নাফিস আশরাফ। তিন ভাইয়ের মধ্যে বড়। বাবা আশরাফুল হক শামীম একজন ব্যবসায়ী। মা মোসা. রেশমিনা খানম নড়াইল ভাওয়াখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। তাদের স্বপ্ন ছিল বড় ছেলে নাফিস আশরাফ চিকিৎসক হবে। সেই স্বপ্ন আজ বাস্তবায়নের পথে। ৪ এপ্রিল এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় নাফিস বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজে পড়ার সুযোগ পেয়েছে। মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়ে তিনি আবেগাপ্লুত।
নাফিস আশরাফ বলেন, নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেছি। ছোট থেকে বাবা-মা আমার জন্য খুব কষ্ট করেছেন। বাবার প্রচেষ্টা আর মায়ের পরিশ্রম আজ কাজে লেগেছে। বাবা-মা ও শিক্ষকদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আজ আমার সফলতা। স্বপ্ন আজ বাস্তবে রূপ নিতে যাচ্ছে। কেমন লাগছে তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। সবার কাছে শুধু দোয়া চাই।
নাফিসের বাবা আশরাফুল হক শামীম বলেন, স্বপ্ন ছিল ছেলেকে ডাক্তার বানাব। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে। খুবই ভালো লাগছে। তবে তার লেখাপড়ার পেছনে মায়ের অবদান বেশি। সেই তাকে বেশি দেখভাল করত। এ ছাড়া শিক্ষকদের পরিশ্রম ও প্রচেষ্টা তো আছেই।
নাফিস আশরাফের মতোই নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের আরেক শিক্ষার্থী সাহরুখ শহিদ জারিফ। তিনিও এবার মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় ঢাকার মুগদা মেডিকেল কলেজে চান্স পেয়েছেন।
জারিফ বলেন, খুবই ভালো লাগছে। আব্বু-আম্মুর ইচ্ছা ছিল সরকারি মেডিকেলে যাতে চান্স পায়। নিজেরও প্রত্যাশা ছিল। এখন সেটি পূরণ করতে পেরে খুবই ভালো লাগছে। চিকিৎসক পেশায় মানুষকে সেবার করার একটি মোক্ষম সুযোগ রয়েছে। আমার সফলতার পেছনে আব্বু-আম্মু, বড় বোন এবং শিক্ষকদের অবদান রয়েছে।
শুধু নাফিস বা জারিফ নয়, ২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষে নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে মেডিকেলে পড়ার সুযোগ পেয়েছেন ১৮ জন শিক্ষার্থী।
এই কলেজ থেকে মেডিকেলে সুযোগ পাওয়া অন্য শিক্ষার্থীরা হলেন- খুলনা মেডিকেল কলেজে অঙ্কিতা ও আদরিতা সাহা, ঢাকা মেডিকেল কলেজে সানজিদা সুপ্তি, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে ফালগুনি আহমেদ, মুগদা মেডিকেল কলেজে আনা, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজে বুশরা, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে ইমন ও নুর নাহার, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে মুমু, রাজশাহী মেডিকেল কলেজে রুতবা ও আব্দুল্লাহ আল মামুন, বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজে আনিকা আলিম, ফরিদপুর মেডিকেল কলেজে হাবিবা, দিনাজপুর মেডিকেল কলেজে মাহি, গোপালগঞ্জ মেডিকেল কলেজে অনুরাধা ও রাঙামাটি মেডিকেল কলেজে নুর আলম।
নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের অধ্যক্ষ রবিউল ইসলাম বলেন, পদ্মার এপারের কলেজটি সব চেয়ে পুরাতন এবং ঐতিহ্যবাহী। এখানে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত আয়ের পরিবারের সন্তানরা বেশি লেখাপড়া করে। তবুও কলেজটি তার ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। গত ২/৩ বছর ধরে মেডিকেল পরীক্ষা, ইঞ্জিনিয়ারিং, বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় এই কলেজের শিক্ষার্থীরা ভালো ফলাফল করে আসছে। এ বছরও মেডিকেলে সেই সুনাম রেখেছে কলেজের শিক্ষার্থীরা।
৪ এপ্রিল মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর আমরা খবর নিয়ে জানতে পেরেছি কলেজ থেকে এ বছর ১৮ জন শিক্ষার্থী দেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে পড়ার সুযোগ পেয়েছে। শিক্ষকরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশে। শিক্ষকদের প্রচেষ্টায় শিক্ষার্থীদের সফলতা আসছে। তিনি শিক্ষার্থীদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করেন।
তিনি বলেন, এই কলেজে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক নড়াইলের কৃতি সন্তান সংসদ সদস্য মাশরাফি মোর্ত্তুজা লেখাপড়া করেছে। গত কয়েক বছরে কলেজের অবকাঠামোগত উন্নয়নে তার হাতের ছোঁয়া রয়েছে। এ ছাড়া এখানকার জনপ্রতিনিধিরা কলেজের উন্নয়নে এগিয়ে এসেছেন।
কলেজের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজ বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী শতবর্ষী কলেজ। নড়াইলের জমিদার রামরতন রায়ের উদ্যোগে ১৮৫৭ সালের জানুয়ারি মাসে এখানে উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয়। বর্তমানে যা ভিসি স্কুল নামে পরিচিত। পরবর্তীতে রামরতন বাবুর ছেলে চন্দ্রকান্ত ১৮৮৬ সালে এই প্রতিষ্ঠানে এফএ শ্রেণিতে পাঠদানের অনুমতির জন্য কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের কাছে আবেদন করেন। ১৮৮৬ সালে ২৫ এপ্রিল ভারত সরকারের ১৬২ নম্বর মেমোতে এ অনুমতি দেওয়া হয়। এর মধ্যদিয়ে ১৮৮৬ সালে ২৫ এপ্রিল চিত্রা নদীর তীরে সবুজ চত্বরে মহারাণী ভিক্টোরিয়ার নামানুসারে কলেজটির যাত্রা শুরু হয়।
১৯৮০ সালের ১ মার্চ কলেজটি জাতীয়করণের মাধ্যমে সরকারি কলেজে পরিণত হয় এবং নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজ নামে পরিচিতি লাভ করে। ১৯৯৭-১৯৯৮ শিক্ষাবর্ষে বাংলা, দর্শন, ব্যবস্থাপনা ও গণিত বিষয়ে অনার্স কোর্স খোলার মধ্যদিয়ে কলেজ নবযাত্রা লাভ করে। পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে ইংরেজি, অর্থনীতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ইতিহাস, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, উদ্ভিদবিজ্ঞান, প্রাণিবিজ্ঞান, হিসাববিজ্ঞান, পদার্থবিজ্ঞান ও রসায়ন বিষয়ে অনার্স কোর্স চালু হয়। বর্তমানে বাংলা, দর্শন, ব্যবস্থাপনা ও গণিত এই ৪টি বিষয়ে স্নাতকোত্তর কোর্স চালু রয়েছে। বর্তমানে কলেজটিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৮ হাজার ৬৬১ জন।
খুলনা গেজেট/এনএম