খুলনা, বাংলাদেশ | ৭ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২১শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

Breaking News

  বিএনপিনেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র হিসেবে শপথ পড়ানোর দাবিতে মৎস্য ভবন, কাকরাইল ও সচিবালয় এলাকায় সমর্থকদের অবস্থান
  সাজার বিরুদ্ধে ডা. জোবাইদা রহমানের আপিল শুনানি আগামীকাল : হাইকোর্ট
স্থায়ী কমিটির বৈঠক

নির্বাচন নিয়ে গড়িমসি হলে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলার সিদ্ধান্ত

গেজেট ডেস্ক

নানা সিদ্ধান্ত ও কার্যক্রমে ক্ষুব্ধ হলেও দেশের স্থিতিশীলতায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। আপাতত কোনো বিরোধে জড়াবে না তারা। তবে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণায় কালক্ষেপণ কিংবা গড়িমসি করলে রাজনৈতিকভাবে তা মোকাবিলারও প্রস্তুতি রয়েছে দলটির।

নির্বাচন ইস্যুতে দলটি যেভাবে নানা ফোরামে নির্বাচন দাবি করে আসছে, সেই দাবি অব্যাহত রাখবে। তারা কমপক্ষে আরও দুই মাস সরকারের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করবে। এর পরও নির্বাচন নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সুস্পষ্ট দিনক্ষণ ঘোষণা করা না হলে কিংবা নির্বাচন প্রলম্বিত করার কোনো লক্ষণ স্পষ্ট হলে, তখন রাজপথের কর্মসূচির কথা ভাববে বিএনপি। সে ক্ষেত্রে মিত্র দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করবে।

গত সোমবার রাতে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এমন আলোচনা হয়েছে বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে। রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এতে নির্বাচন ইস্যু ছাড়াও দলের তিন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের তারুণ্যের সমাবেশ, দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে কর্মসূচিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন নেতারা।

বৈঠক সূত্র জানায়, বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলোর অব্যাহত দাবির মুখে মেয়াদের ১০ মাসেও জাতীয় নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা করেনি ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার। এমন অবস্থায় নির্বাচন নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র দেখছে দলটি। দলটির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম মনে করে, সরকারের একটি অংশ ক্ষমতায় থাকতে নানা অজুহাতে নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। সম্প্রতি অতীব গুরুত্বপূর্ণ নয় এমন কিছু ইস্যু নিয়ে হঠাৎ করে নানা পক্ষের মাঠে আন্দোলনে নামার ঘটনাকে সন্দেহের চোখে দেখছেন তারা। পতিত স্বৈরাচারের লোকজনও হঠাৎ করে রাজপথে মিছিল করছে। এর মধ্য দিয়ে তারা সরকারকে বিপদে ফেলতে এবং দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়। কিন্তু সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। সংকট উত্তরণে দ্রুত জাতীয় নির্বাচনই একমাত্র পথ। তাই নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণের দাবিতে আন্দোলনের পক্ষে মত দেন তারা। তবে এই ইস্যুতে এখনই মাঠে নামার মতো পরিস্থিতি হয়নি বলেও অভিমত জানান নীতিনির্ধারকদের কেউ কেউ।

বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা জানান, অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর চাপ বাড়িয়ে সংসদ নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ আদায়ের দাবিতে রাজপথে নামার জন্য বিভিন্ন পর্যায় থেকে চাপ থাকলেও তারা সরকারকে আরও কিছু সময় দিতে চান। এর মধ্যে তারা জনমত তৈরিতে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ে কাজ করবেন।

বিএনপি নেতারা বলছেন, আগামী দুই মাস দলের সদস্য সংগ্রহ কর্মসূচি চলবে, আর তার মাধ্যমেই দলকে আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত করা হবে। অন্যদিকে, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর যে তারুণ্যের সমাবেশ রয়েছে, সেসব কর্মসূচির মাধ্যমে দলের তরুণ কর্মীদের উজ্জ্বীবিত করা। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম ও খুলনায় যৌথভাবে বিশাল সমাবেশ শেষ করেছে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী বগুড়া ও ঢাকায়ও সমাবেশ হবে। সর্বশেষ ঢাকার সমাবেশে বড় ধরনের লোকসমাগম করবে। রাজধানীর ওই সমাবেশ থেকে জাতীয় নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণের দাবিতে বিএনপির অবস্থান আরও স্পষ্ট করা হবে।

বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলো ক্রমাগতভাবে দ্রুততম সময়ে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ ঘোষণার দাবি জানিয়ে আসছে। কিন্তু সরকার এ দাবিকে সেভাবে আমলে নিচ্ছে না। বরং সংস্কার ও নির্বাচনকে তারা মুখোমুখি দাঁড় করাচ্ছে। নির্বাচন নিয়ে সরকার আসলে কী করতে চায় কিংবা সরকার আদৌ নির্বাচন দেবে কিনা, বৈঠকে সেটা নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করেন নেতারা।

বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একজন নেতা বলেন, বিএনপি এই সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলতে চায় না। সে কারণে এখন পর্যন্ত সরকারকে বিব্রত করার মতো কোনো কর্মসূচি দেয়নি। তবে আগামীতে সরকারের ওপর চাপ তৈরির জন্য বিএনপি ও তার মিত্ররা নিজ নিজ অবস্থান থেকে নির্বাচনের দিনক্ষণের দাবিতে কর্মসূচি দিতে পারে। নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে সম্মানের সঙ্গে বিদায় জানাতে চায় বিএনপি।

দলটির আরেক জ্যেষ্ঠ নেতা জানান, তারাও মনে করেন প্রধান উপদেষ্টা দ্রুত সময়ে নির্বাচন দিয়ে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে চান। তবে সে ক্ষেত্রে সরকারের ভেতর থেকে কিছু বাধা আছে। বিএনপি যদি সঠিকভাবে চাপ তৈরি করতে পারে, সেই বাধাও কেটে যাবে।

এক নেতা জানান, ছাত্রদের রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতারা যে থেমে থেমে নিত্যনতুন দাবি তুলছে এবং দাবি আদায়ে রাজপথে নামছে, এর মধ্য দিয়েও সামনে বিশৃঙ্খলা তৈরি হতে পারে। এই দলটির সঙ্গে আবার জামায়াতে ইসলামীও ইন্ধন জোগাচ্ছে বলে বিএনপি নেতাদের কারও কারও সন্দেহ। আগামীতে রাষ্ট্রপতি অপসারণ, সংবিধান বাতিল, গণভোট, স্থানীয় সরকার নির্বাচন– এই ইস্যুগুলোতে তারা ভিন্ন পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। সরকার সেটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে কিনা, কিংবা সরকারের অবস্থান তখন কী হয়, সেটি নিয়েও তাদের মধ্যে শঙ্কা রয়েছে।

বৈঠকে আদালতের রায় এবং নির্বাচন কমিশনের গেজেটের পর ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র পদে ইশরাক হোসেনের শপথ পড়াতে সরকারের গড়িমসি নিয়েও আলোচনা হয়েছে। দলটি নীতিগতভাবে মনে করে, এমন অবস্থায় ইশরাককে মেয়রের দায়িত্ব দেওয়া উচিত। মেয়র হিসেবে তাঁকে শপথ পড়ানোর দাবিতে তাঁর কর্মী-সমর্থক ও ঢাকাবাসীরা যে স্বতঃস্ফূর্ত বিক্ষোভ করছেন, সেটিকে যৌক্তিক ও সংগত মনে করে বিএনপি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, নির্বাচন ইস্যুতে দেশের মানুষ এখনও অন্ধকারে রয়েছে। যে ভোটাধিকারের জন্য, গণতন্ত্রের জন্য দেশের মানুষ ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে এতটা বছর সংগ্রাম করেছে, জীবন দিয়েছে, নির্যাতন সহ্য করেছে, সেই নির্বাচনের জন্য যদি আবারও রাজপথে নামতে হয়, তাহলে তা হবে দুর্ভাগ্যজনক। ফ্যাসিবাদমুক্ত পরিবেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করাটাই হচ্ছে এই সরকারের প্রধান দায়িত্ব। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব।

থাইল্যান্ডে থাকায় বৈঠকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ভার্চুয়ালি অংশ নেন। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমেদ ও অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন। অনলাইনে আরও যুক্ত ছিলেন মির্জা আব্বাস, বেগম সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ।

 

খুলনা গেজেট/এইচ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!