্তি ও টাকা কোথায় আছে।
ইমরান খান আরও বলেন, সবচেয়ে খারাপ যে বিষয়টি সেটি হলো যারা ষড়যন্ত্র করছে তাদের সঙ্গে বিদেশীরা সখ্যতা গড়ে তুলেছে। আসলে তারা হলো হাতের পুতুল। তারা হলো রাজকীয় দাস।