বিভাগীয় শহর খুলনা থেকে প্রকাশিত খুলনা গেজেট এর আজ চতুর্থ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী, পদার্পন করলো পঞ্চম বর্ষে। গত চার বছর এ পত্রিকাটি অব্যাহতভাবে বৃহত্তর খুলনাসহ সারা দেশের সংবাদ বস্তুনিষ্ঠভাবে পরিবেশন করে আসছে। নানা রকম বাধা ও নিয়ন্ত্রণমূলক আইনের মধ্যেও খুলনা গেজেট নির্ভিকভাবে এর দায়িত্ব নিষ্ঠার সাথে পালন করে চলেছে। এ কারণে গত চার বছরে পত্রিকাটির পাঠকসংখ্যা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন খুলনা গেজেটকে এতদঞ্চল থেকে প্রকাশিত একটি জনপ্রিয় অনলাইন পত্রিকা বলা যায়।
পত্রিকাটির সম্পাদক এবং কমকর্তাগণের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে এ জনপ্রিয়তা অর্জন করা সম্ভব হয়েছে। আমি নিজেও এ পত্রিকার একজন নৈমিত্তিক পাঠক। মাঝেমধ্যে আমি পত্রিকাটিতে লিখেও থাকি। এ কারণে আমি পাঠক এবং লেখক হিসেবে দেখেছি, সমসাময়িক রাজনীতি ও অন্যান্য প্রসঙ্গ এ পত্রিকাটিতে বস্তুনিষ্ঠভাবে উপস্থাপিত হয়। আমি চতুর্থ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে খুলনা গেজেট এর সম্পাদক ও এর সকল সংবাদকর্মী ও কলাকুশলীদের আন্তরিক অভিনন্দন জানাই।
বিভাগীয় শহর থেকে প্রকাশিত প্রিন্ট ভার্সন পত্রিকা জরিপ করে বলা যায়, চট্টগ্রামের চেয়ে খুলনা এ ক্ষেত্রে অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে। চট্টগ্রাম থেকে বৃহৎ কলেবরে পাঁচটি দৈনিক প্রকাশিত হলেও খুলনা থেকে ওই রকম মানের ও আকৃতির কোনো প্রিন্ট ভার্সন পত্রিকা প্রকাশিত হয় না। এখানকার পত্রিকাগুলো চার পৃষ্ঠার। অধিকাংশ পত্রিকায় কলামের পাতা নেই। অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ছাপা হয় না। এ কারণে খুলনার লেখক সমাজও পিছিয়ে আছেন। তারা কোথায় লেখা প্রকাশ করবেন? বাধ্য হয়ে তাদেরকে ঢাকার পত্রিকায় প্রকাশের জন্য লেখা জমা দিতে হয়। রাজধানীর বড় বড় শিল্পগোষ্ঠীর এক বা একাধিক পত্রিকা রয়েছে। তবে খুলনায়ও আকিজ আফিলসহ আরো উল্লেখ করার মত শিল্পগোষ্ঠী রয়েছে। কিন্তু এদের টাকা থাকলেও রুচি নেই। এজন্য এরা খুলনা থেকে একটি মানসম্পন্ন পত্রিকা প্রকাশের উদ্যোগ নেননি।
খুলনার রাজনৈতিক নেতৃত্ব এ বিভাগীয় শহরকে তিলোত্তমা নগরী হিসেবে গড়ার কথা বলেন। খুলনার উন্নয়নের জন্য কাজ করছেন বলে দাবি করেন। খুলনার রাস্তায় সুয়্যারেজ লাইন বসান। কিন্তু দুঃখের বিষয়, খুলনা বিভাগীয় শহর হলেও এ শহরে একটি মানসম্পন্ন বইয়ের দোকান নেই, বিমান বন্দর নেই, টিভি স্টেশন নেই, ভালো পার্ক বা বিনোদনকেন্দ্র নেই। নেই অত্যাধুনিক হাসপাতাল। অথচ এখানকার রাজনৈতিক নেতৃত্ব খুলনার সড়ক উঁচু করে এবং সে সড়কের ফুটপাথে টাইলস বসিয়ে এ শহরকে আধুনিক করতে চাইছেন। দুঃখের সাথে বলতে হয়, খুলনাকে উন্নত করতে এ শহরে একাধিক খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম কমিটি থাকলেও তাদের কাজ সুসংগঠিত নয়।
প্রতিষ্ঠলগ্ন থেকে খুলনা গেজেট খুলনার বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে। আমি নিজেও এ পত্রিকায় যে সব লেখা দিয়েছি তা প্রকাশ করা হয়েছে। আমার লেখা অনেক সাহসী প্রতিবেদনও এ পত্রিকা প্রকাশ করতে দ্বিধা করেনি। এ পত্রিকায় লেখা আমার একটি সাক্ষাৎকার এবং কতিপয় লেখা বহুলপঠিত হয়েছে। অনলাইন পত্রিকা হয়েও খুলনা গেজেট খুলনার লেখকদের গঠনমূলক লেখা প্রকাশ করে চলেছে। তবে পত্রিকাটিকে পাঠক হিসেবে আমার ভালো লাগার অন্যতম কারণ হল দ্রুততম সময়ের মধ্যে সমসাময়িক সংবাদ পরিবেশনে এর আন্তরিকতা।
পত্রিকাটির সম্পাদক এবং এর সংবাদকর্মীদের এ জন্য ধন্যবাদ দেওয়া যায়। আমি আন্তরিকভাবে চাই, খুলনা গেজেট ক্রমান্বয়ে অধিকতর পাঠকপ্রিয়তা অর্জন করে একটি প্রিন্ট ভার্সন পত্রিকা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করুক। খুলনার শিল্পপতি এবং বিত্তশালী ব্যক্তিত্বদের আমি সবিনয়ে এ পত্রিকার পাশে দাঁড়াতে অনুরোধ করব। আজ এ পত্রিকার চতুর্থ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উৎযাপিত হচ্ছে। এ অনুষ্ঠানে আমার মতো একজন অবসরপ্রাপ্ত সাধারণ শিক্ষককে যোগদানের আহ্বান জানাবার জন্য আমি পত্রিকার পরিচালকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাচ্ছি। সবশেষে খুলনা গেজেটের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আমি এ পত্রিকার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করছি। উৎসাহ জানাচ্ছি অব্যাহতভাবে পত্রিকাটির নির্ভিক পথ চলাকে।
লেখক : ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার, সাবেক সভাপতি ও অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক, রাজনীতিবিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
খুলনা গেজেট/এমএম