পদ্মা সেতু দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের ২১ টি জেলার কয়েক কোটি মানুষের দীর্ঘদিনের একটি লালিত স্বপ্ন। সেই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিতে যাচ্ছে আগামী ২৫ জুন। দিনটি বাংলাদেশের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। এদিন সকাল ১০ টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা বহুমুখী সেতুর উদ্বোধন করবেন। উদ্বোধনের পরের দিন সকালে প্রত্যাশিত সেতু সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হবে।
পদ্মা সেতু নিয়ে দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের আশা, আকাঙ্ক্ষা, স্বপ্ন ও প্রত্যাশা পূরণের বিষয় তুলে ধরে খুলনা গেজেটকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠাকালীন ভিসি প্রফেসর ড. গোলাম রহমান।
তিনি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এর প্রাক্তন আরবান এন্ড রিজিওনাল প্ল্যানিং বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টি এন্ড আর্কিটেকচারাল এন্ড প্লানিং বিভাগের প্রাক্তন ডিন, স্বাধীনতা আন্দোলনকালীন বুয়েটের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক, ৫২ ‘র ভাষা আন্দোলন এবং আইয়ূব বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একজন সক্রিয় কর্মীও।
মতামত ব্যক্ত করে প্রফেসর রহমান বলেন, জাতি যদি বঙ্গবন্ধু এবং হাসিনাকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করে তাহলে পদ্মা সেতুর নামকরণ ‘বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনা সেতু’ হওয়া উচিৎ। এটা না করা হলে দেশ ও জাতির সঙ্গে অন্যায় করা হবে। এটা এক গণবাক্যে করা উচিৎ। বঙ্গবন্ধু দেশ ও জাতির অন্তরের কথা বুঝতে পারতেন। শেখ সাহেবের মনের কথাটা আমাদের লিড করা উচিৎ।
তিনি বলেন, শেখ সাহেবের অদম্য ইচ্ছা ছিলো পদ্মা সেতু করার। দেশ স্বাধীনের পূর্বে ১৯৬০ সালে শেখ সাহেব যখন এমএলএ হন তখন থেকেই তিনি স্বপ্ন দেখতেন দক্ষিণবঙ্গের সঙ্গে ঢাকার সরাসরি সড়ক যোগাযোগের। এরপর দেশ স্বাধীনের পর তিনি প্রধানমন্ত্রী হলে তৎকালীন চীফ ইঞ্জিনিয়ার আঃ রউফ সাহেবকে বলেছিলন, মামু তুমি একটা অ্যালাইনমেন্ট তৈরি করো (পদ্মা নদীর উপর সেতুর মাধ্যমে) যেন দক্ষিণবঙ্গের সঙ্গে ঢাকার সুন্দর একটা (কুইক) যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হয়।
ড. গোলাম রহমান বলেন, এ কথা আমরা চীফ ইঞ্জিনিয়ার রউফ সাহেবের মুখ থেকে শুনেছি। বঙ্গবন্ধুর মনের কথা ছিল পদ্মা নদীর উপর সেতু নির্মাণের। এটা তাঁর (বঙ্গবন্ধুর) একটা ম্যান্ডেট ছিলো, কিভাবে তাড়াতাড়ি করে সংযোগ সড়ক থেকে সেতুতে পরিণত করা যায়। তিনি জাপান সফরে যেয়ে, এমনকি চাইনিজদের সাথে পদ্মা নদীর উপর সেতুর ব্যাপারে কথাবার্তা বলেছেন। শেখ সাহেবের মনের, প্রাণের কথা ছিল পদ্মা সেতু আলটিমেটলি হবে।
তিনি বলেন, ‘পদ্মা সেতু’ ছিলো জাতির প্রত্যাশা। এটা ছিলো দক্ষিণবঙ্গের মানুষের অন্তরের প্রত্যাশা। সেটা শেখ সাহেবের ভেতর দিয়ে আমাদের মধ্যে প্রবেশ করেছে। ঐ ইচ্ছাটাই তাঁর ইচ্ছা। তিনি ( বঙ্গবন্ধু) মানুষের আকাঙ্ক্ষা বুঝতে পারতেন। মানে তিনি মানুষের অন্তর বুঝতে পারতেন। তিনি ছিলেন একজন সাচ্চা পলিটিশিয়ান। তাঁর কন্যা শেখ হাসিনা সেটা শিখেছেন। সেও পিতার মতো মানুষের অন্তরের কথা বুঝতে পারেন। এটা মস্তবড় একটা কোয়ালিটি। সাধারণ মানুষের মন যদি কেউ বুঝতে না পারেন তাঁর পলিটিক্স করা শোভা পায়না।
৯০ বছর বয়সী এই প্রবীণ শিক্ষক বলেন, দক্ষিণবঙ্গের সাথে এই সেতু একটা নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করবে। ১ থেকে ২ শতাংশ পর্যন্ত আমাদের জিডিপি বৃদ্ধি পাবে। ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য এটা একটা আন্তর্জাতিক রুটে পরিণত হবে। ইন্ডিয়া, নেপাল, থাইল্যান্ড, পাকিস্তান, বার্মা দ্রুত সংযোগ সড়ক দিয়ে আমরা ব্যবসায় দ্রুত উন্নতি করতে পারবো।
পদ্মা সেতু নিয়ে ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, এডিবি, ড. ইউনুস সম্পর্কে তিনি মন্তব্য করে বলেন, আমাদের প্রিয় শেখ সাহেব বেঁচে থাকলে কোন ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, এডিবি কেউ মুখ খোলার কথা কোন দিন চিন্তাই করতে পারত না। শেখ সাহেব যেটা বলতেন, ওটাই আইন হয়ে যেত।