ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের শরিক সমমনা দলগুলোর ঐক্য সুদৃঢ় রাখার উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপি। এ লক্ষ্যে আসনভিত্তিক জোট নেতাদের সহযোগিতা করতে স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীকে নির্দেশনা দিয়ে চিঠি পাঠিয়েছে দলটি। ওই চিঠিতে মিত্র পাঁচটি দলের ৬ শীর্ষ নেতাকে জনসংযোগ এবং তার দলের সাংগঠনিক কার্যক্রমে সহায়তা করতে নির্বাচনি আসনের থানা, উপজেলা, পৌরসভার বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ওই চিঠির অনুলিপি জোটের সংশ্লিষ্ট শীর্ষ নেতাদেরও দিয়েছে দলটি।
দলীয় সূত্র জানিয়েছে, বিএনপির নেতৃত্বাধীন যুগপৎ আন্দোলনে থাকা বিভিন্ন দলের ছয় নেতাকে এ চিঠি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রবকে লক্ষ্মীপুর-৪ আসন, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্নাকে বগুড়া-২, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি ঢাকা-১২, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর পটুয়াখালী-৩, গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান ঝিনাইদহ-২ এবং জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদাকে কিশোরগঞ্জ-৫ আসনের জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি চিঠিতে ওইসব আসনের থানা-উপজেলা ও পৌরসভা বিএনপির নেতাকর্মীকে জোটনেতাদের সহায়তা করতে বলা হয়েছে। এসব চিঠির বাইরে ১২ দলীয় জোট নেতা ও বাংলাদেশ এলডিপির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিমকে মৌখিকভাবে লক্ষ্মীপুর-১ আসনে কাজ করতে বলা হয়েছে। এছাড়া ওই এলাকার বিএনপি নেতাকর্মীকে এ বিষয়ে মৌখিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
মিত্র রাজনৈতিক দলের নেতারা জানান, এসব চিঠির মাধ্যমে তারা যাতে প্রতিবন্ধকতা ছাড়া কাজ করতে পারেন, সেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে নিজ নিজ এলাকায় জনসংযোগের মতো কর্মসূচি, কর্মিসভা, সাংগঠনিক সভা যাতে নির্বিঘ্নে করতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে চিঠি দেওয়া হয়েছে। কারণ হিসাবে তারা বলেন, ৫ আগস্টের পর বিভিন্ন স্থানে ওই নেতারা কাজ করতে নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছিলেন। এমনকি মামলা পর্যন্ত দেওয়ার ঘটনাও রয়েছে। এছাড়া নেতাকর্মীর ওপর হামলার ঘটনাও আছে। এসব বিষয়ে বিএনপির হাইকমান্ডকে অবহিত করলে তারা এ চিঠি দিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীকে সহায়তা করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যাতে কোনো রকম বাধা না দেওয়া হয়।
এসব আসনের বেশির ভাগই ২০১৮ সালে জোটগতভাবে তারা নির্বাচন করেছিলেন। নাগরিক ঐক্যের একজন নেতা জানান, তাদের দলের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না ২০১৮ সালের নির্বাচনে ঐক্যফ্রন্টের নেতা হিসাবে বগুড়া-২ আসন থেকে নির্বাচন করেছিলেন। ২০২৪ সালের নির্বাচনে বিএনপিসহ অন্যরা জোটগত নির্বাচনে অংশ নিলে এ আসন থেকেই মান্না নির্বাচন করতেন। আগামী দিনেও তিনি এ আসন থেকে নির্বাচন করবেন। তবে এ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীরা বিষয়টিকে স্বাভাবিকভাবে নিচ্ছেন না। যে কারণে ৫ আগস্ট দেশের পট পরিবর্তনের পর বিভিন্ন হত্যা মামলায় স্থানীয় নাগরিক ঐক্যের নেতাকর্মীকে ফাঁসানো হয়েছে। এ বিষয় নিয়ে মাহমুদুর রহমান মান্না বিএনপির হাইকমান্ডের সঙ্গে কথা বলেন এবং নিজের ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
একইভাবে লক্ষ্মীপুরের রামগতি-আলেকজান্ডার এলাকায় বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতারা আ স ম আবদুর রবের নেতাকর্মীর ওপর হামলা করে আহত করেছেন বলে জানান জেএসডি নেতাকর্মীরা। এ বিষয়েও বিএনপির হাইকমান্ডকে জানানো হয়েছে। এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে দলটির দপ্তর থেকে ওইসব আসনের স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীকে চিঠি দিয়েছে। যার অনুলিপি জোটনেতাদের দেওয়া হয়।
খুলনা গেজেট/এইচ