জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতি এবং তপশিলের সম্ভাব্য দিনক্ষণ জানাতে বঙ্গভবনে গেছেন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বৃহস্পতিবার দুপুরে তারা বঙ্গভবনে যান। আগামী নির্বাচন নিয়ে তাঁরা রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে আলোচনা করবেন। আগামী সপ্তাহে নির্বাচনের তপশিল ঘোষণা করা হতে পারে।
এর আগে ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আনুষ্ঠানিক তপশিল ঘোষণার আগে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাতের রেওয়াজ রয়েছে। এরই অংশ হিসেবে দুপুর ১২টায় ইসি সদস্যদের বঙ্গভবনে যাওয়ার কথা রয়েছে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল দেশবাসীর উদ্দেশে ভাষণের মাধ্যমে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তপশিল ঘোষণা করবেন। ১৩ অথবা ১৪ নভেম্বর এই ঘোষণা দেওয়া হতে পারে।
দেশের বড় দুই রাজনৈতিক শক্তি মুখোমুখি অবস্থানে থাকলেও ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, পরিস্থিতি তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। বুধবার ইসি সদস্যরা সিইসির কক্ষে দীর্ঘ বৈঠক করেছেন। পরে ইসির মুখপাত্র ও ইসি কার্যালয়ের সচিব মো. জাহাংগীর আলম সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার মতো অনুকূল পরিবেশ সম্পূর্ণরূপে রয়েছে। নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন আয়োজনে ইসি বদ্ধপরিকর। সংবিধান অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে।
তিনি বলেন, রেওয়াজ অনুযায়ী তপশিল ঘোষণার আগে কমিশন রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করে। এরই ধারাবাহিকতায় সাক্ষাতের সময় নির্ধারিত রয়েছে। সাক্ষাতে রাষ্ট্রপতিকে নির্বাচন প্রস্তুতি-সংক্রান্ত সব ধরনের অগ্রগতির বিষয়ে অবহিত করা হবে। প্রস্তুতি নিয়ে রাষ্ট্রপতির পরামর্শ ও নির্দেশনা থাকলে তা কমিশন শুনবে।
তপশিল ঘোষণা কবে হতে পারে– এ প্রশ্নে ইসি সচিব বলেন, ‘তপশিল ঘোষণার এখতিয়ার সম্পূর্ণ ইসির। এ-সংক্রান্ত কমিশন সভা এখনও অনুষ্ঠিত হয়নি।’ তিনি বলেন, ‘কমিশন বারবার বলেছে, নভেম্বর মাসের দ্বিতীয়ার্ধের যে কোনো দিন তপশিল ঘোষণা হতে পারে। সে হিসাবে ডিসেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে বা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে নির্বাচন হতে পারে। কমিশনের যেসব প্রস্তুতিমূলক কাজ রয়েছে, তার সবই সম্পন্ন হওয়ার পথে। নির্বাচনী সামগ্রীও ধাপে ধাপে জেলা পর্যায়ে পাঠানো হচ্ছে।’
নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েনের ব্যাপারে সচিব বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যথাসময়ে পরিপত্র জারি করবে। ইতোমধ্যে আইনশৃঙ্খলা সভায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পর্যাপ্ত সদস্য মাঠে থাকবেন। ভোটাররা নির্বিঘ্নে যাতে ভোট দিতে পারেন, সে বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পরিপত্র জারি করবে এবং সেভাবে মন্ত্রণালয় কাজ করবে।
এদিকে বুধবার ইসি সচিবালয়ের জনসংযোগ শাখার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘নির্বাচন কমিশনের আহ্বানে সাড়া দিয়ে এ পর্যন্ত তিনটি আন্তর্জাতিক সংস্থা ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কমনওয়েলথ ও এনডিআই (ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউট) সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণের ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। সংস্থাগুলোর মধ্যে কমনওয়েলথের প্রাক-নির্বাচনী মূল্যায়ন দল ১৯ নভেম্বর নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সভা করবে। অন্য দুটি সংস্থার প্রাক-নির্বাচনী মূল্যায়ন দল ইতোমধ্যে বাংলাদেশে এসেছে এবং নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সভা করেছে।
গত মাসে নির্বাচন কমিশন থেকে জানানো হয়েছিল, ইউরোপীয় ইউনিয়ন চিঠি দিয়ে জানিয়েছে, তাদের পাঁচ সদস্যের একটি পর্যবক্ষেক দল ২১ নভেম্বর থেকে আগামী ২১ জানুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য অবস্থান করবে এবং নির্বাচন শেষে একটি প্রতিবেদন দাখিল করবে। এর আগে গত ১৯ সেপ্টেম্বর সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালকে একটি চিঠিতে ইইউ জানিয়েছিল, বাজেট-স্বল্পতার কারণে পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষক দল পাঠাবে না তারা।
এ ছাড়া ৩ নভেম্বর নির্বাচন কমিশন থেকে জানানো হয়, ঢাকায় প্রাক-নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দল পাঠাচ্ছে কমনওয়েলথ। দলটি ১৯ থেকে ২৩ নভেম্বর পর্যন্ত ঢাকায় থাকবে। তবে এনডিআইর বিষয়ে এর আগে কিছু জানা যায়নি।
নির্বাচন কমিশন ব্যক্তিগত ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আগ্রহী বিদেশি পর্যবেক্ষকদের আবেদনের সময় নির্ধারণ করে দিয়েছে ২১ নভেম্বর পর্যন্ত। এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কতটি আবেদন জমা পড়েছে– এ প্রশ্নে ইসি সচিবালয়ের পরিচালক (জনসংযোগ) মো. শরিফুল আলম বলেন, ‘এ তথ্য এখনও জানি না।’ তবে ইসি সচিব জাহাংগীর আলম বলেন, এ পর্যন্ত কমিশনকে ই-মেইলের মাধ্যমে তিনটি সংস্থা নিশ্চিত করেছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত সেলের মাধ্যমে সমন্বয়ের পর পূর্ণাঙ্গ তথ্য পাওয়া যাবে, তারা কতজন আসবেন।
খুলনা গেজেট/এনএম