স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নতুন অভিযাত্রায় নিয়ে গেলেন বাংলাদেশকে। একাত্তরের পর মনস্তাত্তিকভাবে বাংলাদেশের মানুষের মনে নতুন এক প্রেরণা ও জাতিগতভাবে সক্ষমতার এক নতুন প্রেরণা ও শক্তির উন্মেষ ঘটালেন। বিশ্ববাসীকে জানান দিলেন ‘আমরাও পারি।’ ঠিক বঙ্গবন্ধুর সেই বজ্রউক্তি ‘কেউ আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবা না’ এর মতোই দৃঢ় উচ্চারণ । এখন শুধুই আমাদের সামনে চলা, পেছনে ফেরার ফুসরত নেই। আরও কিছু নতুন, আরও সম্ভাবনার, উদ্ভাবনার বিষয় সম্মুখ অগ্রযাত্রায় যেতে চায় বাংলাদেশ। অভিলক্ষ্য বঙ্গবন্ধুর ‘সোনার বাংলা’ গড়ার স্বপ্ন পূরণ। এ লক্ষ্য পূরণে একচল্লিশ সালে উন্নত বাংলাদেশের এক প্রতিচ্ছবি আমাদের সামনে দুলছে। ওই স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতেই এখন নতুন নতুন উদ্যোগ, নতুন পরিকল্পনা নেওয়া দরকার, আর সেটাই নিচ্ছে সরকার।
এ লক্ষ্যে চলতি মেগা প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়নের পর দেশের অর্থনীতির বড় ধরনের অর্জন হবে, আরও গতিশীল হবে এমনটি আশা অভিজ্ঞ মহলের। তবে এসব মেগা প্রকল্প শেষ হলে তারপর কি থেমে থাকবে এ অগ্রযাত্রা? এক কথায় উত্তর, না। সরকার নিশ্চয়ই সে দিকে লক্ষ্য রেখে নতুন মহাপরিকল্পনা হাতে নিচ্ছে। এরই মধ্যে দক্ষিণাঞ্চলে পদ্মা সেতুর সম্ভাবনা কাজে লাগাতে ফরিদপুর থেকে কুয়াকাটা এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের পরিকল্পনা ও ঘোষণার কথা সম্প্রতি জানা গেছে। মানুষ নতুন আশায় বুক বেঁধেছে। তবে সরকারের নতুন এসব দূরদর্শী পরিকল্পনার সাথে ভাবনায় নিতে দুটি উদ্যোগ গ্রহণ ও তা বাস্তবায়নের তাগিদ অনুভূত হচ্ছে। আর মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ও পরিকল্পনায় এটা বাস্তবায়িত হোক, তিনি যতোশীঘ্র সম্ভব নতুন এ মেগা প্রকল্প প্রস্তাব বাস্তবায়ন করুন-এটা উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলসহ দেশের মানুষ প্রত্যাশা করেন। আর তা যে কেবল বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বেই সম্ভব এটাও দেশের মানুষ মনে করেন। নতুন এ মেগা প্রকল্পের প্রস্তাবটি হচ্ছে আরিচায় ‘পদ্মা-যমুনা ত্রিমুখী সেতু ও করিডোর মহাসড়ক বা এক্সপ্রেসওয়ে’ নির্মাণ। তা হলে স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণের গতিকে ত্বরান্বিত করবে। যা আমাদের বার্ষিক প্রবৃদ্ধি আরও ২-৩ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়ে দিয়ে একচল্লিশ সালে উন্নত বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যমাত্রাকে আরও এগিয়ে আনতে পারবে বলে আশা করা যায়।
প্রথম প্রস্তাব
আরিচার ১০ কিলোমিটার ভাটিতে পদ্মার পাটুরিয়া-দৌলতিয়ায় আরেকটি একমুখী সেতু তৈরি না করে বরং আরিচায় পদ্মা-যমুনা ত্রিমুখী সেতু এবং করিডোর মহাসড়ক নির্মাণ বাংলাদেশের জন্য হতে পারে মাইলফলক। আরিচায় পদ্মা ও যমুনার মিলিত স্থানে ইংরেজি ওয়াই (ণ) অক্ষরের মতো পদ্মা-যমুনা ত্রিমুখী স্টিল কম্পোজিট সেতু নির্মাণ সম্ভব। এর কারণ, পদ্মা সেতু দিয়ে ট্রেনসহ ভারি যানবাহন চলাচল ছাড়াও নদীর গভীরতা, স্রোত ও গতি-প্রকৃতির কারণে এতোটা গভীরতা সম্পন্ন পাইলিং করতে যেয়ে এ প্রকল্প ব্যয়বহুল হয়েছে। জাজিরায় যে স্থানে পদ্মা সেতু হয়েছে সেখানে একমুখী নদীর স্রোত ও বেগ বেশি। তবে শত প্রতিকূলতা অতিক্রম করে অবশেষে বাংলাদেশের উন্নয়ন ইতিহাসে মানুষের সুদীর্ঘ দিনের স্বপ্ন আজ বাস্তবে রূপ লাভ করছে।
পদ্মা সেতুর মাওয়া থেকে যমুনা নদীর ওপর নির্মিত বঙ্গবন্ধু সেতুর দূরত্ব ১১০ কিলোমিটার। এর মধ্যবর্তী আরিচা উভয় সেতু প্রায় মধ্যবর্তী স্থানে রয়েছে। উভয় ক্ষেত্র আরিচা থেকে কমবেশি ৫০-৬০ কিলোমিটার দূরত্ব রয়েছে। এখানে মিলিত হয়েছে পদ্মা ও যমুনা নদী। এ স্থলে একটি ত্রিমুখী সেতু নির্মাণ করতে পারলে তা দেশের তিনটি ভূ-খ-কে একত্রিত করে দেশের যোগাযোগ ইতিহাসে নতুন অধ্যায় তৈরি করতে পারে। যেহেতু পদ্মা এবং যমুনা সেতুতে রেল যোগাযোগ সুযোগ আছে তাই আরিচায় প্রস্তাবিত পদ্মা-যমুনা ত্রিমুখী সেতুটি কেবল বাস-ট্রাক, প্রাইভেটকারসহ হালকা যানবাহন ও গ্যাস-বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন সম্পন্ন চলাচল উপযোগী করে স্টিল কম্পোজিট সেতু নির্মাণে ব্যয় অনেক কম হবে। এটা অনেকটা সাসপেনশন টাইপের করা যেতে পারে। তবে বিশেষ প্রয়োজনে ত্রিমুখী সেতুর আরিচা-ঈশ্বরদী লাইনে কেবল রেলযুক্ত করা যেতে পারে।
এ সেতুর নির্মাণে এমন একটি কল্পিতচিত্র সামনে নেওয়া যায়-তা হলো আরিচা থেকে পদ্মা-যমুনার মিলিত প্রশস্ত অংশের সোজা তিন বা চার কিলোমিটার ভেতরে যেয়ে সেখান থেকে বায়ে চার-পাঁচ কিলোমিটার রাজবাড়ীর অংশে এবং একইভাবে মধ্যভাগ থেকে ৬-৭কিলোমিটার ডানে ঈশ্বরদীর রাখালগাছি চরের অংশে যেয়ে শেষ হবে। তা হলে সেতুটি হবে ওয়াই প্রকৃতির। মাঝখানে ত্রিভুজ আকৃতির অংশ দিয়ে যেকোনো দিকে যানবাহনের গতি পরিবর্তন করা যাবে। ধরা যাক কোনো যানবাহন আরিচা থেকে রাজবাড়ির পারে যাবে ফরিদপুর, কুষ্টিয়া, যশোর, খুলনা, নড়াইল, বাগেরহাট, মংলার দিকে। এ ক্ষেত্রে আরিচা হয়ে নদীর মাঝ বরাবর তিন-চার কিলোমিটার গিয়ে গাড়িটি বামে ঘুরে রাজবাড়ির অংশে যেতে পারবে। আবার রাজবাড়ি থেকে কোনো যানবাহন ঈশ্বরদী পারে যেতে তা বামে টার্ন নিয়ে রাখালগাছি অংশে যেতে পারবে। একইভাবে রাখালগাছি থেকে আরিচা অথবা রাজবাড়ি যে কোনো অভিমুখে টার্ণ নেওয়ার সুযোগ থাকছে। অবশ্য সেটা সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের পরের কথা।
তবে এক্ষত্রে উল্লেখ করা যায় যে, সাগরের মধ্যদিয়ে চীন ২০-৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ এ ধরনের সেতু নির্মাণ করে এক দ্বীপ থেকে অন্য দ্বীপের মধ্যে যোগাযোগ নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে। জাপান, দক্ষিণ কোরিয়াসহ আরও কয়েকটি দেশ এ ধরনের সাসপেনশন টাইপের/ঝুলন্ত সেতু নির্মাণ করেছে। তাছাড়া পদ্মা সেতুর নির্মাণযজ্ঞ শেষ করতে যেয়ে যে অভিজ্ঞতা হয়েছে তা এখন আরিচায় একটি ত্রিমুখী সেতু নির্মাণে অনেক সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে। বিশেষ করে এখানে একটি অনুকূল দিক হলো পদ্মা-যমুনার মিলিত স্থলে অনেক আগে থেকেই বালি ভরাট হয়ে অনেকটা জায়গা স্থিত হয়ে আছে। পদ্মা সেতুর মতো এখানে পাইলিংয়ে এতোটা গভীরতা যেমন প্রয়োজন হবে না তেমনি তা অতোটা জটিল হবে না-এমনটি ধারনা করছেন অভিজ্ঞমহল। যাইহোক এ ক্ষেত্রে প্রথমে আসে অর্থসংস্থানের প্রশ্ন। আমাদের বিশ্বাস প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুর সফলতার পর এমন একটি মেগা প্রকল্প হাতে নিয়ে তিনি দেশের মানুষের কাছে বিনিয়োগের আহবান জানালে টাকা উপছে পড়বে। তারপরও ধরে নেওয়া যায় জাইকা, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক বা কোনো বিদেশি বিনিয়োগ না পাওয়া গেলে অথবা আংশিক পাওয়া গেলে তাসহ এর অর্থের যোগান আসতে পারে উন্মুক্ত শেয়ার বা বন্ড বিক্রির মাধ্যমে। এ প্রকল্পের কাজ চূড়ান্ত করে বন্ড/শেয়ার ছেড়ে বাজার থেকে বিনিয়োগ উত্তোলন করা যায়। দেশে এখন দশ, বিশ লাখ বা তদুর্ধ পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগের মতো হাজার হাজার সমার্থ্যবান ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ধরা যায়, এই প্রকল্পে সম্ভাব্য ৩০-৩৫ হাজার কোটি টাকা খরচ হলে তার পুরোটাই অথবা অর্ধেকটা দেশীয় বন্ড/শেয়ার বিক্রির মাধ্যমে সংস্থান সম্ভব।
এছাড়া কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দিলে এখান থেকে আসতে পারে বিনিয়োগের একটি বড় অংশ। এছাড়াও বিদেশে যারা বাংলাদেশী কর্মরত আছেন তাদের নিকট থেকেও অর্থলগ্নী আহ্বান করা যেতে পারে। কারণ, এ সেতুও হবে লাভজনক এবং তা থেকে দীর্ঘমেয়াদী রিটার্ন পাওয়া যাবে। পদ্মা-যমুনা ত্রিমুখী সেতু ও করিডোর মহাসড়ক নির্মাণ করতে যেয়ে কমপক্ষে দেড় থেকে দু’লাখ মানুষের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর্মসংস্থান ছাড়াও অন্যান্য কর্মযজ্ঞ অর্থনীতিতে প্রাণচাঞ্চল্য সৃষ্টি করবে। দেশের ইস্পাত, লৌহ, সিমেন্ট কারখানা এবং পাথরসহ অন্যান্য আনুসাঙ্গিক সরবরাহকারী কোম্পানিগুলো মালামাল উৎপাদন ও সরবরাহে চাঙ্গা হয়ে উঠবে। এ সেতু দিয়ে দিনে রাতে কমপক্ষে ২০-২৫ হাজার যানবাহন পারপার হতে পারবে। আশা করা যায় জাইকা এধরনের প্রকল্পে সহায়তা দিতে পারে এ কারণে যে, এখানে কেবল হালকা যানবাহন চলবে। প্রসঙ্গত যে, ত্রিমুখী এই সেতুর নীচ দিয়ে যখন নৌযান চলাচল করবে তখন নদীর যেখানে চ্যানেলের গভীরতা বেশি সেতুর সে অংশ থাকবে সবুজ মার্কিং করা। আর যে অংশে নাব্যতা নেই সেখানে থাকবে লাল মার্কিং করা। ফলে নৌযানে চালক সবুজ সংকেত দেওয়া স্থান দিয়েই নৌযান চালিয়ে যাবে। এছাড়াও এখন আধুনিক সেন্সর সিস্টেম স্থাপন করে নৌযান চলাচলে নির্বিঘ্ন করা যায়। যেখানে বর্ষাকালে সর্বোচ্চ জলসীমায় নৌযান সেতুর নিচ দিয়ে অতিক্রম করতে যেয়ে কোনো ঝুঁকি আছে কি না তা একশ বা দুইশ’ মিটার আগে থেকেই জানান দিতে পারবে সেতুর স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল ব্যবস্থাপনা।
প্রস্তাবিত পদ্মা-যমুনা ত্রিমুখী সেতুর মধ্যবর্তী যে ত্রিভুজ আকৃতির বাঁক পরিবর্তনের জায়গা থাকবে তার মধ্যবর্তী স্থানে একটি পাঁচতারা হোটেল-মোটেল করা যেতে পারে। যা নদীর ওপর নির্মিত হবে যেখানে গতিপ্রবাহের কোনো ব্যঘাত সৃষ্টি করবে না। এটি বর্ষকালে পানি প্রবাহের সর্বোচ্চ সীমার ৫-১০ মিটার ওপর নির্মিত হবে স্টিলফিকচার টাইপ। ৬-১০ তলা বিশিষ্ট এমন একটি হোটেল নির্মাণ করা গেলে তা হতে পারে দেশের অন্যতম একটি দর্শনীয় এবং বিশ্বের অন্যতম ভাসমান হোটেল। পদ্মা-যমুনার বুকে পারাপারের সময় অথবা বিনোদনে বিশাল নদীর ওপর এমন একটি দর্শনীয় স্থান তৈরি করে তা বিষ্ময় সৃষ্টি করা যেতে পারে। এখানে যাতায়াতের বিরতিকালীন সময়কাটানো ও নাস্তা বা খাবার ব্যবস্থা থাকলে সেতু দিয়ে যাতায়াতকারী মানুষ ক্ষণিকের জন্য হলেও এখানে বিশ্রাম নিতে চাইবে। আসতে পারে বিদেশী পর্যটকরা।
দ্বিতীয় প্রস্তাব
পদ্মা-যমুনা করিডোর মহাসড় নির্মাণ প্রকল্প। এমন একটি মেগা প্রকল্প গ্রহণের এখনই উপযুক্ত সময়। পদ্মা সেতুর পূর্ব তীর মাওয়া থেকে পদ্মা নদীর পূর্বতীর হয়ে আরিচা এবং একইভাবে আরিচা থেকে যমুনা নদীর দক্ষিণতীর হয়ে যমুনা সেতু পর্যন্ত মোট কমবেশি ১১০ কিলোমিটার তীরবর্তী যোগাযোগ অবকাঠামো তথা মহাসড়ক বা এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ। এটা দুটি ভাগে ভাগ করে করা সম্ভব। একটি মাওয়া থেকে আরিচা ৪৫-৫০ কিলোমিটার এবং আরিচা থেকে যমুনায় বঙ্গবন্ধু ব্রিজ ৫৫-৬০ কিলোমিটার। এই মহাসড়ক নির্মাণ করা হলে দেশের ইতিহাসে যোগাযোগের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। অপরদিকে এই দুটি বড় নদীর তীরবর্তী এলাকায় ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠান, আবাসিক প্রকল্পসহ অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ করে রাজধানী ঢাকার ওপর চাপ কমানো সম্ভব। ঢাকার কাছাকাছি শিল্প-কলকারখানা স্থাপন বন্ধ করে পরিবেশ ঝুঁকি কমানো যাবে। কোনো ব্যক্তি যমুনা সেতুর এপার থেকে যশোর-খুলনা বা ফরিদপুরে আসতে হলে তাকে এখন সভার বা ঢাকা ঘুরে আসতে হয়। এতে অতিরিক্ত ১৪০-১৫০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয়। কিন্তু যমুনা ব্রিজ থেকে যমুনা নদীর তীর হয়ে ৫৫ কিলোমিটার দূরত্বের আরিচা পর্যন্ত মহাসড়ক হলে একশ কিলোমিটার পথ কম হবে।
আবার পদ্মা ব্রিজের মাওয়া থেকে উত্তরে আরিচা পর্যন্ত পদ্মা নদীর তীর দিয়ে একটি মহাসড়ক হলে তাও অনুরূপ বিকল্প যানবাহন পারাপার বা চলাচল করতে পারেব। পদ্মা নদীর তীরবর্তী এ এলাকাও নতুন শিল্প অবকাঠামো নির্মাণসহ যোগাযোগ সহজসাধ্য হতে পারে। আবার কোনো কারণে পদ্মা সেতু বা বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে সাময়িক যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকলে বিকল্প এই দুই নদী তীরবর্তী মহাসড়ক ও পদ্মা-যমুনা ত্রিমুখী সেতু সে চাপ সামলাতে পারবে। বিকল্প সেতু ও পথ হিসেবে উভয় বিবেচনায় তা ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। পদ্মা ও যমুনা করিডোরের এই নদী তীরবর্তী মহাসড়ক পাল্টে দিতে পারে দক্ষিণ-পশ্চিম ও উত্তরাঞ্চলের যোগাযোগ নেটওয়ার্ক। দেশের তিনটি ভূ-খ-ের নিবিড় যোগাযোগ বন্ধনে তা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। একই সাথে রাজধানী ঢাকার ওপর নানামুখী চাপ বহুলাংশে কমতে পারে। তাছাড়া পদ্মা তীরে ও যমুনা তীরে দুটি বড় ইপিজেড করার সুযোগ সৃষ্টি হবে। হতে পারে তিন পাড়েই অসংখ্য নতুন কলকারখানা।
পদ্ম ও যমুনার তীর দিয়ে এই করিডোর মহাসড়ক নির্মাণে এর আর্থ-সামাজিক ও ভৌগলিক গুরুত্ব বিবেচনায় আশা করা যায় এ প্রকল্পে বিদেশি সহায়তা পাওয়া যাবে। বিশেষ করে জাইকা বা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক। প্রয়োজনে এটিও নিজস্ব অর্থে নির্মাণ সম্ভব। এই একশ দশ কিলোমিটার মহাসড়ক নির্মাণে সর্বোচ্চ দশ হাজার কোটি টাকা খরচ হতে পারে যা সরকারের পক্ষেই যোগান দেওয়া সম্ভব এবং এ মহাসড়কে যানবাহন চলাচলে বিদেশের মতো টল আদায় করা হলে তা বিনিয়োগ রিটার্ন আসবে ২৫-৩০বছরের মধ্যেই।
প্রস্তাবিত পদ্মা-যমুনা ত্রিমুখী সেতু ও পদ্মা-যমুনা করিডোর মহাসড়ক/এক্সপ্রেসওয়ে নির্মিত হলে দেশের তিনটি ভূখন্ডকে তা নিবিড়ভাবে যুক্ত করে সারাদেশ যোগাযোগ নেটওয়ার্ক স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। একই সাথে তা দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনীতিতে ২-৩ শতাংশ পর্যন্ত প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়ক হতে পারে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী দেশের উন্নয়নে অত্যন্ত দূরদর্শী ও বৃহত্তর পরিসরে চিন্তাভাবনা করছেন। দেশের সামগ্রিক আর্থ-সামাজিক গুরুত্ববিবেচনায় এ দুটি প্রকল্প গ্রহণ করা যেতে পারে। এ নিয়ে চিন্তাভাবনা বা উদ্যোগ গ্রহণের এখনই সময়। তা হলে তা ২০২৫-২০২৭ সালের মধ্যে বাস্তবায়ন সম্ভব। প্রধানমন্ত্রীর একান্ত মনোবল ও দৃঢ় প্রত্যয়ে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এটিই এখন বাঙালি জাতির যেকোনো চ্যালেঞ্জ গ্রহণের বড় প্রেরণার উৎস। দেশের মানুষ এখন আরও বড় স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে। সেই স্বপ্ন তারা প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বেই ছুঁতে চায়। আর এর মাধ্যমে উন্নত বাংলাদেশ এর যে লক্ষ্য ২০৪১ সালে নির্ধারিত রয়েছে তার অর্জন আরও এগিয়ে আনা সম্ভব হবে এমনটি প্রত্যাশা দেশের জনমানুষের।
লেখক : পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত), জনসংযোগ ও প্রকাশনা বিভাগ, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়।
e-mail : arhaman.ku@gmail.com
খুলনা গেজেট / আ হ আ