রাজধানীর নয়াপল্টনে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে মকবুল নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। তবে তিনি বিএনপির কর্মী কি না তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বুধবার (৭ ডিসেম্বর) বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে ওই ব্যক্তিকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে জরুরি বিভাগে নিয়ে আসা হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক পৌনে ৪টার দিকে তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
মকবুলকে উদ্ধার করে নিয়ে আসা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের প্রচার সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বিএনপি কার্যালয়ের সামনে থেকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে এলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। গুলিবিদ্ধ ব্যক্তির পকেটে থাকা মোবাইল ফোন থেকে পরিবারের সঙ্গে কথা বলে তার নাম মকবুল হোসেন।
ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া বলেন, নয়াপল্টন থেকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় একজনকে ঢামেকে নিয়ে আসা হয়েছিল। পরে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এছাড়া পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে বিএনপির অন্তত ২১ নেতাকর্মী গুলিবিদ্ধ হয়েছে। গুলিবিদ্ধ নেতাকর্মীদের নিতে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দুটি অ্যাম্বুলেন্স আনা হয়েছে। আজ বুধবার পৌনে ৩টার দিক থেকে পুলিশের সঙ্গে বিএনপির এ সংঘর্ষ শুরু হয়।
গুলিবিদ্ধ ২১
সংঘর্ষের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২১ জনের গুলিবিদ্ধ হওয়ার সংবাদ পাওয়া গেছে। গুলিবিদ্ধ হয়ে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি হয়েছেন মো. রবিন খান, মো. আনোয়ার ইকবাল (বোরহান উদ্দিন কলেজ ছাত্রদল), মো. খোকন, মো. মনির হোসেন, মো রাশেদ (পল্টন থানা যুবদল), মো. ইয়াসির আরাফাত (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল, জসীমউদ্দীন হল), মো. সুমন (ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রদল), মো. জহির হাসান (ছাত্রদল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়), মো. শামীম (রূপনগর থানা স্বেচ্ছাসেবক দল), মো হানিফ, মো. হৃদয় (কদমতলী থানা স্বেচ্ছাসেবক দল), মো. মকবুল হোসেন (কদমতলী থানা স্বেচ্ছাসেবক দল), মো. ফারহান আরিফ (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মুজিব হলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক), মো. নূরনবী (শাহবাগ থানা যুবদল), মো. সুলতান আহমেদ (শাহ আলী থানা যুবদল), মনির (শাহবাগ থানা যুবদল), মো. আমিনুল ইসলাম (শেরেবাংলা নগর থানা যুবদল), মো. আশরাফুল ইসলাম (গুলশান থানা ছাত্রদল), বিপ্লব হাওলাদার (ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রদল), মো. আসাদুজ্জামান (ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রদল), মো. মেহেদী হাসান নয়ন (ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদল)।
জানা গেছে, ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশকে ঘিরে দুদিন ধরে নয়াপল্টন কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়েছিল কয়েক শতাধিক বিএনপি নেতাকর্মী। আজও সকাল থেকেই নেতাকর্মীরা দলীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে নানা স্লোগান দিতে থাকে। বেলা ৩টার দিকে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের উত্তেজনা দেখা দেয়। একপর্যায়ে পুলিশ টিয়ার শেল নিক্ষেপ শুরু করে। বিএনপি নেতাকর্মীরাও পাল্টা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে জবাব দেয়। শুরু হয় দুপক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। পুলিশের সঙ্গে যোগ দেয় স্পেশাল বাহিনী সোয়াতও। প্রায় আধা ঘণ্টাব্যাপী চলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। পুরো নয়াপল্টন এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পুলিশের লাগাতার টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপে টিকতে না পেরে পিছু হটে বিএনপি নেতাকর্মীরা। আশপাশের গলিতে অবস্থান নেয় তারা।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম কমিশনার (অপারেশন) বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে যা যা ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজন পুলিশ সে ব্যবস্থা নিয়েছে। কারণ আমাদের ফার্স্ট প্রায়োরিটি হচ্ছে জনগণের জান-মালের নিরাপত্তা। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বজায় রাখার জন্য ও নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য যত ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজন ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার স্যারের নির্দেশে সে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে এবং করে যাব।’
এ পর্যন্ত কতজনকে আটক করা হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, ‘এ মুহূর্তে আমরা অ্যাকশন মুডে আছি, অ্যাকশন মুডে থাকার সময় এ ধরনের কথা বলা যাবে না।’
পুলিশের কেউ আহত হয়েছে কি না, এ বিষয়ে ডিএমপির এ কর্মকর্তা বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমরা অন অ্যাকশন, সো অ্যাকশনের পরে কথা বলব।’
এদিকে, সংঘর্ষ শুরুর পর বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ বানচাল করতে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থানরত নিরীহ নেতাকর্মীদের ওপর গুলি ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করা হয়েছে। এতে বহু নেতাকর্মী আহত হয়েছে। যত হামলা করা হোক আগামী ১০ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে বিএনপির শান্তিপূর্ণ সমাবেশ হবে।’
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘সরকারের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশে নিরীহ নেতাকর্মীদের ওপর পুলিশের এই গুলি সম্পূর্ণ পরিকল্পিতভাবে করা হয়েছে। তাদের গুলিতে তিতুমীর কলেজের ছাত্রদলের আলদীন, জুয়েল, আরিফ, নিয়াজ, মুর্শেদ গুলিবিদ্ধ হয়েছে। তাদের শরীর থেকে ব্যাপক রক্তক্ষরণ হচ্ছে। তারা নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অবরুদ্ধ, তাদের হাসপাতালে নেওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্স খবর দেওয়া হয়েছে।’
খুলনা গেজেট/ এমএম