শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার বলেছেন, পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে দেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য যোগ্য উপাচার্যদের খুঁজে নেওয়া হবে। বুধবার (৪ জুন) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন তিনি।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব সিদ্দিক জোবায়ের এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব খ ম কবিরুল ইসলাম।
শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, উপাচার্য নিয়োগে নানা অসঙ্গতির কারণে আমরা ক্ষেত্রে একটি বোর্ড তৈরি করেছি। আমরা উপাচার্য নির্বাচনের জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেব। এতে আগ্রহীরা আবেদন করবেন। এরপর যথাযথ প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যোগ্যদের উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, সামান্য ভুল নিয়েও শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দিতে আমার মন সায় দিচ্ছে না। যতটা সম্ভব নির্ভুল বই দিতে চাই। এজন্য আমরা কাজ করছি। দেশে বেকার সমস্যা সমাধানে কারিগরি শিক্ষার ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে। এ নিয়ে মন্ত্রণালয়ও নানা উদ্যোগ নিচ্ছে। আমরা চামড়া শিল্প, ওষুধ শিল্প, সিরামিক শিল্পসহ নানা খাতের শিল্প বিশেষজ্ঞ ও প্রতিনিধি নিয়েও আলাপ আলোচনা করেছি। আমরা মনে করি কারিগরি শিক্ষায় নারীদের অংশগ্রহণ সীমিত। বিষয়গুলো সমাধানে আমরা কাজ করবো।
শিক্ষা উপদেষ্টা আরও বলেন, আমরা যদি নতুন স্বপ্ন দেখি, যদি নতুন পরিকল্পনা করি, সেখানে প্রযুক্তির বিষয় থাকবে, অন্তর্ভুক্তির বিষয় থাকবে; সেখানে দায়, দরদ, ইনসাফ যে শব্দগুলোই ব্যবহার করতে চান না কেন, …নিশ্চয়ই বর্তমানের যে শিক্ষাক্রম তার থেকে মুক্তচিন্তা করতে হবে। সেটা যেন করা সম্ভব হয়, তার জন্য নিজেদের ও অংশীজনদের মধ্যে আলোচনা এবং জাতীয় ঐকমত্যের বোধ হয় একটা প্রয়োজন রয়েছে।
২০১২ সালের শিক্ষাক্রম বিশেষ পরিস্থিতিতে পুনর্বহাল করা হয়েছিল উল্লেখ করে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, আগামী বছরও সেটা থাকবে। তবে নিজের দায়িত্বের মেয়াদকালে মাধ্যমিকের শিক্ষাক্রমের ভিত করে যেতে পারবেন বলে মনে করছেন।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব সিদ্দিক জোবায়ের বলেন, ২০২৭ সালে যাতে ষষ্ঠ শ্রেণি নতুন শিক্ষাক্রমের আওতায় আসে, সে বিষয়ে কাজ করা হচ্ছে। তাঁরা মনে করছেন একসঙ্গে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষাক্রম পরিবর্তন করা সুচিন্তিত নয়। দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত ক্রমান্বয়ে নতুন শিক্ষাক্রমের আওতায় যাবেন। তাঁরা ২০২৭ সালের জন্য শুরু করে যাবেন।
এনসিটিবি সূত্রে জানা গেছে, পরিমার্জিত শিক্ষাক্রমের বিষয়ে তারা প্রাথমিক পর্যায়ের কিছু কাজ শুরু করছে। সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষাক্রম নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আগামী ১ জুলাই থেকে কলেজ পর্যায়ে শিক্ষকদের বদলির কাজ অনলাইনে শুরু করা হবে। একই আদলে কয়েক মাসের মধ্যে বিদ্যালয় পর্যায়েও তা চালু করা হবে।
বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসর ও কল্যাণ-সুবিধার জন্য সরকার ২ হাজার কোটি টাকার বন্ড ও ২০০ কোটি টাকা নগদ বরাদ্দ করেছে বলে জানান শিক্ষা উপদেষ্টা।
গত বছর পর্যন্ত প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী শিক্ষা কার্যক্রম চলেছে। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী এ বছর চতুর্থ, পঞ্চম ও দশম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালুর মধ্য দিয়ে মাধ্যমিক পর্যন্ত সব শ্রেণিতেই তা চালুর কথা ছিল; কিন্তু জুলাই অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাক্রম বাতিল হয়ে যায়। তার পরিবর্তে ২০১২ সালের শিক্ষাক্রম পুনর্বহাল করা হয়েছে। তবে প্রাথমিকে কার্যত নতুন শিক্ষাক্রমই বহাল রাখা হয়েছে। আগামী বছরের নতুন পাঠ্যবই তার আলোকেই দেওয়া হবে। ইতিমধ্যে বিদ্যমান পাঠ্যবই পরিমার্জনের কাজও প্রায় শেষ করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)।
খুলনা গেজেট/এএজে