খুলনা, বাংলাদেশ | ২৯ মাঘ, ১৪৩১ | ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

Breaking News

  যতদিন ডেভিল থাকবে ততদিন ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ চলবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  নাসা গ্রুপের কর্ণধার নজরুল ইসলাম ১০ দিনের রিমান্ডে

নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ছাড়া কেউ সংবিধান সংশোধন করতে পারে না : হাফিজ উদ্দিন

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিএনপি’র জাতীয় স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য মেজর (অব:) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীরবিক্রম বলেছেন, রাষ্ট্র পরিচালনা করা অত্যন্ত দুরুহ কাজ। একে সঠিকভাবে পরিচালনা করতে, জনজীবনে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত করতে হয়, তাহলে অবশ্যই একটি নিরপেক্ষ সুষ্ঠু নির্বাচন প্রয়োজন। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ছাড়া কেউ সংবিধান সংশোধন করতে পারে না। জনগনের নির্বাচিত সরকারই পারে দেশের প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে। তাই এবছরের মধ্যেই অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন দেবার আহবান জানিয়েছেন তিনি। যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করার জন্য ‘৭১ এ মহান মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত হয়েছিল। যে গণতন্ত্র আওয়ামী লীগ দেশ থেকে বিতাড়িত করে একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠিত করেছিল। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান জীবনবিপন্ন জেনেই যে স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন; সেটি যেনো বাস্তবে রূপায়িত হয়। সাম্য সামাজিক মর্যাদা, মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত করতে বিএনপি সংগ্রাম করে যাবে।

বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) বিকালে খুলনার শহীদ হাদিস পার্কে খুলনা জেলা বিএনপি’র বিশাল জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখা, অবনতিশীল আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি, দ্রুত গণতান্ত্রিক যাত্রাপথে উত্তরণের জন্য নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা এবং রাষ্ট্রে পতিত ফ্যাসিবাদের নানা চক্রান্তের অপচেষ্টা মোকাবেলাসহ বিভিন্ন জনদাবিতে কেন্দ্র ঘোষিত এ কর্মসূচির আয়োজক খুলনা জেলা বিএনপি।

সাবেক মন্ত্রী হাফিজ উদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, অক্টোবর মাসের মধ্যে শেখ হাসিনার গণহত্যা বিচার হবে উদ্বৃতি দিয়ে বিএনপি নেতা হাফিজ উদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, আমরা আশায় বুক বেঁধে আছি। বাংলাদেশের মানুষ এখনো ভরষা রাখছে; জুলাই গণঅভ্যূত্থানে যারা হাজার হাজার মায়ের বুক খালি করেছে তাদেরকে যেনো কোনো আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র রক্ষা করতে না পারে। সাংবাদিক সাগর-রুনি হত্যাকান্ডের একশ’ ১৫/১৬বার তারিখ পরিবর্তন হয়েছে; আওয়ামী লীগ একটা চার্জশীট পর্যন্ত দিতে পারেনি।

প্রধান বক্তার বক্তৃতায় বিএনপি’র জাতীয় নির্বাহী কমিটির তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল বলেছেন, বিএনপি ১৬ বছর আন্দোলনের আগুনে পুড়ে খাটি সোনায় পরিনত হয়েছে। কোন ধরণের ভয় দেখিয়ে লাভ হবে না। চারিদিকে প্রতিবিপ্লব উঁকিঝুঁকি মারছে, তবে সেটা হতে দেয়া হবে না। সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে বিপ্লব ও গণতন্ত্রের প্রত্যাশা বাস্তবায়ন করতে হবেএ অন্তরর্বতী সরকার আমাদের আন্দোলনের ফসল সেই সরকারকে কোনভাবেই ব্যর্থ হতে দেয়া যাবে না। স্বৈরাচার সরকার যাতে ফিরে আসতে না পারে সেদিকে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।

বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নেতা হেলাল আরো বলেন, সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনতে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ শুরু করেছে। ডেভিল বলতে আমরা ফ্যাসিস্ট সরকারকেই বুঝি। কালবিলম্ব না করে যৌক্তিক সময়ে নির্বাচন দিন, সবাই সাধুবাদ জানাবে। জনগণ অদৃশ্য শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করছে। এই শক্তিকে দৃশ্যমান করতে হবে। একজন (শেখ হাসিনা) ষড়যন্ত্র করে কাপড় নিয়ে দেশে ছেড়ে পালিয়েছেন। এখন যারা নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র করছেন তারা আগামী দিনে পালানোর পথ পাবেন না। সরকার গঠনের ৬ মাস পরে এই ধরনের বিশৃঙ্খলা কেনো? আমরা তো একটি সভ্য জাতি। এসব বিশৃঙ্খলা দূর করতে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে অন্তবর্তী সরকারকে তিনি বলেন, আপনারা সংষ্কার করুন, তবে যৌক্তিক সময়ের ভিতরে করুন। বাংলাদেশের মানুষের যে প্রত্যাশা একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন। সেই নির্বাচনটি যত দ্রুত দেয়া হবে তা সবার জন্যই মঙ্গল।

বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক (খুলনা বিভাগ) অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে হবে। ভোটাধিকার নিশ্চিতকরণ ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি এই দু’টি বিষয় নিয়ে এখনো জনগনকে রাজপথে নামতে হবে ভাবলে অবাক লাগছে। দুঃর্ভাগ্য আমাদের। ফ্যাসিষ্ট শেখ হাসিনা বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যাবার ৬ মাস গত হলেও; সার্বিক পরিস্থিতির তেমন কোনো উন্নতি ঘটেনি। কারণ, আজও বাংলাদেশের শাসনযন্ত্রে ফ্যাসিবাদের দোসরেরা বর্তমান। প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় ফ্যাসিবাদের দোসরদেরকে বসিয়ে আপনারা (অন্তর্বর্তীকালীন সরকার) ফ্যাসিষ্টমুক্ত বাংলাদেশ কায়েম করতে চাইবেন? আবার জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যূত্থানে ইস্প্রিটের কথা বলবেন; এটি দ্বিচারিত ছাড়া আর কিছুই নয়। আজ যে সব সংস্কারের কথা বলা হচ্ছে- সেটি ২০০৯ সাল থেকে বিএনপি বলে আসছে। আমরা বারবার বলেছি- বাংলাদেশের মানুষ কাকে ভোট দেবে সেটি তাদের ব্যাপার; কিন্তু তাদের ভোট দেবার স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিতে হবে। অবিলম্বে জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণাসহ জনগুরুত্বপূর্ণ দাবিসমূহ তুলে ধরেন তিনি।

সম্প্রতি খুলনা সফরে পাট ও বাণিজ্য উপদেষ্টার বক্তৃতার উদ্বৃতি উল্লেখ করে বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় বিএনপি’র জাতীয় নির্বাহী কমিটির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক আলহাজ¦ রকিবুল ইসলাম বকুল বলেছেন, ‘তিনি বলেছেন (পাট উপদেষ্টা) তারা খালিশপুর তথা খুলনা অঞ্চলের বন্ধকৃত পাটকলগুলো চালু করতে পারবেন না। তারাও ফ্যাসিষ্ট শেখ হাসিনার মতোই শ্রমিক-জনতার কষ্টে অর্জিত পাটকলগুলো লীজ দিতে চায়। আমরা বিএনপি বলছি, জনগন যদি আমার দল বিএনপিকে রাষ্ট্রপরিচালনার দায়িত্ব দেয়- আমরা খুলনা অঞ্চলের সকল বন্ধ পাট কল-কারখানাগুলো চালু করবো।

বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন বিএনপি’র কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক (খুলনা বিভাগ) জয়ন্ত কুমার কুন্ডু, বিএনপি’র নির্বাহী কমিটির অন্যতম সদস্য ও খুলনা মহানগর শাখার আহবায়ক এ্যাড. এসএম শফিকুল আলম মনা, মহানগর বিএনপি’র সদস্য সচিব মো. শফিকুল আলম তুহিন।

খুলনা জেলা বিএনপি’র আহবায়ক মো. মনিরুজ্জামান মন্টুর সভাপতিত্বে সিনিয়র যুগ্ম-আহবায়ক এ্যাড. মোমরেজুল ইসলামের সঞ্চালনায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন, খুলনা জেলা যুবদলের আহবায়ক এবাদুল হক রুবায়েত, নগর যুবদলের আহবায়ক আব্দুল আজিজ সুমন, জেলা যুবদলের সদস্য সচিব নাদিমুজ্জামান জনি, নগর যুবদলের সদস্য সচিব রবিউল ইসলাম রুবেল, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের নবনির্বাচিত আহবায়ক আতাউর রহমান রুনু, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক মিরাজুর রহমান মিরাজ, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব আব্দুল মান্নান মিস্ত্রী, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব ইস্তিয়াক আহমেদ ইস্তি, জেলা শ্রমিকদলের আহবায়ক উজ্জ্বল কুমার সাহা, জেলা মহিলাদলের সভানেত্রী এ্যাড. তসলিমা খাতুন ছন্দা, জেলা ছাত্রদলের গোলাম মোস্তফা তুহিন ও মহানগর ছাত্রদলের তাজিম বিশ^াস প্রমুখ। শুরুতেই মহাগ্রন্থ আল-কোরআন তিলাওয়াত করেন হাফেজ মাওলানা ফারুক হুসাইন। শ্রীমত ভাগবাত গীতা পাঠ করেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান কল্যাণ ফ্রন্টের সুদীপ্ত মল্লিক।

জনসভার শুরুতেই বিএনপি’র চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার পরিপূর্ণ সুস্থ্যতা কামনা, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দীর্ঘায়ু ও নিরাপদে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন প্রার্থনা, বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ‘বীরউত্তম’, তার কণিষ্ঠপুত্র আরাফাত রহমান কোকোসহ দলীয় নেতাকর্মী-সমার্থক এবং সর্বশেষ ছাত্র-জনতার গণঅভ্যূত্থানে সকল শহীদদের মাগফেরাত কামনা করা হয়। একই সাথে চিকিৎসাধীন খুলনা জেলা বিএনপি’র সদস্য সচিব শেখ আবু হোসেন বাবু’র পরিপূর্ণ সুস্থ্যতা কামনা করেন নেতৃবৃন্দ।

খুলনা গেজেট/এম মিলন




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!