ভারত থেকে দেশের বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ বাংলাদেশে রফতানি হলেও দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোল দিয়ে শনিবার কোন পেঁয়াজ আমদানি হয়নি। ভারতের পেট্রাপোল বন্দর এলাকায় আটকে থাকা পেঁয়াজ বোঝাই ট্রাকের লোড এক্সপোর্ট (লিইও) করা না থাকায় বেনাপোল বন্দরে কোন ট্রাক আসতে পারেনি।
বেনাপোল সিএন্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান জানান, নিষেধাজ্ঞায় আটকে পড়া পেঁয়াজের একটি অংশ ভারত সরকার ছেড়ে দেওয়ার সম্মতি দিলেও শনিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বেনাপোলে কোন ট্রাক আসছে না এবং কবে নাগাদ আসবে তা নিশ্চিত করে বলতে পারেনি ওপারের রফতানিকার সংশ্লিষ্টরা। তিনি বলেন, শুক্রবার ভারতের সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ইনডিরেক্ট ট্যাক্সেস এন্ড কাস্টম কর্তৃপক্ষ (সিবিআইসি) যে নির্দেশনা দিয়েছিল শনিবার সকালে পেট্রাপোল কাস্টমসকে তারা আরও একটি নির্দেশনা দিয়েছেন। ওই নির্দেশনায় বলা হয়েছে, গত সোমবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বন্দর এলাকার যে সকল পেঁয়াজের ট্রাকের লোড এক্সপোর্ট (লিইও) করা ছিল শুধুমাত্র সেই ট্রাকগুলো বাংলাদেশে যাবে। এ সময় পেট্রাপোল বন্দর অভ্যন্তরে পাঁচটি পেঁয়াজের ট্রাক ছিল। এর মধ্যে একটি ট্রাকের লিইও করা ছিল। পেঁয়াজে পচন ধরায় বৃহস্পতিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রফতারিকারক সেই পেঁয়াজের লিইও বাতিল করে। এতে পেট্রাপোল বন্দরে লিইও করা কোন পেঁয়াজের ট্রাক না থাকায় শনিবার ভারত থেকে বেনাপোল বন্দরে কোন পেঁয়াজের ট্রাক আসেনি।
ভারতের পেট্রাপোল ক্লিয়ারিং এজেন্ট স্টাফ ওয়েলফেয়ার এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী বলেন, পেঁয়াজ রফতানি বন্ধে ভারতের আদেশ প্রত্যাহার করতে আহ্বান জানানোর পর পূর্বের ঋণপত্রের (এলসি) পেঁয়াজ বাংলাদেশে রফতানির নির্দেশনা দিয়ে শুক্রবার রাতে বন্দর ও কাস্টমসহ বিভিন্ন দফতরে পত্র দিয়েছেন সিবিআইসি। সেই পত্রে বলা হয়েছে, ১৪ সেপ্টেম্বর ভারতের সব শুল্ক কাস্টমসে নির্দেশনা দেওয়া হয় বাংলাদেশে ৭৫০ মার্কিন ডলারের নিচে পেঁয়াজ রফতানি করা যাবে না। বাংলাদেশের আমদানিকারকদের দাবি ও সরকারি তৎপরতায় ১৫ সেপ্টেম্বর ভারতের রফতানিকারকরা পেঁয়াজ রফতানির আবেদন জানান। তারই পেক্ষিতে ১৮ সেপ্টেম্বর পেঁয়াজ রপ্তানির অনুমতি দেয় ভারতের কেন্দ্রীয় শুল্ক অধিদপ্তর। তবে শনিবার সকালে ১৪ সেপ্টেম্বর বন্দর এলাকার যে সকল পেঁয়াজের ট্রাকের লোড এক্সপোর্ট (লিইও) করা ছিল শুধুমাত্র সেই ট্রাকগুলো বাংলাদেশে যাবে এমন নির্দেশনা দেওয়ার পর এই জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে নতুন করে লিইও করার জন্য প্রস্তুুতি নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। তবে নতুনভাবে লিইও করার পর সেটি কার্যকর হবে কিনা সেটা নিশ্চিত করতে পারেনি কার্তিক চক্রবর্তী ।
বেনাপোল চেকপোস্ট কাষ্টমসের কার্গো শাখার রাজস্ব কর্মকর্তা আকসির মোল্লা জানান, নিয়মানুযায়ী ভারত থেকে কোন পণ্যবাহী ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশের সময় কাষ্টমস থেকে গেট পাশ নিতে হয়। সকাল থেকে ভারতীয় সিএন্ডএফ এজেন্টের পক্ষ থেকে কোন গেট পাশ গ্রহন না করায় শনিবারও পেঁয়াজের কোন চালান আসেনি বেনাপোল বন্দরে। কবে আসবে তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।
এদিকে টানা পাঁচদিন বন্ধ থাকার পর অবশেষে সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে শনিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) দুপুর থেকে পেঁয়াজ আমদানী শুরু করেছে। এর আগে গত ১৪ সেপ্টেম্বর সোমবার থেকে ভারতীয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ফরেন ট্রেড এর এক চিঠিতে পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই পেঁয়াজ রপ্তানী বন্ধ করে দেয়া হয়। ১৮ সেপ্টেম্বর ফরেন ট্রেড এর অপর এক চিঠিতে শর্ত সাপেক্ষে শনিবার থেকে পেঁয়াজ রপ্তানি হবে বলে ভারতীয় সিএন্ডএফ সূত্রে ভোমরা বন্দর ব্যবসায়ীদেরকে জানানো হয়।
এদিকে,ভারতের ঘোজাডাঙ্গা বন্দরে আটকে থাকা ২৫৫ ট্রাকের মধ্যে কাগজ পত্র প্রস্তুত রয়েছে এমন ৩২টি ট্রাক ভোমরা বন্দরে প্রবেশ করে বলে জানিয়েছেন ভোমরা সিএন্ডএফ এজন্ট এ্যাসোসিয়েশনের বন্দর বিষয়ক সম্পাদক আমির হামজা।
ভোমরা সিএন্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান নাসিম জানান, পূর্বের এলসি করা ২৫৫ টি পেয়াজ ভর্তি ট্রাক ভারতের ঘোজাডাঙ্গা বন্দরে আটকে রয়েছে। এর মধ্যে কাগজ পত্র প্রস্তুত রয়েছে এমন মোট ৩২টি ট্রাক ভোমরা বন্দরে প্রবশ করেছে। প্রতি ট্রাকে ২২ থেকে ২৫ টন পেয়াজ আমদানি হবে বলে জানান এই সিএন্ডএফ নেতা। বাকী ট্রাক গুলো পর্যাক্রমে প্রবেশকরবে। তবে, ভোমরা ও হিলিসহ তিনটি বন্দর দিয়ে মোট ২৫ হাজার মেট্রিকটন পেঁয়াজ বাংলাদেশে রপ্তানীর ঘোষণা দিয়েছে ভারত। সেই হিসেবে ৮ হাজার মেট্রিকটন পেঁয়াজ ভোমরা বন্দর দিয়ে আসার কথা। এই ঘোষণার পর শনিবার দুপুর ১টা থেকে পেঁয়াজ বাহি ভারতীয় ট্রাক ভোমরা বন্দরে প্রবেশ করতে শুরু করে।
এদিকে, পেঁয়াজ বাহি ট্রাক গুলো ৫দিন আটকে থাকার কারনে অনেক পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়িরা। ভোমরা স্থল বন্দরের রাজস্ব কর্মকর্তা মহসিন হোসেন জানান, শনিবার দুপুর ১টা থেকে পেঁয়াজ আসতে শুরু করেছে। কতটা পেঁয়াজ আসবে তা ভারতের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করবে বলে জানান তিনি।
খুলনা গেজেট/এনএম