খুলনা, বাংলাদেশ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২২ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ডেঙ্গুতে একদিনের ৯ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১ হাজার ২১৪
আমন মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার বেশি চাষাবাদ

ন্যায্যমুল্য না পেয়েও স্বপ্ন বুনে কৃষক

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রতি বছর নতুন আশায় স্বপ্ন বুনে কৃষক, তার বীজতলায়। বৃষ্টিতে ভিজে, রোঁদে পুড়ে, মাথার ঘাঁম পায়ে ফেলেও উৎপাদিত ধানের ন্যায্য মূল্য পায় না কৃষক। আমন মৌসুমে ফের ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা তাদের। এবার খুলনাতে লক্ষ্যমাত্রার অতিরিক্ত আমন চাষাবাদ করছে কৃষক।

কবি রাজিয়া খাতুন চৌধুরাণী ‘চাষী’ কবিতায় যথার্থই বলেছেন-

“সব সাধকের বড় সাধক আমার দেশের চাষা,
দেশ মাতারই মুক্তিকামী, দেশের সে যে আশা।
দধীচি কি তাহার চেয়ে সাধক ছিল বড়?
পুণ্য অত হবে নাক সব করিলে জড়।”

ডুমুরিয়া, বটিয়াঘাটা ও কয়রার কয়েকজন কৃষক জানান, দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর পূর্বাঞ্চল, মধ্যাঞ্চলের (মিলিয়ে অন্তত ৩১ জেলার বিস্তীর্ণ) নিম্নাঞ্চল বানের পানিতে ভাসছে। করোনা পরিস্থিতি। এ অবস্থায় যাতে ধান/চালের সংকট না হয় সে জন্য উৎপাদন বৃদ্ধির চেষ্টা করছেন তারা। খাদ্য বাড়তি যোগানের কথা কেউ বলে দেননি তাদের, নিজে থেকেই উৎপাদন বৃদ্ধির চেষ্টা করছেন বলে দাবি তাদের।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খুলনার উপ-পরিচালক মোঃ হাফিজুর রহমান বলেন, খুলনাতে ৯২ হাজার ৫২০ হেক্টর জমিতে আমন চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এটা অতিক্রিম করবে বলে আশা করছি। ইতোমধ্যে ২০ হাজার হেক্টরের অধিক রোপন করেছে কৃষকরা। শুধু বীজতলা হয়েছে ৫ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে। যেখানে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ হাজার ৯০০ হেক্টর। এ বছর আবহাওয়া ধান চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। ধানের দামও তুলনামুলক বেশি। সে কারণে কৃষকরা ধান চাষে সাধ্যমতো আত্মনিয়োগ করেছেন। সাধারণতঃ সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত চাষাবাদ চলে। নভেম্বরের শেষ থেকে ডিসেম্বরে কৃষকের ঘরে নতুন ধান উঠবে। তবে প্রায় প্রতিবছর ধান উঠার পূর্ব মুহুর্তে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘূর্ণিঝড়ে ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করে দেয়।

তিনি আরও বলেন, আউশ চাষাবাদ হয়েছে ৩ হাজার ৬০০ হেক্টর। এরমধ্যে উচ্চ ফলনশীল (উফশী) ৬০০ হেক্টর ও স্থানীয় জাতের তিন হাজার হেক্টর জমিতে। আউশের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে। গত বছর খুলনাতে আউশ চাষাবাদ হয়েছিল তিন হাজার ২০০ হেক্টর। এছাড়া ৬ হাজার ৩৬৩ হেক্টর জমিতে বোনা আমন আছে। কৃষকরা এক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত নিচু জমিতে ধান বুনে দেয়; পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে ধানও বাড়ে। এটাকে বোনা আমন বলা হয়। আউশ ধান কৃষকের ঘরে উঠেছে।

খুলনায় গত বছর আমন ধানের বাম্পার ফলন হলেও চাষীরা ন্যায্যমূল্য পায়নি। প্রতি মণ ধান উৎপাদনে ৭৫০ থেকে ৮০০টাকা খরচ হলেও বাজারে বিক্রি হয়েছিল ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা দরে। প্রতি মণ ধানে লোকসান গুনতে হয়েছে দেড় থেকে দুইশ’ টাকা।

ক্ষতি পুষিয়ে নিতে খুলনায় চাষীদের কাছ থেকে সরাসরি প্রতি মণ ১০৪০টাকা দরে ধান কিনেছিল খাদ্য বিভাগ। তবে সে সুফল পেয়েছেন হাতে গোনা ক’জন। খুলনা অঞ্চলে গত আমন মৌসুমে ৯১ হাজার ৮৮০ হেক্টর জমিতে চার লাখ মেট্রিক টনের বেশি ধান হলেও খাদ্য বিভাগ কিনেছে মাত্র ৯ হাজার ১২০ মেট্রিক টন ধান। সুফলপ্রাপ্ত একজন কৃষক সর্বোচ্চ তিন মেট্রিক টন ধান বিক্রি করতে পেরেছিলেন।

বটিয়াঘাটার জলমা ইউনিয়নের কৃষক মোঃ সাইদুল ইসলাম জানান, বাজারে ধান বিক্রি করতে গেলে, দাম পাই না। আবার, সারা বছর চালের দাম থাকে চড়া। আসলে কৃষক বাঁচাতে কেউ ব্যবস্থা নেয় না।

কৃষকদের অভিযোগ, ফড়িয়া ও দালালের কারসাজিতে ধানের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হন তারা। আমন কাটা শুরু হলে চালকল মালিকরাই ধানের দাম নিয়ন্ত্রণ করে। বাজারে ধান ওঠার পর সিন্ডিকেট করে তারা কোনো ধান কেনেন না। এতে বাজারে ধানের দাম পড়ে (কমে) যায়।

জেলা বাজার কর্মকর্তা আব্দুস সালাম তরফদার বলেন, অধিকাংশ চাষী ধার-দেনা করে জমিতে ফসল ফলান। ধান কাটার পরপর চাষিদের তাৎক্ষণিক প্রয়োজন মেটাতে সুদমুক্ত ঋণের ব্যবস্থা করা গেলে তারা সময় নিয়ে ধান বিক্রি করতে পারবেন। এতে ফড়িয়া ও দালালের দৌরাত্ম্য কমবে।

 

খুলনা গেজেট/এআইএন




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!