আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে বাংলাদেশ-পাকিস্তান-নিউজিল্যান্ডের মধ্যকার বহুল আলোচিত ত্রিদেশীয় সিরিজের উদ্বোধনী ম্যাচে বাংলাদেশকে ২১ রানে হারিয়েছে পাকিস্তান।
বাবর-রিজওয়ানদের দেয়া ১৬৮ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ১৪৬ রানে থামে বাংলাদেশের ইনিংস। এতে ২১ রানের পরাজয় দিয়ে শুরু হয় বাংলাদেশের ত্রিদেশীয় সিরিজ মিশন।
বাংলাদেশকে আহামরি বড় লক্ষ্য দেয়নি পাকিস্তান। তবে ১৬৮ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে সতর্কভাবেই শুরু করে দুই ওপেনার মেহেদী হাসান মিরাজ ও সাব্বির রহমান। কিন্তু জুটিটি শেষ পর্যন্ত বেশি দূর যেতে পারেনি। পঞ্চম ওভারের মোহাম্মদ ওয়াসিমের দ্বিতীয় বলে বড় শট খেলতে গিয়ে ডিপ স্কোয়ার লেগে আসিফ আলির তালুবন্দি হন মিরাজ। ১১ বলে ১০ রান করেন তিনি।
মিরাজের আউটের পর মাঠে স্থায়ী হতে পারেননি সাব্বিরও। পরের ওভারে হারিস রউফের গতি বুঝতে না পেরে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে ফেরেন সাব্বিরও। ৭৭ স্ট্রাইকরেটে ১৮ বলে ১৪ রান করে বিদায় নেন এই ব্যাটার।
এরপর লিটন-আফিফে জয়ের স্বপ্ন দেখতে থাকে বাংলাদেশ। পাওয়ার প্লের শেষ থেকে দুজন বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে প্রতিপক্ষের বোলারদের খেলতে থাকেন। তাদের ব্যাটে চড়ে দলীয় ১০০’র দিকে হাটতে থাকে বাংলাদেশ। নিজেদের মধ্যে ৪০ বলে ৫০ রানের জুটিও গড়েন তারা।
তবে ১৩তম ওভারে বদলে যায় বাংলাদেশের জয়ের সমিকরণ। ওই ওভারে মোহাম্মদ নাওয়াজকে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে লিটন ফেরেন ৩৫ রানে। এরপরের বলে বলের লাইনের বিপক্ষে খেলতে গিয়ে এলবিডাব্লিউ হন মোসাদ্দেক হোসেন। গোল্ডেন ডাকে ফেরেন এই অলরাউন্ডার।
এরপর আর বেশিক্ষণ দাঁড়াতে পারেননি আফিফ-সোহান। ২৫ রানে দলীয় ৯৯ রানের সময় আফিফের খানিক পর ৯ বলে ৮ রান করে বিদায় নেন সোহান। এরপর ১৯তম ওভারে এসে পর পর দুই বলে দুই উইকেট তুলে নেন মোহাম্মদ ওয়াসিম।
শেষ ১০ বলে জয়ের জন্য বাংলাদেশের প্রয়োজন দাঁড়ায় ৪৮ রান। একপ্রান্তে ইয়াসির আলি লড়াই করে শুধু পরাজয়ের ব্যবধানই কমিয়েছেন। শেষ ওভারে হারিস রউফের বিপক্ষে ২০ রান নিলেও নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়ায় ১৪৬ রান।
এর আগে সিরিজের প্রথম ম্যাচে টস হেরে মোহাম্মদ রিজওয়ান ঝড়ো ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশকে ১৬৮ রানের চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্য দেঢ পাকিস্তান। নির্ধারিত ২০ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ১৬৭ রান করে বাবররা।
উদ্বোধনী জুটিতে ৫২ রান তোলার পর দলকে ব্রেকথ্রু এনে দেন মেহেদী হাসান মিরাজ। এরপর নিয়মিত বিরতিতে উইকেট পড়লেও শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থেকে যান রিজওয়ান। ৫০ বলে খেলেন ৭৮ রানের দুর্দান্ত ইনিংস। অপরাজিত থাকা পাকিস্তানের এই উইকেটরক্ষক ব্যাটার ৭টি বাউন্ডারির সঙ্গে ২টি ছক্কায় সাজার তারা ইনিংসটি।
প্রথম ইনিংসের অষ্টম ওভারে মেহেদী হাসান মিরাজকে বোলিংয়ে এনে সাফল্যের দেখা পায় টাইগাররা। নিজের প্রথম বলেই পাকিস্তান অধিনায়ক বাবর আজমকে ফিরিয়ে দেন মিরাজ। তার বলকে সুইপ করতে গিয়েছিলেন বাবর। কিন্তু বল ব্যাটের উপরের কানায় লেগে উপরে উঠে যায়। শর্ট ফাইন লেগে তার ক্যাচটি ধরেন মোস্তাফিজুর রহমান।
মোহাম্মদ রিজওয়ানকে নিয়ে ৪২ রানের জুটি গড়েন শান মাসুদ। ব্যাট হাতে ধীরে ধীরে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছিলেন তিনি। কিন্তু নাসুম আহমেদের বলে ক্যাচ তুলে দেন মাসুদ। খেলতে চেয়েছিলেন লং অনে। কিন্তু বল ব্যাটের কানায় লেগে চলে যায় অফ সাইডে। পয়েন্টে দাঁড়ানো হাসান মাহমুদের নাগালের কাছাকাছি। যদিও বলটি ধরা ছিল তার জন্য কিছুটা দুরূহ।
কিন্তু বাম পাশে ঝাঁপিয়ে পড়ে বলটা তালুবন্দী করার চেষ্টা করেন হাসান মাহমুদ। প্রথমে হাত ফসকে যায় বল। কিন্তু মাটিতে পড়ার আগে আরও একবার সেটাকে তালুবন্দী করে নেন বাংলাদেশ দলের এই ফিল্ডার। যার ফলে ৯৪ রানের মাথায় পাকিস্তানের দ্বিতীয় উইকেটের পতন ঘটানো সম্ভব হয়।
বাবর আজম আউট হওয়ার পর মোহাম্মদ রিজওয়ানের সঙ্গে জুটি বেঁধে ধীরে ধীরে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছিলেন শান মাসুদ। ২২ বলে ৩১ রান করে ফেলেন তিনি। ৪টি বাউন্ডারি এবং ১টি ছক্কার মার মারেন মাসুদ। তাকে এ সময় ফেরানোটা ছিল জরুরি। নাসুম আহমেদের বলে হাসান মাহমুদের দুর্দান্ত ক্যাচে পরিণত হয়ে সাজঘরে ফিরেন শান মাসুদ।
হায়দার আলি ব্যাট করতে নেমে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। ৬ বলে ৬ রান করেন মাত্র। তাসকিনের বলে ইয়াসির রাব্বির হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। ইফতিখার আহমেদ এসে জুটি বাঁধেন রিজওয়ানের সঙ্গে। ১৮তম ওভারের দ্বিতীয় বলে হাসান মাহমুদের বলে আফিফ হোসেন ধ্রুবর হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান ইফতিখার। ৮ বলে তিনি করেন ১৩ রান।
মারকুটে ব্যাটার আসিফ আলিকে বেশি সুযোগ দেননি তাসকিন। নিজের বলেই নিজে ক্যাচ ধরেন তিনি। আসিফ আউট হন মাত্র ৪ রান করে। মোহাম্মদ নওয়াজ অপরাজিত থাকলেন ৮ রান করে।