অর্থনৈতিক সংকটের পাশাপাশি বড় ধরনের কাগজ সংকটে পড়েছে পাকিস্তান। সংকট এতোটাই চরমে পৌঁছেছে যে, কাগজ সংকটের কারণে চলতি বছরের আগস্ট মাস থেকে শুরু হতে যাওয়া নতুন শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থীদের কাছে নতুন বই পৌঁছানো সম্ভব হবে না বলে সতর্ক করেছে পাকিস্তান পেপার অ্যাসোসিয়েশন।
অর্থাৎ নতুন শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থীদের নতুন বই পাওয়া কার্যত অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে গেছে। শুক্রবার (২৪ জুন) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় বার্তাসংস্থা এএনআই।
বার্তাসংস্থাটি বলছে, কাগজ সংকটের কারণ বৈশ্বিক মুদ্রাস্ফীতি হলেও পাকিস্তানে বর্তমান কাগজের সংকট দেশটির সরকারের ভুল নীতি এবং স্থানীয় কাগজ শিল্পের একচেটিয়া আধিপত্যের কারণে সৃষ্টি হয়েছে।
অল পাকিস্তান পেপার মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশন, পাকিস্তান অ্যাসোসিয়েশন অব প্রিন্টিং গ্রাফিক আর্ট ইন্ডাস্ট্রি (পিএপিজিএআই) এবং কাগজ শিল্পের সঙ্গে যুক্ত অন্যান্য সংস্থা দেশটির শীর্ষস্থানীয় অর্থনীতিবিদ ড. কায়সার বাঙ্গালীর সাথে একটি যৌথ সংবাদ সম্মেলন করেছে। ওই সংবাদ সম্মেলনে তারা সতর্ক করে বলেন, কাগজ সংকটের কারণে আগামী আগস্ট মাস থেকে শুরু হতে যাওয়া নতুন শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থীদের কাছে নতুন বই পৌঁছানো যাবে না।
পাকিস্তানের স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, দেশে কাগজের তীব্র সংকট চলছে। এছাড়া কাগজের দাম আকাশচুম্বী হয়ে এতোটাই দামি হয়ে উঠেছে দিন দিন এর দাম আরও বাড়ছে। এমনকি প্রকাশকরাও তাদের বইয়ের দাম নির্ধারণ করতে পারছেন না। আর এই কারণে সিন্ধ, পাঞ্জাব ও খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের পাঠ্যপুস্তক বোর্ড নতুন শিক্ষাবর্ষ উপলক্ষে পাঠ্যপুস্তক ছাপতে পারবে না।
এদিকে পাকিস্তানের একজন কলামিস্ট দেশের ‘অযোগ্য এবং ব্যর্থ শাসকদের’ কাছে চলমান অর্থনৈতিক সংকটের সমাধান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তার প্রশ্ন, তারা কীভাবে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান করবেন যখন ইসলামাবাদ আগের ঋণ পরিশোধের জন্য নতুন করে ঋণ নেওয়ার দুষ্ট চক্রে আটকা পড়েছে।
পাকিস্তানি ওই কলামিস্টের নাম আয়াজ আমির। তিনি পাকিস্তানের স্থানীয় সংবাদমাধ্যম দুনিয়া ডেইলিতে লেখা একটি কলামে বলেছেন, ‘আমরা আইয়ুব খান (পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট), ইয়াহিয়া খান, জুলফিকার আলী ভুট্টো এবং মোহাম্মদ জিয়া-উল-হকের শাসন দেখেছি। এসব স্বৈরশাসক এবং তাদের সরকারের মধ্যে একটি জিনিসের মিল ছিল। আর তা হলো- সমস্যা সমাধানের জন্য ঋণ নেওয়া এবং এরপর আগের ঋণ পরিশোধের জন্য আরও ঋণ নেওয়া।’
তিনি বলছেন, ঋণ নেওয়ার এই নেভার এন্ডিং (কখনও শেষ না হওয়া) চক্রটি এখনও চলছে এবং পাকিস্তান এখন এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে কেউই আর দেশটিকে আর ঋণ দিতে রাজি নয়।
তিনি তার কলাম অংশে প্রশ্ন করেছেন, ‘জিয়া-উল-হকের শাসনামলে যখন জনসংখ্যা ১১ কোটি ছিল তখন আমরা দেশের অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান করতে পারিনি। জনসংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে ২২ কোটি হলে আমাদের অযোগ্য ও ব্যর্থ শাসকরা কীভাবে অর্থনীতির উন্নতি ঘটাবেন?’
উল্লেখ্য, কয়েক মাস আগে একই সংকট দেখা গিয়েছিল শ্রীলঙ্কাতেও। সেখানেও কাগজের সংকটের কারণেই দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় পরীক্ষা বাতিল করে দেওয়া হয়। এমনকি ছাপানো বন্ধ হয়ে যায় সংবাদপত্রও।