মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে করা মামলায় অভিনেত্রী পরী মণিসহ আরও দুজনের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য গ্রহণ পিছিয়েছে। আজ মঙ্গলবার ঢাকার বিশেষ জজ-১০ আদালতের বিচারক মো. নজরুল ইসলাম এই আদেশ দেন।
পরী মণির বিরুদ্ধে মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনে দায়ের করা মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য দিন ধার্য ছিল আজ। কিন্তু পরি মণি অসুস্থ এবং মামলার বাদী র্যাব-১–এর ডিএডি মজিবুর রহমান করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকায় আদালতে হাজির হননি। তাই শুনানি শেষে বিচারক আগামী ১ মার্চ পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য দিন ধার্য করেছেন।
পরী মণির আইনজীবী নীলাঞ্জনা রিফাত সুরভী বিষয়ে নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, আজ আদালতে পরী মণির পক্ষে সময়ের আবেদন করা হয়েছে। পাশাপাশি তাঁর পক্ষে করা হাইকোর্টে অভিযোগ গঠনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা আবেদনের বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে। বিচারক সে আবেদনের আদেশ আগামী ১ মার্চ আদালতে দাখিলেরও নির্দেশ দিয়েছেন।
আইনজীবী আরও বলেন, গত ৫ ফেব্রুয়ারি পরি মণির এ মামলায় অভিযোগ গঠন করেন আদালত। সে দিন অভিযোগ গঠনের পরে বিচারক আজ মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের দিন নির্ধারণ করেছিলেন।
নথি থেকে জানা গেছে, গত বছরের ১৫ নভেম্বর ঢাকার মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশ পরী মণিসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র আমলে নেন এবং মামলাটি ঢাকার বিশেষ জজ-১০-এ বদলির নির্দেশ দেন। এর আগে গত বছরের ৪ অক্টোবর আদালতে এ মামলায় অভিযোগপত্র জমা দেন সিআইডির পরিদর্শক এবং মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কাজী মোস্তফা কামাল।
গত ৪ আগস্ট সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে পরী মণিকে তাঁর বনানীর বাসা থেকে আটক করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। পরের দিন তাঁর বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করা হয়।
এজাহারে যা বলা আছে
২০২১ সালের ৪ আগস্ট বাদীসহ র্যাব-১-এর সদস্যরা গুলশান-১ গোলচত্বরে অবস্থান করছিলেন। সে সময় বিকেল ৪টা ৫মিনিটে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারেন, বনানীর একটি বাসায় পরী মণি সহযোগী আশরাফুল ইসলাম দিপুর মাধ্যমে বিদেশি মদ সংগ্রহ করে নিজের বাসায় মজুত রেখেছেন। তখন তাঁরা বাসায় অবস্থান করছেন। পরে বাসার পঞ্চমতলায় অভিযান চালিয়ে পরী মণির বাসার শয়নকক্ষ থেকে নারী র্যাব সদস্যদের সহায়তায় তাঁকে আটক করা হয়।
আরও বলা হয়, পরী মণির দেখানো মতে শয়নকক্ষের একটি কাঠের ফ্রেমের ভেতর থেকে বিদেশি মদ জব্দ করা হয়। এ ছাড়া শয়নকক্ষ থেকে একটি সাদা জিপারে রাখা চার গ্রাম আইস বা ক্রিস্টালমেথ জব্দ করা হয়। এক ব্লট এলএসডি মাদকও জব্দ করা হয়। চিত্রনায়িকা পরী মণির বাসা থেকে বিদেশি মদসহ অন্যান্য মাদকের আনুমানিক বাজারমূল্য ২ লাখ ৭ হাজার টাকা। পরী মণি এসব মদ কবির নামের এক ব্যক্তির মাধ্যমে সংগ্রহ করে বাসায় রাখতেন।
এজাহারে আরও বলা হয়েছিল, চিত্রনায়িকা পরী মণিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায়, তিনি প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজের কাছ থেকে মদ সংগ্রহ করতেন।
অভিযোগপত্র যা বলা আছে
গত বছরের ৪ অক্টোবর চিত্রনায়িকা পরী মণিসহ তিন জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন সিআইডির পরিদর্শক এবং মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কাজী মোস্তফা কামাল। সেই অভিযোগপত্রে তদন্ত কর্মকর্তা উল্লেখ করেছিলেন, পরি মণির বাসা থেকে জব্দ করা মাদকদ্রব্যের বৈধ কোনো কাগজপত্র ছিল না। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে জানা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে পরী মণির নামে মদজাতীয় পানীয় সেবনের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ২০২০ সালের ৩০ জুন ওই লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়। পরী মণি বিভিন্ন স্থান থেকে এই মামলার দুই আসামি আশরাফুল ইসলাম ও কবির হোসেনের মাধ্যমে অবৈধ মাদকদ্রব্য সংগ্রহ করে বাসায় রেখেছিলেন। মাদকদ্রব্য রাখার বিষয়ে তিনি কোনো সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেননি। এছাড়া পরী মণি তাঁর ব্যবহৃত গাড়িটি মাদকদ্রব্য বহনের কাজে ব্যবহার করতেন।
অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, পরী মণির বাসা থেকে জব্দ করা মাদকদ্রব্যের রাসায়নিক পরীক্ষার প্রতিবেদন অনুসারে দেখা গেছে, সাতটি বোতলে রাখা তরল পদার্থের মধ্যে ‘অ্যালকোহল’ রয়েছে। এসব মদে অ্যালকোহলের মাত্রা যথাক্রমে ১৪ দশমিক ২ শতাংশ, ১২ দশমিক ৩ শতাংশ, ১২ দশমিক ৬ শতাংশ, ১১ দশমিক ৭ শতাংশ, ১২ দশমিক ১ শতাংশ, ১৫ দশমিক ২ শতাংশ এবং ১১ দশমিক ২ শতাংশ। এ ছাড়া কাগজের প্যাকেটে রাখা দানাদার পদার্থে ‘মেথামফিটামিন’ রয়েছে। আর ব্লাটার পেপারে ‘এলএসডি’ পাওয়া গেছে। অভিযোগপত্রে ১৯ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে।