বরগুনার আলোচিত মো. শাহনেওয়াজ রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় নিজেকে নির্দোষ দাবি করে খালাস চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেছেন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি। মঙ্গলবার বিকেলে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ আপিল করেন।
এ বিষয়ে মিন্নির আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেন, ‘মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির খালাস চেয়ে হাইকোর্টে আপিল করেছি। আপিলে আমরা উল্লেখ করেছি, এটি ভুল রায়। রায়ের প্রতিটি লাইনের বিরুদ্ধে আপিল করার সুযোগ রয়েছে।’
আইনজীবী বলেন, ‘মিন্নিকে মূলত দোষ স্বীকার করে ১৬৪ ধারা জবানবন্দির আলোকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। অথচ এ জবানবন্দির বিরুদ্ধে মিন্নি পরক্ষণেই আদালতকে বলেছিলেন। মিন্নি এই জবানবন্দি অস্বীকার করেছেন। তিনি এটাও বলেছেন যে, জোরপূর্বকভাবে জবানবন্দি আদায় করা হয়েছে। কেননা, জবানবন্দি রেকর্ড করার আগে জেলা পুলিশ সুপার সংবাদ সম্মেলনে মিন্নির দোষ স্বীকার বিষয়টি প্রকাশ করেন। এটা সম্পূর্ণ বেআইনি।’
মিন্নির অপর আইনজীবী মাক্কিয়া ফাতেমা ইসলাম বলেন, ‘বিকেল সাড়ে ৩ টায় আপিল করেছি। আশা করি শিগগিরই এর শুনানি হবে।’
গত ৩০ সেপ্টেম্বর আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় রিফাতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিসহ ছয়জনের ফাঁসির আদেশ দেন বরগুনা দায়রা জজ আদালত। বরগুনার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আছাদুজ্জামান এ রায় ঘোষণা করেন। রায়ে চার আসামিকে খালাস দেওয়া হয়েছে।
ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন মো. রাকিবুল হাসান ওরফে রিফাত ফরাজী (২৩), আল কাইয়ুম ওরফে রাব্বি আকন (২১), মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত (১৯), রেজোয়ান আলী খান হৃদয় ওরফে টিকটক হৃদয় (২২), মো. হাসান (১৯) ও আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি (১৯)। একই মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করেছেন আদালত। রায়ে খালাসপ্রাপ্ত চার আসামি হলেন মো. মুসা (২২), রাফিউল ইসলাম রাব্বি (২০), মো. সাগর (১৯) ও কামরুল হাসান সাইমুন (২১)।
গত শনিবার সন্ধ্যায় রিফাত শরীফ হত্যা মামলার ৪২৯ পৃষ্ঠার রায়ের কপি প্রকাশ করেন বিচারিক আদালত। রায়ের কপি ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ছয় আসামির পরিবারকে দেওয়া হয়। এর পরের দিন রোববার নিম্ন আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ছয় আসামির রায়ের নথি হাইকোর্টে এসে পৌঁছে। পুলিশের বিশেষ পাহারায় রিফাত হত্যা মামলার যাবতীয় নথি নিয়ে আসেন বরগুনা কোর্টের কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর।
নিয়ম অনুযায়ী, মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য (ডেথ রেফারেন্স) উচ্চ আদালতে মামলার যাবতীয় কার্যক্রমের নথি পাঠানো হয়। রায় হাইকোর্টে আসার পর আসামিরা সাত দিনের মধ্যে আপিল আবেদন করতে পারবেন। মূলত কোনো আসামির মৃত্যুদণ্ড হলে তা কার্যকরের জন্য হাইকোর্টের অনুমোদন লাগে, যা ‘ডেথ রেফারেন্স’ মামলা হিসেবে পরিচিত। তবে দণ্ডিতরা বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে জেল আপিল ও আপিলের সুযোগ পাবেন।
গত বছরের ২৬ জুন প্রকাশ্যে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয় রিফাত শরীফকে। মামলার ২৪ আসামির মধ্যে নিহত রিফাতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিসহ প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির রায় ঘোষণা করেন জেলা ও দায়রা জজ মো. আছাদুজ্জামান। যদিও মামলার প্রধান আসামি মো. সাব্বির আহম্মেদ নয়ন ওরফে নয়নবন্ড পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন এবং অন্য একজন আসামি মো. মুসা পলাতক। এর বাইরে এই মামলায় কিশোর আসামি রয়েছে ১৪ জন। তারা বিচারের অপেক্ষায় সংশোধনাগারে আছে।
খুলনা গেজেট/এনএম