সরকার পদত্যাগের একদফা দাবিতে ধারাবাহিক আন্দোলন করে আসা প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপি আগামী ২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে মহাসমাবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছে। শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি শেষ করতে সহযোগিতা চেয়ে এরই মধ্যে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাছে চিঠিও দিয়েছে দলটি।
কিন্তু পুলিশের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, সমাবেশ করতে চাইলে নয়াপল্টনে নয়, গোলাপবাগেই যেতে হবে বিএনপিকে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ নানা বিষয় বিবেচনায় রেখে তাদের নয়াপল্টনে মহাসমাবেশের অনুমতি দেওয়া হবে না বলে জানা গেছে।
এর আগে গত ১৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে অনুষ্ঠিত এক সমাবেশ থেকে ২৮ তারিখের মহাসমাবেশের ঘোষণা দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সে সময় তিনি জানান, এই মহাসমাবেশ থেকেই বিএনপির আন্দোলনের মহাযাত্রা শুরু হবে এবং সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত তারা থামবেন না।
মির্জা ফখরুল বলেন, অনেক বাধা আসবে, অনেক প্রতিবন্ধকতা আসবে। সমস্ত বাধা-বিপত্তিকে অতিক্রম করে জনগণের অধিকার আদায়ের জন্য আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে।
বর্তমান সরকারের পদত্যাগ ও নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে গত ১২ জুলাই একদফা আন্দোলনের ডাক দেয় দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি। পরে অক্টোবরেই আন্দোলন ‘চূড়ান্ত পর্যায়ে’ নিয়ে যাওয়ার কথা বলেছিলেন দলটির শীর্ষ নেতারা। পরবর্তীতে ২০ থেকে ২৪ অক্টোবর দুর্গাপূজার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে পূজা শেষে ‘চূড়ান্ত’ আন্দোলনে নামার কথা জানায় বিএনপি ও সমমনারা।
২৮ অক্টোবরের বৃহৎ এই কর্মসূচি সফল করতে সব ধরনের বাধা-বিপত্তি ডিঙিয়ে সারা দেশের নেতাকর্মীদের মহাসমাবেশে যোগ দিতে ইতোমধ্যেই নির্দেশনা দিয়েছেন বিএনপি নেতারা। জানা গেছে, বিএনপির অঙ্গ-সংগঠন এবং জেলার নেতাদের সতর্ক থেকে সর্বোচ্চ কর্মীদের নিয়ে সমাবেশে যোগ দিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে এদিন সরকার পতনের দাবিতে বসে যাওয়ার কোনো চিন্তা নেই। সরকারের পদক্ষেপের ওপর নির্ভর করে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করবে বিএনপি।
সরকারবিরোধী আন্দোলনে পৃথকভাবে মাঠে নেমেছে জামায়াতও। তারাও ২৮ অক্টোবর রাজধানীর শাপলা চত্বরে সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে। সমাবেশে সহযোগিতা চেয়ে ডিএমপিকে সোমবার চিঠিও দিয়েছে দলটি। বিএনপির সঙ্গে জোট বেঁধে আন্দোলন না করলেও পৃথকভাবে জামায়াত মাঠে থাকায় নিজেদের আন্দোলন এগিয়ে নিতে আলাদা মনোবল পাচ্ছে বিএনপি। বিএনপি ও জামায়াতের রাজনৈতিক এই কর্মসূচি কেন্দ্র করে সবার চোখ এখন ২৮ অক্টোবরের দিকে। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে সেটার অনেকটাই নির্ভর করছে এই কর্মসূচির ওপর।
এদিকে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও ঘোষণা দিয়ে রেখেছে মহাসমাবেশ কেন্দ্র করে যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। দাঁতভাঙা জবাব দেবেন তারাও।
অন্যদিকে, বিএনপি-জামায়াতের কর্মসূচি ঘিরে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) প্রধান মুহাম্মদ হারুন অর রশিদ অবশ্য আগেই জানিয়েছেন, ঢাকায় ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে নাশকতার কোনো আশঙ্কা নেই। তবে পুলিশের কঠিন চেকপোস্ট ও অভিযান অব্যাহত থাকবে।
খুলনা গেজেট/ টিএ