পদত্যাগ করা খুলনার ফুলতলা উপজেলা চেয়ারম্যান শেখ আকরাম হোসেনের প্রার্থীতা বাতিল করেছে রিটার্নিং কর্মকর্তা। মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) দ্বিতীয় ধাপে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে খুলনার তেরখাদা, ফুলতলা ও দিঘলিয়া উপজেলার প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষে ঋণ খেলাপির অভিযোগে তার প্রার্থিতা বাতিল করা হয়। তিনি ছাড়াও ঋণ খেলাপির দায়ে তেরখাদা উপজেলার ভাই চেয়ারম্যান পদের প্রার্থী বাবুল মিনার মনোনয়ন পত্রটি বাতিল করা হয়েছে। তারা প্রার্থিতা ফিরে পেতে আপিল করতে পারবেন।
খুলনার অতিরিক্ত জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তা এ টি এম শামীম মাহমুদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, চেয়ারম্যান প্রার্থী শেখ আকরাম হোসেন আফিল জুট মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। ওই মিলটি জনতা ব্যাংক খুলনা কর্পোরেট শাখার ১৫৬ কোটি টাকার ঋণ খেলাপী।
তিনি জানান, গত সোমবার ব্যাংক থেকে চিঠি দিয়ে বিষয়টি তাদেরকে জানানো হয়। সে কারণে তার মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। এছাড়া ঋণ খেলাপী থাকায় তেরখাদা উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী বাবুল মিনা’র মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে।
রিটার্নিং কর্মকর্তা আরও জানান, যাচাই বাছাইতে মোট ৩৬ জনের মনোনয়নপত্র বৈধ হয়েছে। মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়া প্রার্থীরা ২৪ থেকে ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত আপিল করার সুযোগ পাবেন।
দ্বিতীয় ধাপের তফসিল অনুযায়ী, বাছাইয়ের বিরুদ্ধে আপিল করা যাবে ২৪ থেকে ২৬ এপ্রিলের মধ্যে। আপিল নিষ্পত্তি হবে ২৭ থেকে ২৯ এপ্রিল। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার ৩০ এপ্রিল। প্রতীক বরাদ্দ ২ মে। এ ধাপের ভোট অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২১ মে।
এর আগে (২১ এপ্রিল) ৩টি উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে মোট ১৪ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১৫ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৯ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন।
তেরখাদা উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন ৩ জন। তারা হলেন- সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শরফুদ্দিন বিশ্বাস বাচ্চু, উপজেলা যুবলীগের সদস্য আলমগীর হোসেন ও জেলা মৎস্যজীবী লীগের সহ-সভাপতি আবুল হাসান শেখ। তবে এবার বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান মো. শহীদুল ইসলাম এবার প্রার্থী হননি। এ উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
ফুলতলা উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন ৬ জন। তারা হলেন- পদত্যাগ করা উপজেলা চেয়ারম্যান ও ফুলতলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ আকরাম হোসেন, তার ভাই শেখ আকতার হোসেন, খানজাহান আলী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ আবিদ হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য বিলকিছ আক্তার ধারা, উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মো. সাব্বির হোসেন, উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সর্দার আলাউদ্দিন মিঠুর স্ত্রী জুবাইদা খান সুরভি। এরমধ্যে আজ যাচাই-বাছাইয়ে শেখ আকরাম হোসেনের প্রার্থিতা বাতিল করা হয়েছে।
এ উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
দিঘলিয়া উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ৫ জন। তারা হলেন- বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মারুফুল ইসলাম, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা মো. মহিউদ্দিন মল্লিক, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোল্লা আকরাম হোসেন, আওয়ামী লীগের মো. জাকির হোসেন ও উপজেলা শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক গাজি মো. এনামুল হাসান মাসুম। এ উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৭ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।
রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, তেরখাদা উপজেলায় মোট ভোটার ১ লাখ ৩ হাজার ৭৬৮ জন এবং ভোট কেন্দ্র ৪৩ টি। দিঘলিয়া উপজেলায় মোট ভোটার ১ লাখ ৩০ হাজার ৭৪৮ জন এবং ভোট কেন্দ্র ৫২ টি। এছাড়া ফুলতলা উপজেলায় মোট ভোটার ১ লাখ ১৫ হাজার ১৮৭ জন এবং ভোট কেন্দ্র ৪৩ টি।
প্রসঙ্গত, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ফুলতলা উপজেলা চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ আকরাম হোসেন।
খুলনা গেজেট/এমএম