খুলনা, বাংলাদেশ | ৫ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১৮ই এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

Breaking News

  সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় ট্রাক-মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ২
  চুয়াডাঙ্গার নয়মাইলে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২
  আজ কাফনের কাপড় বেঁধে গণমিছিল করবে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা

পরিবারের সংবাদ সম্মেলন: বিনা অপরাধে সমন্বয়ককে নির্যাতনের অভিযোগ

নিজস্ব প্রতি‌বেদক

ছেলে তারেকের নির্মম নির্যাতনের বর্ণনা দিতে গিয়ে বার বার চোখ মুছছিলেন বাবা আবু তালেব মিয়া। বলতে বলতে শরীরের পশম দাঁড়িয়ে যেতে দেখা যায় তার। তারেক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সমন্বয়ক জানা সত্ত্বেও তাকে মারতে দ্বিধাবোধ করেনি পুলিশসহ যৌথবাহিনীর সদস্যরা। বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) খুলনা প্রেসক্লাবে এ ঘটনায় সংবাদ সম্মেলন করেন নির্যাতিত ছাত্র তারেক। তারেক খুলনা কমার্স কলেজের ইসলামী ছাত্র শিবিরের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।

সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে জানা যায়

বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে ৪ নং ঘাট খাদ্য গুদাম হোল্ডিং শ্রমিক ইউনিয়নের ক্যাশিয়ার এবাদুল ও তার বন্ধু কালাম মোটরসাইকেল যোগে মামার মাজারের দিকে যাচ্ছিল। পথিমধ্যে নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে এবাদুলের বন্ধু কালাম মামার মাজারের সামনে নেমে গিয়ে বন্ধুকে সামনের দিকে যেতে নিষেধ করে। কিন্তু তার কথায় কর্ণপাত না করেই সামনের দিকে এগুতে থাকে এবাদুল। মামুর মাজারের সামনে গিয়েই পুলিশের প্রশ্নের সম্মুখীন হয় এবাদুল। এক পর্যায়ে পুলিশের হাতে প্রহৃত হয় এবাদুল। দু’টো দাঁত ফেলে দেয় ডিবি পুলিশ। এরই মধ্যে ফোন করে শ্রমিক নেতা এবাদুল তার সহযোগীদের মামার মাজারের সামনে জড়ো করে। শুরু হয় শ্রমিক ও পুলিশের মাঝে বাক-বিতন্ডা। এক সময়ে বাড়ি থেকে ডেকে নেওয়া হওয়া ৪ নং ঘাট খাদ্য গুদাম হেল্ডিং শ্রমিক ইউনিয়নের আহবায়ক আবু তালেব মিয়াকে। সেখানে উপস্থিত হয়ে তিনি ঘটনার মীমাংসা করে দেয়। এরপর তিনি বাড়িতে ফিরে যান। এর কিছুক্ষণ পরেই তিনি জানতে পারেন বাড়িতে পুলিশ অভিযান চালাবে। সংবাদ পেয়ে তিনি বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে যান।

ঘড়ির কাঁটা তখন রাত দুইটা ছুঁইছুঁই। সেই মুহুর্তে আবু তালেব মিয়ার খোঁজে বাড়িতে গোয়েন্দা, সদর থানা পুলিশ এবং যৌথবাহিনীর সদস্যদের পদাচারণায় আশপাশের বাড়ির মানুষের ঘুম ভেঙে যায়। রাস্তায় জড় হতে থাকে আবু তালেবের প্রতিবেশীরা। রাতে যৌথবাহিনীর সদস্যরা আবু তালেবের ঘরে প্রবেশ করে তাকে না পেয়ে নাতি হৃদয়কে টেনে হিঁচড়ে বের করে নেয়। হৃদয়কে মারতে থাকে। তার চিৎকার সহ্য করতে না পেরে মা ও নানী ঘর থেকে ছুটে বের হয়ে আসেন। তাদেরকে হৃদয়ের কাছে সেদিন রাতে যেতে দেয়নি যৌথবাহিনীর সদস্যরা। অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। চিৎকার শুনতে পেয়ে মামা তারেক ঘর থেকে বের হয়ে আসলে তাকেও ছাড় দেয়নি যৌথবাহিনীর সদস্যরা। সমন্বয়ক পরিচয় জেনেও নির্মম নির্যাতন চালানো হয় তার ওপর।

আবু তালেবের ভাষ্য

‘সেদিন রাতে পুলিশ ও শ্রমিকের মধ্যকার দ্বন্দ মিটিয়ে বাড়িতে ফিরে আসি। তাদের সাথে আমার কিংবা আমার পরিবারের কোন দ্বন্দ নেই। আমার ছেলে তারেক খুলনা আযমখান কমার্স কলেজ ছাত্র শিবিবের সভাপতির পদে দায়িত্বে পালন করছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময়ে ছেলে তারেক সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেছে। ওই দিন রাতের ঘটনা ছেলে তারেক আর নাতি হৃদয় জানেনা। রাতে বাড়িতে অভিযান চালিয়ে যৌথবাহিনীর সদস্যরা তাকে অমানুষিক নির্যাতন করে। আমার ৬০ বছরের বয়সে এরকম নির্যাতন করতে কাউকে দেখি নাই। তারেক ছাত্র সমন্বয়ক এটা জানে খুলনা থানার এসআই নান্নু মন্ডল। তারেকের পরিচয় জানার সাথে সাথে তার ওপর নির্যাতন চলে আরও বেশি। আমার সন্তান এবং নাতি কোন অপরাধী নয়। যদি তার নামে কোন দুর্নাম থাকে তাহলে আপনারা খোঁজ নেন। কোন দুর্নাম থাকলে ছেলেকে কোরবানি দিয়ে দিব।’ তাদের কেন এমন নির্দয়ভাবে মারলো প্রশাসন এর বিচার সরকার প্রধানের কাছে চেয়েছেন তিনি।

যা বললেন প্রত্যক্ষদর্শী হালিমা খাতুন

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হালিমা খাতুন ঘটনার সময়ে ৫ নং ঘাট বউ বাজারে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তিনি বলেন, ইবাদুল এবং কালাম টাকা নিয়ে তর্ক বিতর্ক করতে থাকে। ইবাদুল একটু সামনে গেলে তাকে গোয়েন্দা পুলিশ প্রশ্ন করতে থাকে। একপর্যায়ে পুলিশ ইবাদুলের কাছে মোটরসাইকেলের কাগজপত্র দেখতে চায়। কাগজ দেখাতে ব্যর্থ হলে পুলিশ ইবাদুলকে মারতে উদ্যত হয়। সে সময়ে ইবাদুল ছুটে গিয়ে আবু তালেবের বাড়িতে ছুটে আসে এবং তাকে সেখানে ডেকে নেয়। মামা (আবু তালেব) মিমাংশা করে দিয়ে বাড়িতে ফিরে আসেন। রাত দুইটার পর যৌথবাহিনী তার বাড়িতে গিয়ে খুঁজে না পেয়ে ছেলে তারেক এবং তার নাতি হৃদয়কে অমানবিকভাবে মারধর করতে থাকে। তাদের মার দেখে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি তিনি।

যা বললেন এস আই নান্নু মন্ডল

জানতে চাইলে খুলনা সদর থানার সেকেন্ড অফিসার এস আই নান্নু মন্ডল বলেন, ডিবি পুলিশের উপর হামলা হয়েছে। তারাই মামলা করেছেন এবং তারাই তদন্ত করছেন। আমি তারেক রহমানকে চিনিনা। কখনও তার সাথে কথা হয়নি। দেখলে চিনবো না। আমাকে জড়িয়ে সংবাদ সম্মেলনে যে অভিযোগ করা হয়েছে তার সাথে আমি সমৃক্ত নই।

খুলনা গেজেট/জেএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!