পশ্চিমবঙ্গের বিশিষ্ট গল্পকার-কবি এস এম নিজামুদ্দীন (৭৯) প্রয়াত হলেন। বুধবার মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুরের বরজে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে নিজ বাসভবনে সকাল সাড়ে ছয়টা নাগাদ তিনি শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করে। ওই বরজ গ্রামের কাছেই কবর-স্হানে তার দাফনকার্য হয়।
রেখে গেলেন পরিবার-পরিজন, সাহিত্যানুরাগী ও গুণমুগ্ধ পাঠককে। তার এই মৃত্যুতে দুই বঙ্গের পাঠক মহলে নেমে গভীর শোকের ছায়া। এস এম নিজামুদ্দিন বেশ কিছুদিন যাবৎ অসুস্থ হলেও ভালো হয়ে যান। কিন্তু হঠাৎ তার হৃদযন্ত্র বিকল হয়ে যায়। আত্মপ্রচার বিমুখ এই গল্পকার ও কবির জীবনের রঙ বদল, আলোকবর্তিকাসহ তিনটি গল্প গ্রন্থ, ফেরারি আসামি কাব্যগ্রন্হ এবং শিকড়ের সন্ধানে গবেষণাগ্রন্হ তাকে বাংলার পাঠকসমাজের কাছে জনপ্রিয় করে তুলে।
গল্পকার-কবি এস এম নিজামুদ্দিন, মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুরের বরজের এক সাধারণ মানুষ। ১৯৪৭ সালের ১ জানুয়ারি ওই বরজ গ্রামেই তিনি জন্মগ্রহণ করেন। দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে বেড়ে ওঠা এই গল্পকার-কবি প্রান্তিক মানুষের জীবন যন্ত্রণাকে তুলে ধরেছেন তাঁর লেখনীতে। প্রায় ১০০ গল্প লিখলেও বন্যা ও জীবিকার তাড়নায় অনেক পাণ্ডুলিপি হারিয়ে গেছে।
মুর্শিদাবাদ সাহিত্য একাডেমি থেকে প্রকাশিত তাঁর দুটি গল্পগ্রন্থ-“জীবনের রংবদল” ও “আলোকবর্তিকা” (২০১১)-মোট ২৬টি গল্প নিয়ে। কিছু গল্প ও উপন্যাস অপ্রকাশিত রয়ে গেছে।
তাঁর গল্পে ধর্মীয় গোঁড়ামি, বহুবিবাহ, অতিরিক্ত সন্তান জন্ম, শরিয়তি আইনের অপব্যবহারের বিরুদ্ধে যুক্তির শানিত প্রতিবাদ। মানবিকতার মহান ঐতিহ্য ও মননবিক্রিয়ার গভীর প্রেক্ষাপট তাঁর লেখার মূল ভিত্তি। “ব্যবধান” গল্পে ধর্মীয় গোঁড়ামিকে তিনি আফিমের নেশার সঙ্গে তুলনা করেছেন, যা মানুষকে সভ্য চিন্তা থেকে বিচ্ছিন্ন করে। “আঁধার” গল্পে অভাবগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর অসহায়ত্ব, নিম্নমানের জীবনযাত্রা ও কান্নার ছবি ফুটে ওঠে। তাঁর ঝরঝরে, গতিময় গদ্যে প্রচ্ছন্ন সমাজ সংস্কারের আহ্বান।
আজ, ৯ জুলাই ২০২৫, তিনি প্রয়াত হয়েছেন। গল্পকারের সঙ্গে এই প্রতিবেদকের স্নেহের সম্পর্ক এবং সাহিত্য সম্মেলনে একসঙ্গে কাটানো মুহূর্তগুলো নিশ্চয়ই অমূল্য স্মৃতি। তাঁর আকস্মিক প্রয়াণে তাঁর পরিবারের প্রতি আমার সমবেদনা ব্যক্ত করি। তাঁর সাহিত্যকর্ম ও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের মাঝে চিরকাল জীবন্ত থাকবে। তাঁর লেখনী আলোকবর্তিকার মতো জ্বলবে।
খুলনা গেজেট/এনএম