পদ্মা সেতুর স্প্যানে ধাক্কা লেগে একটি ফেরির ফ্ল্যাগ স্ট্যান্ড বা মাস্তুল ভেঙে গেছে বলে কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে যে খবর প্রকাশিত হয়েছে তা অস্বীকার করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি)। একই কথা বলেছে সেতু কর্তৃপক্ষও।
বিআইডব্লিউটিসি বলছে, সেতুতে ফেরি বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীরের ফ্ল্যাগ স্ট্যান্ডে কোনো ধরনের স্পর্শ বা ধাক্কা লাগেনি। এটি নিয়ন্ত্রণ করা যায়। সেতুর স্প্যানের স্পর্শ লাগার আগেই স্ট্যান্ডটি নুইয়ে ফেলা হয়।
সোমবার সকালে পদ্মা সেতুর ২ ও ৩ নম্বর পিলারের মাঝামাঝি স্প্যানে ধাক্কা লেগে রো রো ফেরি বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীরের ফ্ল্যাগ স্ট্যান্ড ভেঙে গেছে বলে খবর ছড়িয়ে পড়ে।
এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিসির শিমুলিয়া ঘাটের মেরিন কর্মকর্তা আহমেদ আলী বলেন, ‘আসলে ভাই, ফেরির স্পেনের ধাক্কার ঘটনা ঘটেনি। সকাল বেলা আমাদের একটি ফেরি পাটুরিয়া ঘাটে যাচ্ছিল শিমুলিয়া ঘাট থেকে। ফেরি বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর পদ্মা সেতুর নিচ দিয়ে যাওয়ার সময় ফ্ল্যাগ স্ট্যান্ড উপরে এবং নিচে করা যায়। এতে পদ্মা সেতুর সঙ্গে অথবা পিলার অথবা স্প্যানের সঙ্গে কোনো ধাক্কা বা ঘষা লাগেনি।’
একটি ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, পদ্মা সেতুর স্পেনের ধাক্কায় ফ্ল্যাগ স্ট্যান্ড নুইয়ে পড়েছে। বিষয়টি নজরে আনা হলে আহমেদ জানান, ফ্ল্যাগ স্ট্যান্ড নামানো-ওঠানো যায়।
তিনি বলেন, ‘নিচের দিকেও নামে, পেছন দিকেও যায়। পেছন দিকে গিয়ে ডাউন হবে। পরে গিয়ে আবার দাঁড়িয়ে যাবে। ফ্ল্যাগ স্ট্যান্ডে কী ঘষা বা ধাক্কা লাগতে পারে। জবাবে আহমেদ বলেন, ‘না না, এমন কোনো ঘটনাই ঘটেনি।’
তাহলে যে ফুটেজ দেখা যাচ্ছে সেটি কি মিথ্যা? এই প্রশ্নে মেরিন ইঞ্জিনিয়ারের জবাব ‘না না, ঘষা লাগেনি। ওরা ফেরির কাছে গিয়ে স্ট্যান্ড নামিয়ে দিয়েছে। ওটা ডাউন করা যায়, আবার আপ করা যায়। তবে এটা হাইড্রোলিক সিস্টেমে নামানো হয়েছে নাকি কেউ নামিয়েছে তা জানার জন্য লোক পাঠানো হয়েছে।’
বিআইডব্লিউটিসির উপমহাব্যবস্থাপক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আসলে ফেরিতে কোনো ধাক্কা লাগার ঘটনা ঘটেনি। যেটা আপনারা শুনেছেন, সেটা চোখে দেখার ভুল হতে পারে। মেরিন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ফ্ল্যাগ স্ট্যান্ড সেটা উপর-নিচ করা যায়। পদ্মা সেতুর নিচ দিয়ে যাওয়ার সময় পরিচালক ওইটা নিচু করে ফেলে, যার জন্য কোনো ধাক্কা বা সংস্পর্শ লাগেনি।’
আর পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল কাদের দেওয়ান বলেন, ‘অনেক সাংবাদিক আমাকে ফোন করেছে, আমি শুনেছি। বিআইডব্লিউটিসি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমি কথা বলেছি। তারা বলেছে, পদ্মা সেতুর সঙ্গে ফেরির ধাক্কার কোনো ঘটনা ঘটেনি। আমি লোক পাঠিয়েছি ঘটনাস্থলে।’
এর আগে গত ১৩ আগস্ট পদ্মা সেতুর ১০ নম্বর পিলারে ধাক্কা লাগে মাদারীপুরের বাংলাবাজার ঘাট থেকে ছেড়ে আসা কাকলি ফেরির। এতে তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। ওই পিলারেই ৯ আগস্ট সন্ধ্যায় ধাক্কা লাগে ফেরি বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীরের।
এর আগে ২৩ জুলাই সকাল ১০টার দিকে পদ্মা সেতুর ৭ নম্বর পিলারের সঙ্গে রো রো ফেরি শাহ জালালের ধাক্কা লাগে। এতে ২০ জন যাত্রী আহত হন।
এসব ঘটনায় পদ্মা সেতুর নিরাপদে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। পদ্মা সেতুর পিলারের সুরক্ষায় স্রোতের তীব্রতা কমার আগ পর্যন্ত শিমুলিয়া-বাংলাবাজার রুটে যাত্রী ও মালবাহী ফেরি না চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
পদ্মা সেতুর সুরক্ষায় প্রয়োজনে ফেরি চলালের রুট পরিবর্তন করা এবং পিলারগুলোর প্লাস্টিক দিয়ে মুড়িয়ে ফেলারও সুপারিশ এসেছে।
খুলনা গেজেট/এনএম