রাজশাহীর পদ্মাপাড়ে বইছে উত্তর থেকে আসা ঠাণ্ডা বাতাস। আর এই হিমেল হাওয়ায় নেমেছে কনকনে শীত। শত প্রতিকূলতার মাঝেও খোলা আকাশের নিচে তাঁবু টানিয়ে অবস্থান করছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। রাজশাহী বিভাগীয় সমাবেশ সফল করতে নেতাকর্মীরা দুইদিন আগেই সমাবেশ স্থলে চলে এসেছেন। রাজশাহীতে প্রচণ্ড শীত অনুভূত হলেও আড্ডা-গল্পে দারুণ উপভোগ করছেন তারা।
শুক্রবার (২ ডিসেম্বর) রাত ১১টার দিকে রাজশাহীর কেন্দ্রীয় ইদগাহ মাঠ ও পদ্মাপাড়ের আশপাশে গিয়ে এমন চিত্রের দেখা মেলে।
ADVERTISEMENT
এসময় সমাবেশে আসা নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বললে তারা অভিযোগ করেন, বিএনপির রাজশাহীর সমাবেশে গণজোয়ার ঠেকাতে দুইদিন আগে থেকেই পরিবহন ধর্মঘট ডাকা হয়েছে। সেজন্য তারা ট্রেনে ও সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে সমাবেশে এসেছেন। সমাবেশের আগের দিন শুক্রবার দুপুরে জুমার নামাজ আদায় করার জন্য মাদরাসা মাঠে জড়ো হলে নেতাকর্মীদের প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। এমনকি বিএনপি নেতাকর্মীদের হোটেল ভাড়া দেওয়া হচ্ছে না। সমাবেশ স্থলে রাত্রিযাপন করার কথা বললেও সেখানে প্রবেশ করতে দেয়নি পুলিশ। তাই বাধ্য হয়েই পদ্মা নদীর পাশে ঈদগাহ মাঠে খোলা আকাশের নিচে কনকনে শীতের মধ্যে অবস্থান করতে হচ্ছে।
কথা হয় সিরাজগঞ্জের তারাশ থেকে সমাবেশে যোগ দিতে আসা যুবদল কর্মী আওয়াল হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, রাজশাহী শহরের ৫/৭টি হোটেলে ভাড়া নেওয়ার জন্য ঘুরেছি। কিন্তু হোটেল কর্তৃপক্ষ বিএনপি নেতাকর্মীদের দেখে ভাড়া দেয়নি। আশপাশে আমাদের কোনো আত্মীয়-স্বজনও নেই যে তাদের বাসায় রাত কাটাব। সেজন্য পদ্মাপাড়ের ঠান্ডা বাতাসের মধ্যে কনকনে শীতে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করছি। যত কষ্টই হোক সমাবেশ সফল করেই বাড়ি ফিরব।
পাবনার সাঁথিয়া থেকে আসা শামীম রেজা বলেন, প্রচণ্ড শীত উপেক্ষা করে আমরা সমাবেশ স্থলের পাশেই অবস্থান করছি। সরকারের পতন দেখতে এসেছি। খুব দ্রুতই যেন এই সরকারের পতন ঘটে। যাতে করে এই কষ্টের কথা মনে না থাকে।
ADVERTISEMENT
তিনি আরও বলেন, রাতে ঈদগাহ মাঠেই খিচুরি রান্না হয়েছে। সবাই মিলে খেয়েছি। সাময়িক কষ্ট হলেও আনন্দ লাগছে। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা আমাদের জন্য কিছু কম্বল দিয়েছেন। সেগুলো গায়ে দিয়ে শুয়ে আছি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে এসেছেন বিএনপি সমর্থক আব্দুর রহিম নামের এক বৃদ্ধ। তিনি বলেন, ছোটবেলা থেকেই জিয়াউর রহমানকে খুবই ভালো লাগে। সেই অনুপ্রেরণা থেকেই মূলত সমাবেশে যোগ দিতে এসেছি। রাজশাহীতে সমাবেশ হলেই আমি ছুটে চলে আসি। যদিও এবার অনেক শীত নেমেছে। নদী থেকে প্রচণ্ড বাতাস আসছে। তবুও সমাবেশ শেষ করেই বাড়ি ফিরব ইনশাআল্লাহ।
পাবনা জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য সিরাজুল ইসলাম সরদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, পদ্মাপাড়ের প্রচণ্ড ঠান্ডা বাতাসের মধ্যেই নেতাকর্মীদের ঢল নেমেছে। সমাবেশ শুরু হওয়ার আগের রাতেই জনগণের জোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমান স্বৈরাচার সরকারের পতন করেই নেতাকর্মীরা ঘরে ফিরবে। রাজশাহীর সমাবেশ থেকেই সরকারকে লাল কার্ড দেখানো হবে।
কেন্দ্রীয় কৃষকদলের সহ-সভাপতি মামুনুর রশীদ খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আগের সমাবেশগুলোতে লোকসমাগম দেখে সরকার দিশেহারা হয়ে গেছে। এজন্য রাজশাহীর সমাবেশের দুদিন আগ থেকেই পরিবহন ধর্মঘট দিয়েছে। সমাবেশ আসতে নেতাকর্মীদের বিভিন্নভাবে বাধা দিয়েছে পুলিশ। তারপরও হাজার হাজার নেতাকর্মী আগে থেকেই সমাবেশে চলে আসতে শুরু করেছেন। রাজশাহীর গণজোয়ার সরকার ঠেকাতে পারবে না ইনশাআল্লাহ। আগামীকাল রাজশাহীতে তিল ধারণের ঠাঁই হবে না।
নিত্যপণ্য ও জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, পুলিশের গুলিতে নেতাকর্মীদের মৃত্যুর প্রতিবাদ এবং বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে দেশের প্রত্যেক বিভাগে গণসমাবেশ করছে বিএনপি।
চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, খুলনা, রংপুর, বরিশাল, ফরিদপুর, সিলেট ও কুমিল্লার পরে শনিবার (৩ ডিসেম্বর) রাজশাহীতে গণসমাবেশ করতে যাচ্ছে দলটি। রাজশাহীর মাদরাসা মাঠে সমাবেশের আয়োজন চলছে। এটি বিএনপির নবম বিভাগীয় গণসমাবেশ। সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।