পবিত্র লাইলাতুল কদর বা শবে কদর আজ। বৃহস্পতিবার (২৮ এপ্রিল) সন্ধ্যার পর থেকে শুরু হবে শবে কদরের রজনী। যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্য পরিবেশে সারা দেশে পবিত্র শবে কদর পালিত হবে।
মহান আল্লাহ তায়ালা লাইলাতুল কদরের রাতকে অনন্য মর্যাদা দিয়েছেন। হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও এ রাতের ইবাদত উত্তম। এই রাতে আল্লাহর অশেষ রহমত ও নিয়ামত বর্ষিত হয়। পবিত্র এই রাতে ইবাদত-বন্দেগীর মাধ্যমে আমরা মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারি। অর্জন করতে পারি তার অসীম রহমত, নাজাত, বরকত ও মাগফেরাত। পবিত্র শবেকদরের রাতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা আল্লাহর নৈকট্য ও রহমত লাভের আশায় ইবাদত বন্দেগি করবেন।
পবিত্র রমজান মাসে লাইলাতুল কদরে পবিত্র আল কোরআন নাজিল হয়েছিল। তাই মহান আল্লাহর প্রতি শুকরিয়া আদায়ে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা মসজিদসহ বাসা-বাড়িতে এবাদত বন্দেগিতে মশগুল থাকবেন। এ রাতে মুসলমানরা নফল নামাজ আদায়, পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত, জিকির-আসকার, দোয়া, মিলাদ মাহফিল ও আখেরি মোনাজাত করবেন।
পবিত্র লাইলাতুল কদর উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ দেশবাসীসহ সমগ্র মুসলিম উম্মাহকে আন্তরিক মোবারকবাদ ও শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, পবিত্র লাইলাতুল কদর মানবজাতির জন্য অত্যন্ত বরকত ও পুণ্যময় রজনী। এ রাত হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। পবিত্র ধর্মীয় গ্রন্থ আল কুরআন লাইলাতুল কদরে নাযিল হয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন, আমি কদর রাতে কুরআন নাযিল করেছি। তাই মুসলিম উম্মাহর নিকট শবে কদরের গুরুত্ব, তাৎপর্য ও ফজিলত অত্যধিক। আমাদের ক্ষণস্থায়ী জীবনে হাজার মাসের চেয়েও বেশি ইবাদতের নেকি লাভের সুযোগ এনে দেয় এই রাত। এই মহিমান্বিত রজনী সকলের জন্য ক্ষমা, বরকত, সমৃদ্ধি ও কল্যাণ বয়ে আনুক মহান আল্লাহর দরবারে এ মোনাজাত করি।
মো. আবদুল হামিদ বলেন, ইসলাম শান্তি ও কল্যাণের ধর্ম। মানুষের ইহকালীন কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তির জন্য ইসলামের সুমহান আদর্শ মানুষের পাথেয়। এমন একটি সময়ে পবিত্র রমজান মাস পালন করা হচ্ছে, যখন বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে করোনা মহামারি, সংঘাত, যুদ্ধবিগ্রহ, অভাব-অনটনসহ বিভিন্ন কারণে হাজার হাজার মানুষ দুর্বিসহ দিন অতিবাহিত করছে।
পবিত্র শবে কদরের রজনীতে দেশের অব্যাহত অগ্রগতি ও কল্যাণ কামনা করে পরম করুণাময় আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান রাষ্ট্রপতি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণীতে বলেন, লাইলাতুল কদর এক মহিমান্বিত রজনী। সিয়াম সাধনার মাসের এই রাতে মানবজাতির পথ নির্দেশক পবিত্র আল কোরআন পৃথিবীতে নাযিল হয়। পবিত্র কোরআনের শিক্ষা আমাদের পার্থিব সুখ-শান্তির পাশাপাশি আখিরাতের মুক্তির পথ দেখায়।
তিনি বলেন, মহান আল্লাহ তায়ালা লাইলাতুল কদরের রাতকে অনন্য মর্যাদা দিয়েছেন। হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও এ রাতের ইবাদত উত্তম। এই রাতে আল্লাহর অশেষ রহমত ও নিয়ামত বর্ষিত হয়। পবিত্র এই রাতে ইবাদত-বন্দেগীর মাধ্যমে আমরা মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারি। অর্জন করতে পারি তাঁর অসীম রহমত, নাজাত, বরকত ও মাগফেরাত।
সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আসুন আমরা সকলে এই মহিমান্বিত রজনীতে মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে বিশেষভাবে ইবাদত ও দোয়া প্রার্থনা করি; যেন আল্লাহ বাংলাদেশের জনগণসহ বিশ্ববাসীকে করোনা সংক্রমণ থেকে মুক্তি দেন।
পবিত্র এই রজনীতে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ ও মুসলিম জাহানের উত্তরোত্তর উন্নতি, শান্তি, সমৃদ্ধি ও কল্যাণ কামনা করেন তিনি।
পবিত্র শবে কদর উপলক্ষে সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এ উপলক্ষে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ দেশের সব মসজিদে রাতব্যাপী ওয়াজ মাহফিল, ধর্মীয় বয়ান ও আখেরি মোনাজাতের আয়োজন করা হয়েছে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন সহকারী জনসংযোগ কর্মকর্তা শায়লা শারমীন জানান, পবিত্র শবে কদর উদযাপন উপলক্ষে বৃহস্পতিবার বাদ যোহর ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদে ‘পবিত্র শবে কদরের ফজিলত ও তাৎপর্য শীর্ষক আলোচনা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করবেন বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মুফতি মাওলানা এহসানুল হক।
জাতীয় মসজিদসহ দেশের সব মসজিদেই তারাবির নামাজের পর থেকে ওয়াজ মাহফিল, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল ও বিশেষ মোনাজাতের আয়োজন থাকবে।
পবিত্র শবে কদর উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এবং বাংলাদেশ বেতার ও বেসরকারি রেডিওগুলোতে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার করবে। এ ছাড়া সংবাদপত্রগুলোতে বিশেষ নিবন্ধ প্রকাশ করা হবে।