দীর্ঘ ১১ বছর আগে পরিত্যক্ত ঘোষনার করা জরাজীর্ন ভবনে জীবনের ঝুকি নিয়ে চলছে বাগেরহাটের কচুয়া সাব-রেজিস্ট্রার ভবনের কার্যক্রম। ভবনের বিভিন্ন অংশে বড় বড় ফাটল, ছাদ থেকে খসে পড়ছে পলেস্তারা। বেরিয়ে গেছে বিমের রড়।বর্ষার পানিতে গুরুত্বপূর্ন দলিল ও নথিপত্র নষ্ট হবার উপক্রম হয়েছে। সবচেয়ে বেশি সরকারী রাজস্ব খাতের প্রতিষ্ঠানের ভবনটি সংস্কার বা নতুন ভবন নির্মানের দাবী সংশ্লিষ্টদের।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয় ভবনটি যে কোন মুহূর্তে ধসে পড়ার আশঙ্কায় রয়েছে। ভবনে ছাদের পলেস্তার খসে ঢালাইয়ের রড বের হয়ে গেছে। কার্যালয়টির দেয়ালে বড় বড় ফাটল। ছাদের বিমেও ফাটল ধরেছে। সিলিং ফ্যানের হুক গুলো মরিচা ধরে নষ্ট। ভবনের অনেক স্থানে মেঝের ঢালাই উঠে গেছে। বিদ্যুৎ লাইনও ঝুঁকিপূর্ণ। বৃষ্টি শুরু হলে টেবিলের ওপর পলিথিন দিয়ে রক্ষা করা হয় প্রয়োজনীয় দলিল-দস্তাবেজ কাগজপত্র। এভাবেই ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের। এঅবস্থায় ঝুঁকি নিয়েই চলছে সাব-রেজিস্ট্রি কার্যালয়ের কার্যক্রম।
জানা যায়, অফিসে প্রতিদিন কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ জমি সংক্রান্ত কাজে দুই শতাধিক মানুষ যাতায়াত করেন। ইতিমধ্যে ভবনটি ২০১৩ সালে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা। এখানে দুর্ঘটনায় ক্ষতির আশঙ্কা করছেন সেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষেরা ও কর্মচারীরা। প্রতিনিয়ত ভবনের ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ছে। যে কোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দূর্ঘটনা।
রেজিষ্টার অফিসের কর্মচারী মো. আসাদুজ্জামান বলেন, বৃষ্টির পানি থেকে কার্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র রক্ষা করার জন্য ভবনের ভেতরের অংশের ছাদে ও ফাইলের ওপর পলিথিন দিয়ে রাখা হয়। ভবনের চারপাশে রয়েছে আবর্জনার স্তূপ। সংস্কারের অভাবে ভবনটি এখন ব্যবহারের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই কার্যালয়ে প্রবেশের সড়কটি ডুবে যায়। সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের ভেতরেই দলিল লেখকেরাও বসেন।
নকল নবিশ শিল্পী রানী সাহা বলেন, বৃষ্টি হলে ভবনের ছাদ চুইয়ে মেঝেতে পানি জমে যায়। মেঝেতে পানি থাকায় পা রাখার জন্য আমরা ইট ব্যবহার করি। আর মাথার ওপর পলিথিন তো থাকেই। আমরা অনেক সময় অফিসের কাগজ রক্ষা করতে গিয়ে নিজেরাই ভিজে যাই। কিছু দিন আগেই আমাদের সহকর্মী তার মাথায় পলেস্তারা খসে পড়ে মাথা ফেটে গেছে তার পর আমরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাই। আসলে আমরা যেকোনো সময় মরে যেতে পারি।
সেবা নিতে আসা কচুয়া উপজেলার খলিসাখালী ইউনিয়নের সালমা বেগম বলেন, জমি ক্রয়ের দলিল করতে রেজিস্ট্রি অফিসে আসতে হয়। ভবনের ভেতরে বেশিক্ষণ থাকলে ভয় লাগে। অনেক দিন ধরে রেজিস্ট্রি অফিসের এ অবস্থা। দেখে মনে হয় এই বুঝি ভেঙ্গে পড়ছে।
দলিল লেখক মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ভবনটির অবস্থা খুবই নাজুক। যে কোন মুহূর্তে ধসে পড়তে পারে। বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আগেই দ্রুত মেরামত করা উচিত।
কচুয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. শহিদুল ইসলাম খোকন বলেন, সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি রেকর্ড সংরক্ষণের জনস্বার্থে অফিসটি স্থানান্তর করা প্রয়োজন। বর্তমান রেজিস্ট্রি অফিস ভবনটিতে সেবা গ্রহীতা, দলিল লেখক কিংবা অফিস স্টাফদের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় দলিল রেজিস্ট্রি করতে গিয়ে বিড়ম্ভনায় পড়তে হয়। এছাড়া অফিসে কোনো শৌচাগারের ব্যবস্থা নেই। পুরাতন জরাজীর্ণ ও স্যাঁতস্যাঁতে কোর্ট ভবনের বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখা দেওয়ায় সকলকে আতংকে থাকতে হয়। সবার দাবি সরকারের কাছে দ্রুত ভবন পূর্ণ নির্মাণ করতে হব ।
কচুয়া উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রার তুপা বসু বলেন, পরিত্যক্ত এবং ঝুঁকিপূর্ণ এ ভবনটিতে আমরা ১৪ জন কর্মচারী চরম ঝুঁকি নিয়ে সরকারি দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। সাব-রেজিস্ট্রার হিসেবে যোগদানের পর থেকে জেলা রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে বিষয়টি লিখিতভাবে জানিয়েছি।
বাগেরহাট জেলা রেজিস্ট্রার মো. রুহুল কুদ্দুস বলেন, জেলার প্রায় সবগুলো উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রার অফিস ঝুকিপূর্ন অবস্থায় কার্যক্রম চলছে। তবে সাব-রেজিস্ট্রার প্রতিকারের জন্য সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের বরাবর চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশাকরি এ সমস্যা দ্রুত সমাধান হবে বলে জানান জেলার শীর্ষ এই কর্মকর্তা। বাগেরহাট জেলার সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের তথ্য মতে জেলা থেকে প্রতি বছর প্রায় শত কোটি টাকা রাজস্ব সরকারী কোষাগারে যায়।
খুলনা গেজেট/এএজে