শিশু গাছে (রোড শিরিস) সংক্রমিত ছত্রাক এখন উপার্জনের মাধ্যম। খুলনার পাইকগাছাসহ আশপাশের এলাকার নারী-পুরুষ-শিশু-কিশোররা প্রতিদিন কাক ডাকা ভোরে উঠেই বেরিয়ে পড়ছে শিশু গাছের কথিত ভাইরাস পোকার সন্ধানে। স্থানীয় ব্যাবসায়ীদের কাছে তা প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত। এরপর পিকআপ ভরে চলে যাচ্ছে এর পাইকারী মোকামে। তবে কারা কিনছে আর কেনইবা কিনছে আর তারা বিকৃত আকৃতির এই পোকা কিনে করছেটাইবা কি? এর চাহিদার ভীঁড়ে রীতিমত চাপা পড়ে যাচ্ছে এরকম সব নানান প্রশ্ন।
শিশু গাছের ভাইরাস পোকা বিক্রি হচ্ছে। চরম চাহিদার বিপরীতে আবাল, বৃদ্ধ, বণিতা সকলের চাই এই পোকা। আর তাই দাঁড়িয়ে থাকা জীবিত গাছের সংক্রমিত ডাল বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। এরপর ব্যবসার সাথে সংশ্লিষ্টরা শ্রমিক দিয়ে যত্নসহহকারে গাছ থেকে আহরণ করছে পোকা ভর্তি ডাল। এরপর বাসা-বাড়ি, আড়ৎ কিংবা নির্দিষ্ট স্থানে নিয়ে অন্য শ্রমিকরা ডাল থেকে ছাড়িয়ে নিচ্ছে পোকা ও তার উচ্ছিষ্ট। যা মোকামে পাঠানোর জন্য উপযোগী করেই বস্তাভর্তি করা হচ্ছে।
ভোর থেকে জনপদের বেকার যুবকদের পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণি-পেশা ও বয়সী নারী-পুরুষরা নাওয়া-খাওয়া বাদ দিয়ে বেরিয়ে পড়ছে পোকার সন্ধানে। ইতোমধ্যে এই কারবারে বহু মানুষের কর্মসংস্থান হলেও ঠিক কতদিন চলবে এই ব্যবসা তা জানা নেই কারো।
ব্যবসার সাথে জড়িতদের অনেকেই জানান, অঞ্চল থেকে কপিলমুনির নাছিরপুর, রেজাকপুর, কাজিমুছাসহ কয়েকটি স্পট থেকে এজেন্ট হিসেবে পোকা কিনে তাদের তত্ত্বাবধায়নে নির্দিষ্ট গন্তব্যে চালান পাঠানো হচ্ছে। প্রথমে পোকার দাম কেজি প্রতি ৫শ’ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হলেও ক্রমশ আশাতীত যোগান পাওয়ায় দাম কমেছে।
এব্যাপারে উপজেলার কপিলমুনি এলাকার আলমগীর ও মালেক নামের দুই ব্যক্তি জানান, তাদের কারোরই মূল পেশা এটি নয়। প্রায় এক মাস যাবত এ ব্যবসায় জড়িয়েছেন তারা। মূলত বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ভাইরাস সংক্রমিত রোড শিরিস গাছের ডাল কিনেন তারা। ৫০০ থেকে শুরু করে ২৫০০ টাকা দরেও ভাইরাস পোকার সংক্রমিত প্রতিটি গাছের ডাল কিনেছেন তারা। এর পর ওই ডাল ভেঙে বাড়িতে নিয়ে আশপাশের মানুষদের দিয়ে ডালে লেগে থাকা আঠার মত বস্তু কেজি প্রতি ৪০-৫০ টাকা দিয়ে ছাড়িয়ে নিয়ে সেগুলো বস্তা ভর্তি করে প্রথমে ২৫০-৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছেন তারা। তবে বর্তমানে ক্রমশ আশাতীত যোগান পাওয়ায় এর দাম বহুলাংশে কমেছে। এর ফলে তাদের প্রায় সাড়ে ১১ হাজার টাকা লোকসান হয়েছে বলেও দাবি করেন তারা।
এত ভাইরাস পোকা কোন মোকামে পাঠায় ব্যাবসায়ীরা, বা এগুলো কি কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে তারা বলেন, পিকআপ-ট্রাক ভর্তি করে এগুলো বগুড়া,ফেনি ও কুষ্টিয়াতে পাঠানো হয় বলে ব্যাবসায়ীদের কাছে শুনেছেন তারা। তবে আসলে ঠিক কোথায় যায় আর কি কাজে এগুলো ব্যবহৃত হচ্ছে তা তাদের জানা নেই। তবে লোক মুখে এগুলো দিয়ে এক ধরণের আঠা ও আসবাবপত্রের রং তৈরি হচ্ছে বলে লোকমুখে শুনেছেন বলেও দাবি করেন তারা।
এ ব্যাপারে উপজেলার কপিলমুনির ইউপি চেয়ারম্যান কওছার আলী জোয়ার্দ্দার বলেন, কয়েকদিন যাবত বিভিন্ন এলাকায় রোড শিরিস গাছের ভাইরাস সংক্রমিত ডাল কিনতে দেখছেন। ভোরে উঠেই বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ বেরিয়ে পড়ছে শিশু গাছের কথিত ভাইরাস পোকার সন্ধানে। তবে শুনেছেন এ ভাইরাস সংক্রমিত হলে রোড শিরিস গাছের ডাল ও ধীরে ধীরে সংক্রমিত গাছটিই মারা যাচ্ছে। আর সকলেই ঝুঁকি নিয়ে ওই সকল গাছে উঠেই সে মরা ডাল গুলো সংগ্রহ করছে। তাই এ কারবারে বহু মানুষের কর্মসংস্থান হলেও অনিশ্চিত ব্যাবসায় নির্ভরশীল না হতে সকলকে আহ্বান জানান তিনি।