নোয়াখালী ও কুমিল্লা, চাঁদপুর ও লক্ষীপুরে জেলায় বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। বাকি ৮ জেলার পরিস্থিতি রয়েছে উন্নতির দিকে। বন্যার পানিতে ডুবে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৩। এ ছাড়া প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৫৭ লাখ মানুষ।
নোয়াখালী : প্রবল বর্ষণ ও উজানের ঢলে নোয়াখালী জেলার বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। জেলার প্রায় ২০ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে খাদ্যসংকটে মানবেতর জীবন যাপন করছে। বন্যার পানিতে এ পর্যন্ত পাঁচজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। অন্যদিকে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার মুছাপুর রেগুলেটর ধসে যাওয়ায় বাসিন্দাদের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।
দুই দিন বন্ধ থাকার পর রবিবার রাত থেকে বৃষ্টি বেড়ে যাওয়ায় মানুষের দুর্ভোগ অনেক বেড়ে গেছে। বন্যাদুর্গত এলাকায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্যসংকট। অন্যদিকে বেড়েছে সাপের উপদ্রব। তিন দিনে জেলায় ৬৩ জনকে সাপে কেটেছে।
এর মধ্যে ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে সাপে কেটেছে ২৮ জনকে। বন্যার কারণে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছে ১০৮ জন।
বন্যাকবলিত বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, জেলার আটটি উপজেলার প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছে। প্রতিটি বাড়িতে তিন থেকে পাঁচ ফুট জলাবদ্ধতা। ঘরে পানি প্রবেশ করায় বাসিন্দারা আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে।
এলাকার সব বিদ্যালয় খুলে দেওয়া হয়েছে। বসত ও রান্নাঘরে পানি ঢুকে পড়ায় খাবার সংকটে রয়েছে বেশির ভাগ মানুষ। জেলার প্রধান সড়কসহ প্রায় ৮০ শতাংশ সড়ক কয়েক ফুট পানির নিচে তলিয়ে গেছে। সব বীজতলা ও ফসল পানিতে ডুবে রয়েছে। বন্যার পানি ঢুকে পড়ায় বেশির ভাগ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে। সড়কগুলোয় যান চলাচল অনেকটাই কম।
এদিকে গতকাল ভোরে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার মুছাপুর ইউনিয়নের ২৩ ভেন্ট রেগুলেটরটি সম্পূর্ণ ভেঙে গেছে। এতে সাগর থেকে লোকালয়ে জোয়ার প্রবেশ করে সমগ্র এলাকা প্লাবিত হওয়ার আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
কুমিল্লা : কুমিল্লা জেলার বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। জেলার ১৭টি উপজেলার মধ্যে ১৪টিতেই ভয়াবহ রূপ নিয়েছে বন্যা। জেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, ১৪ উপজেলায় পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা প্রায় ১০ লাখ। মানুষ প্রাণ বাঁচাতে ছুটছে আশ্রয়ের খোঁজে। অনেকে বিভিন্ন মাধ্যমে জানাচ্ছে উদ্ধারের আকুতি। কিন্তু নৌকাসংকটে অনেককে উদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছে না।
এদিকে, গোমতী নদীর পানি কিছুটা কমলেও এখনো বিপৎসীমার ৪২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি ভয়াবহতা সৃষ্টি করছে জেলার বুড়িচং উপজেলায় ভেঙে যাওয়া নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ দিয়ে প্রতিনিয়ত স্রোতের মতো লোকালয়ে পানি প্রবেশ করা। এতে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির সংকট।
এদিকে জেলার দক্ষিণাঞ্চলের মনোহরগঞ্জ, লাকসাম ও নাঙ্গলকোট উপজেলায় বেড়েছে বন্যার পানি। রবিবার রাত থেকে অনবরত বৃষ্টি হতে থাকায় এসব এলাকার মানুষ আতঙ্কে দিন পার করছে।
লক্ষ্মীপুর : লক্ষ্মীপুরে টানা বৃষ্টি ও বন্যার পানি ঢুকে প্রায় আট লাখ মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ২৩ হাজার মানুষ আশ্রয়ণ কেন্দ্রে উঠেছে। অন্যদের মধ্যে বেশির ভাগ মানুষ কষ্ট করে বাড়িঘরেই রয়েছে। বাকিরা উজানে আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে ঠাঁই নিয়েছে। নোয়াখালী থেকে অনবরত বন্যার পানি রহমতখালী খাল হয়ে লক্ষ্মীপুরে ঢুকছে। দুর্গম এলাকাগুলোতে পানিবন্দিদের জন্য কোনো খাবার যাচ্ছে না। ত্রাণের জন্য মানুষের হাহাকারের খবর ফেসবুকসহ নানা মাধ্যমে প্রচার করছে মানুষ।
চাঁদপুর : চাঁদপুর সেচ প্রকল্পের ভেতরে জলাবদ্ধতার উন্নতি ঘটতে শুরু করেছে। তবে ধীরগতিতে পানি নামার কারণে এখনো জলমগ্ন বিস্তীর্ণ এলাকা। ক্ষতি হয়েছে ফসলের জমি, মাছের খামার, কাঁচা বসতবাড়িসহ বিভিন্ন স্থাপনা।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া : কসবা ও আখাউড়া উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে দুর্ভোগ বাড়তে শুরু করেছে। পানিতে ঘর ভেঙে যাওয়ায় অনেকেই এখনো অন্যের বাড়িতে থাকছে। কিছু মাটির ঘর পানিতে নরম হয়ে যাওয়ায় ভয়ে অনেকে উঠছে না। বীজতলা ও চারার ক্ষতি হওয়ায় দুশ্চিন্তায় আছেন কৃষক। পুকুর থেকে মাছ ভেসে যাওয়ায় লোকসান নিয়ে দুশ্চিন্তায় খামারিরা।
হবিগঞ্জ : খোয়াই, কুশিয়ারাসহ বিভিন্ন নদ-নদীর পানি কমার পর লোকালয়ের পানিও কমেছে। ফলে আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা লোকজন ফিরে যাচ্ছে বাড়িতে। কিন্তু তাদের নামতে হচ্ছে নতুন যুদ্ধে। ঘরবাড়ি নষ্ট হওয়ায় মেরামত করে বসবাসের উপযোগী করতে হচ্ছে। এর মধ্যে অনেকের বাড়ি এখনো বসবাসের উপযোগী না হওয়ায় তাদের থাকতে হচ্ছে আশ্রয়কেন্দ্রেই।