পদ্মা সেতু বাংলাদেশের জন্য গর্ব ও অহংকারের বিষয় এবং শেখ হাসিনার দূরদর্শী দৃষ্টির কারণেই আজ জাতি ইতিহাস সৃষ্টির দ্বারপ্রান্তে-এমনটাই মনে করেন বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাপ্তাহিক আয়োজন ‘রাজনীতির সাতকাহন’ শীর্ষক ওয়েবিনারের পঞ্চম পর্বে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে তারা সেতুটির শুরু থেকে আজ পর্যন্ত কর্মযজ্ঞ ও এর বিরুদ্ধে নানা চক্রান্তের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন।
শুক্রবার রাত ৯টায় সরাসরি প্রচারিত এই পর্বের বিষয় ছিল ‘পদ্মা সেতুর নেপথ্য কথা’। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন। অনুষ্ঠানের শুরুতে মসিউর রহমান বলেন, পদ্মা সেতুর উদ্বোধন আমাদের জন্য আনন্দের এবং অহংকারের বিষয়।
তিনি বলেন, যখন পদ্মা সেতুর পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয় তখন বিশ্ব ব্যাংক ও এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংককে এই প্রকল্পে সম্পৃক্ত হতে অনুরোধ করি। দুই সংস্থাই এই প্রস্তাবে অনিচ্ছা জানায়। এ সময় জাপানের কাছে বিনিয়োগ আহ্বান করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জাপান সরকারের কাছে কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্পে বিনিয়োগের আহ্বান করা হলে তারা যেকোন একটি বেছে নিতে বলে। প্রধানমন্ত্রী দেশের দক্ষিণ-পশিমাঞ্চলের মানুষের কথা ভেবে পদ্মা সেতুকে বেছে নেন উল্লেখ করে মসিউর রহমান বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদৃষ্টি না থাকলে পদ্মা সেতু সম্ভব হতো না। এর পরেই বিশ্ব ব্যাংক ও এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক প্রকল্পে বিনিয়োগে আগ্রহী হয়।
বিশ্ব ব্যাংকের উত্থাপিত দুর্নীতির অভিযোগ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা বলেন, সংস্থাটি শুরু থেকেই প্রকল্পে দুর্নীতি হচ্ছে এমন নানা ধরনের নালিশ করতে থাকে। পদ্মা সেতু নামে ইমেইল আইডি খুলে নানাজনের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করে এবং সেসব বেশিরভাগই ব্যক্তিগত আক্রমণ ও কুরুচিপূর্ণ। এমনকি একজন নারী কর্মকর্তার একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে নির্যাতিত হওয়ার বিষয়টিকেও তারা সামনে নিয়ে আসে, যা সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক। পরবর্তীতে কানাডীয় আদালত দুর্নীতির কোনো প্রমাণ না পাওয়ার বিষয়টিও উল্লেখ করেন বর্ষীয়ান এই অর্থনীতিবিদ।
মসিউর রহমান বলেন, আমার ওপর যে চাপ ছিল, কেবল ইসলামি ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক বাদে অন্য যারা এখানে অর্থায়ন করেছে, বিশ্ব ব্যাংক এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক এবং জাইকা এরা একদিন সকালে আগে সময় ঠিক করে আমার সঙ্গে দেখা করতে চাইল। প্রথমে তারা বলল জাপানি অ্যাম্বাসি অফিসে। আমি বললাম সেখানে আমি যাব না। আমার যে যুক্তি ছিল যে মানুষের ধারণা হবে বা প্রচার হবে আমি তাদের কাছে নত হয়ে কোনও সুবিধা চাচ্ছি। আমি বললাম যে তোমরা আমাদের এখানে আসো। জাপানি অ্যাম্বাসেডর বলল তোমার ওখানে গেলে জার্নালিস্টদের ফেস করতে হবে। আমি বললাম যে জার্নালিস্টদের আমি ফেস করব। ওরা এসে আমাকে যেটা বলল যে আমাকে দায়িত্ব ত্যাগ করতে হবে, দেশও ত্যাগ করতে হবে। দেশ ত্যাগের শর্ত হলো তারা আমাকে বিদেশে ওয়ার্ল্ড ব্যাংকে বা এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকে বা কোথাও আমাকে একটা কনসালটেন্সি যোগাড় করে দেবে এবং আমি যে বেতন চাই তাইই ব্যবস্থা করে দেবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার কিছু কাজ ঠিক করে দেবে এবং আমাকে তারা টাকা দেওয়ার বন্দোবস্ত করে দেবে। আমার উত্তর হলো যে দেখ আমার যদি টাকা করার ইচ্ছা থাকত তাহলে এখানেই তো টাকা করতে পারতাম।
ড. মসিউর আরও বলেন, তারা যে প্রস্তাব দিয়েছিল এটা সামঞ্জস্যহীন প্রস্তাব। যে দোষ করেছে তাকে আবার পুরস্কৃত করবে। এর পেছনে যে বুদ্ধি তাদের ছিল সেটা হলো আমি যে এই ষড়যন্ত্র সম্পর্কে শক্ত অবস্থান নিয়েছিলাম। যেটা আমার বলা উচিত হবে এবং না বলাটা অনুচিত হবে। সেটা হলো আমার এই শক্ত পজিশন নেওয়ার ক্ষমতাটা কোথা থেকে আসলো। তার আগে একটু বলি, মাঝখানে যে বিশ্ব ব্যাংক বলার সঙ্গে সঙ্গে আমাদেরও কিছু গুরুজন স্থানীয়, যারা প্রভাবশালী, দুয়েকজন আমার বন্ধু, তারাও আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত, বন্ধু হিসেবে তারা আমাকে বলেছে যে তোমার নামে এসব ছড়াচ্ছে তুমি কেন দায়িত্ব ত্যাগ করো না এবং দেশ ছাড়ো না কেন। আমি বললাম যে দেখ আমি দেশের বাইরে গেলে আমার পায়ের তলায় মাটি থাকবে না। আমার ক্ষমতা ততদিন যত সময় আমি দেশের মধ্যে আছি। আরেকটি হলো মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে সাহস যুগিয়েছেন। এই বলেই কেঁদে ফেলেন ড. মসিউর রহমান।
প্রসঙ্গত, বঙ্গবন্ধু সেতুর কথাও উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই সেতুর প্রাথমিক কাজ শুরু করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কিন্তু ৭৫-এ নিহত হওয়ার পর তা বন্ধ হয়ে যায়।
ড. মসিউর বলেন, পদ্মা সেতু পদ্মাপাড়ের মানুষের মাঝে উন্নয়নের স্পৃহা তৈরি করেছে। আর এই স্পৃহার উৎস প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
পদ্মা সেতু বিরোধীদের প্রসঙ্গে ড. মসিউর রহমান বলেন, যারা পদ্মাসেতুর কোন উপযোগিতা দেখতে পাচ্ছেন না তাদের চোখে আসলে ছানি পড়েছে। যারা সমৃদ্ধির আলো দেখতে পায় তারাই জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যায় বলে উল্লেখ করেন তিনি।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাপ্তাহিক এই আয়োজনে সার্বিক সহযোগিতা করে দলটির গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই)। অনুষ্ঠানটি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে সরাসরি প্রচারিত হয়।