গেল এশিয়া কাপে ভারতের বিপক্ষে পাকিস্তান ১০ উইকেটে বড় জয় পেয়েছিল। সেই ম্যাচ হারের প্রতিশোধের আগুনে পুড়ছিল ভারত। আজ শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে পাকিস্তানকে হারিয়ে মধুর প্রতিশোধ নিয়েছে ভারত। তবে ভারতকে ম্যাচটি সহজে জিততে দেয়নি পাক বোলাররা। শেষ ওভার পর্যন্ত টেনে নিয়ে গেছে ম্যাচ। আর যা সম্ভব হয়েছে অভিষিক্ত তরুণ পেসার নাসিম শাহ ও আরেক তরুণ পেসার শাহনেওয়াজ দাহানির কল্যাণে।
ক্ষণে ক্ষণেই পাল্টেছে ম্যাচের রঙ। তবে শেষ পর্যন্ত ভারতের কাছে পাত্তা পায়নি পাকিস্তান। নাসিম শাহ-শাদাব খানরা ভারতের ওপর চাপ তৈরি করলেও সেটা শেষ পর্যন্ত টেকেনি। রবীন্দ্র জাদেজার দারুণ ব্যাটিংয়ে শেষ পর্যন্ত ৫ উইকেটের জয়ে এশিয়া কাপ শুরু করল ভারত।
দুবাই ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে জয়ের জন্য ১৪৮ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুতেই হোঁচট খায় ভারত। অভিষেক ম্যাচেই বল হাতে দুর্দান্ত শুরু করেন নাসিম শাহ। ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই লোকেশ রাহুলকে সাজঘরে ফেরান তরুণ পেসার। নাসিমের বলে ইনসাইড এজ হয়ে বোল্ড হয়ে শূন্য রানে আউট হন রাহুল। এক বল পরই আউট হতে পারতেন বিরাট কোহলি।
নাসিমের অফ স্টাম্পের বাইরের বল ড্রাইভ করতে গিয়ে সেকেন্ড স্লিপে ক্যাচ তুলে দেন ভারতের সাবেক অধিনায়ক। তবে সেটা লুফে নিতে পারেননি ফখর জামান। শূন্য রানে জীবন পেয়ে পাকিস্তানের বোলারদের ওপর চড়াও হন কোহলি। যদিও খুব একটা স্বস্তিতে খেলতে পারছিলেন না তিনি।
রাহুলকে হারানোর পর রোহিতের সঙ্গে ৪৯ রানের জুটি গড়ে তোলেন কোহলি। স্পিনার মোহাম্মদ নওয়াজের বলে লং অফ দিয়ে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ইফতিখারের হাতে ক্যাচ দেন ১২ রান করা রোহিত। ভারতের অধিনায়ক আউট হওয়ার পর ফিরেছেন কোহলিও। নওয়াজের বলে লং অফ দিয়ে খেলতে গিয়ে ৩৫ রানে আউট হয়েছেন ডানহাতি এই ব্যাটার।
শুরুটা ভালো করলেও ইনিংস বড় করতে পারেননি সূর্যকুমার যাদব। নাসিমের ব্যাক অব লেংথ ডেলিভারিতে বোল্ড হয়ে ফেরার আগে ১৮ বলে ১৮ রান করেছেন তিনি। বিপদের মুখে ৩৫ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলে ভারতকে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ এনে দেন রবীন্দ্র জাদেজা। বাঁহাতি এই ব্যাটার ফিরলে ভারতের জয় নিশ্চিত করেন হার্দিক পান্ডিয়া এবং দীনেশ কার্তিক।
এর আগে টস হেরে ব্যাটিং করতে নেমে শুরু থেকেই অস্বস্তিতে ছিলেন মোহাম্মদ রিজওয়ান। ভুবনেশ্বর কুমার ও আর্শদীপের বিপক্ষে ঠিকঠাক খেলতে পারছিলেন না এই উইকেটকিপার ব্যাটার। তবে খানিকটা আত্মীবিশ্বাসী ছিলেন বাবর আজম। যদিও পাকিস্তানের অধিনায়ককে ইনিংস বড় করতে দেননি ভুবনেশ্বর। ডানহাতি এই পেসারের শর্ট ডেলিভারিতে টপ এজ হয়ে শর্ট ফাইন লেগে থাকা আর্শদীপের হাতে ক্যাচ দেন বাবর।
তাতে দুই চারে মাত্র ১০ রানে ফিরে যেতে হয় পাকিস্তানের অধিনায়ককে। এরপর অবশ্য ফখর জামান ও রিজওয়ান মিলে প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করেন। তবে সেটা বেশিক্ষণ দীর্ঘস্থায়ী করতে পারেননি। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে আভেষ খানের টানা দুই বলে একটি ছক্কা এবং চার মেরে রানের গতি বাড়ান রিজওয়ান। তবে ইনিংসের পঞ্চম বলে উইকেট হারায় পাকিস্তান।
আভেষ খানের এক্সট্রা বাউন্সারে উইকেটের পেছনে দীনেশ কার্তিকের গ্লাভসে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ফখর। যদিও ভারতের ফিল্ডাররা আবেদন করেননি। এমনকি আম্পায়ার মাসুদুর রহমান মুকুলও আউট দেননি। তবে সততার দৃষ্টান্ত দেখিয়ে নিজে থেকেই মাঠ ছাড়েন ১০ রান করা বাঁহাতি এই ব্যাটার।
বাবর-ফখরের দ্রুত বিদায়ের পর ইফতিখার আহমেদকে সঙ্গে নিয়ে দলের হাল ধরেন রিজওয়ান। এই উইকেটকিপার ব্যাটার এক প্রান্ত আগলে রেখে ব্যাটিং করলেও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি ইফতিখার। ইনিংসের ১৩তম ওভারে হার্দিকের করা শর্ট বলে পুল করতে গিয়ে কার্তিকের গ্লাভসে ধরা পড়েন তিনি। সাজঘরে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে এসেছে ২২ বলে ২৮ রান। হাফ সেঞ্চুরির আগে ফেরেন রিজওয়ান।
হার্দিকের বাউন্সারে থার্ডম্যান দিয়ে খেলতে গিয়ে আভেষের হাতে ক্যাচ দিয়ে ৪৩ রানে আউট হন এই উইকেটকিপার ব্যাটার। একই ওভারের তৃতীয় বলে রবীন্দ্র জাদেজাকে ক্যাচ দিয়ে মাত্র ২ রানে আউট হয়েছেন খুশদিল শাহ। ৯ রানের বেশি করতে পারেননি আসিফ আলী। শেষ দিকে দুই ছক্কায় ৬ বলে ১৬ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন শাহনেওয়াজ দাহানি। তাতে ১৪৭ রানের পুঁজি পায় পাকিস্তান। ভারতের হয়ে ভুবনেশ্বর চারটি এবং হার্দিক তিনটি উইকেট নিয়েছেন।