“খুলনার কেসিসি পরিচালিত রূপসা মার্কেট। গত দু’বছর আগেও এ সময়ে ক্রেতা সমাগম থাকত বাজার। কিন্তু বর্তমানে এখানকার পরিস্থিতি প্রাণশূন্য। ক্রেতাদের ভিড় নেই। থমকে গেছে ব্যবসায়ীদের চাঞ্চল্যতা।” মুখটা মলিন করে একথা বলেন ছাব্বির স্টোরের মালিক নান্টু মিয়া। কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, নিত্যপণ্যের উর্ধ্বগতির কারণে এ বাজারে ক্রেতা কমে যাচ্ছে দিনকে দিন।
একই দৃশ্যের দেখা মেলে খুলনার দোলখোলা চালের বাজারে। ক্রেতাশূন্য বাজারে চুপচাপ বসে আছেন ব্যবসায়ীরা। জানতে চাইলে তারা বলেন, চালের দাম অস্বাভাবিক বাড়তি থাকার কারণে তাদের অনেক ক্রেতা ওএমএসের দিকে ঝুঁকছেন। যারা লাইনে দাড়িয়ে চাল কিনতে পারছেননা তারাই মূলত দোকানে এসে কিনছেন। ব্যবসা করতে গিয়ে ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে অনেকেই নি:স্ব হয়ে পড়েছেন।
নগরীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, চিনি বর্ধিত দরে বিক্রি হচ্ছে। ১৭ নভেম্বর চিনির দাম ১০৮ টাকা নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। অথচ ব্যবসায়ীরা বিক্রি করছেন ১১৫-১২০ টাকায়। চাল ও তেলের দাম উচ্চ মূল্যে স্থিতিশীল। বর্তমানে ১ লিটারের সয়াবিন তেলের বোতল ১৯৬ টাকায় এবং ভাল মানের সরু মিনিকেট ৭৬ টাকা ও মোটা চাল ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতিকেজি আটার দাম ৫ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে ৬০ ও ৭২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
রূপসা স্ট্যান্ডরোড কেসিসি মার্কেটের ব্যবসায়ী নান্টু বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। আগের মতো দোকানে বেচাকেনা নেই। অনেক ক্রেতাই এখন টিসিবি থেকে তেল, চিনি ও ডাল ক্রয় করেন। অনেক ক্রেতা কমে গেছে তার।
নগরীর দোলখোলা বাজারের ব্যবসায়ী সালাম বলেন, ১৭ নভেম্বর তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। এরপরও কিছু নামীদামী কোম্পানী তেলের দাম কৃত্রিমভাবে বাড়ানোর উদ্দেশ্যে তাদের এ পণ্যটি দিচ্ছেনা। সংকটের সুর আবারও দিচ্ছে তারা। তিনি আরও বলেন, তার দোকানে ক্রেতা অনেক কমে গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চাল ব্যবসায়ী বলেন, গতবছর এ সময়ে তিনি মাসে ২শ’বস্তার মতো চাল বিক্রি করেছেন। গেল দু’ মাস ধরে ক্রেতারা এখানে আসছেন না। কারণ হিসেবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গত এক মাস ধরে চালের বাজার উচ্চমূল্যে স্থিতিশীল রয়েছে। মানুষ এখন বেশী দরে চাল কিনতে চায়না। অনেকেই এখন ওএমএসের ক্রেতা। তিনি আরও বলেন, ব্যবসা করতে গিয়ে তিনি ব্যাংক থেকে লোন নিয়েছেন। সেই লোনের টাকা গোছানোর আগেই টাকা পরিবারের ভরণপোষণের জন্য খরচ হয়ে যাচ্ছে।
দোলখোল চালের বাজারের ব্যবসায়ী মো: জাকিরুল ইসলাম বলেন, দেশের বড় বড় ব্যবসায়ীরা এখন ব্যবসায়ে নেমেছেন। তাছাড়া ব্যাংক থেকে কোটি কোটি টাকা লোন নিয়ে ভরা ধানের মৌসুমে স্বল্প দামে ক্রয় করে তা সংকটের সময়ে বেশী দরে বিক্রি করছেন। আর তাদের কারণে মূলত বাজারের এ পরিস্থিতি। চালের দাম উর্ধ্বমূখী হওয়ায় অনেক ক্রেতা হারিয়েছেন তিনি। যারা মাস তিনেক আগেও ৫০ কেজির চাল নিতেন তারা এখন অর্ধেক নিচ্ছেন।
দোলখোলা বাজারে কথা হয় সুরুজ মিয়ার সাথে। তিনি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা। তিনি বলেন, বর্তমানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেশী। বাজারের তুলনায় ওএমএস ও টিসিবির পণ্যের দাম কম। তিনি বাজার থেকে কম চাল কিনে ওএমএসের চালের সাথে মিশিয়ে খাচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, বাজারে যে জিনিষের দাম একবার বাড়ে তা আর কমেনা। এমন কোন জিনিষ আছে যে তার দাম কম। দ্রব্যমূল্যের কষাঘাতে সংসার চালানো কঠিন।
খুলনা গেজেট/ এসজেড