খুলনা, বাংলাদেশ | ১০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৫ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  অ্যান্টিগা টেস্ট: তৃতীয় দিন শেষে বাংলাদেশ ২৬৯/৯, পিছিয়ে ১৮১ রানে
তৃতীয় ওয়ানডেতে ১৬৪ রানে হেরেছে সফরকারীরা

নিউজল্যান্ডে হোয়াইট ওয়াশ বাংলাদেশ

ক্রীড়া প্রতিবেদক

প্রথম দুই ম্যাচ হেরে আগেই ওয়ানডে সিরিজ খুইয়ে বসেছিল বাংলাদেশ। তৃতীয় ম্যাচটা জিতে তাই হোয়াইটওয়াশ এড়ানোই ছিল তামিমদের একমাত্র লক্ষ্য। কিন্তু শেষ ম্যাচে আরও শোচনীয় পরাজয় বরণ করলো টাইগাররা। সেই সঙ্গে ডুবলো হোয়াইটওয়াশের লজ্জায়।

সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে শুক্রবার (২৬ মার্চ) ওয়েলিংটনের বেসিন রিজার্ভে ১৬৪ রানের বিশাল ব্যবধানে হেরেছে বাংলাদেশ। শুরুতে ব্যাট করে ৬ উইকেট হারিয়ে ৩১৮ রান সংগ্রহ করে নিউজিল্যান্ড। জবাবে ১৫৪ রান তুলতেই গুটিয়ে যায় বাংলাদেশের ইনিংস।

কিউইদের ছুড়ে দেওয়া বিশাল লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরু থেকেই হাল ছেড়ে দেওয়া ব্যাটিং দেখা গেছে তামিমদের। শুরুটাও করেন টাইগার অধিনায়ক নিজেই। ম্যাট হেনরির করা ইনিংসের তৃতীয় ওভারে রক্ষণাত্মক শট খেলতে গিয়ে উইকেটরক্ষক টম ল্যাথামের হাতে ক্যাচ তুলে দেন তিনি।

১০ রানেই প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ। এরপর একই বোলারের পরবর্তী ওভারে ট্রেন্ট বোল্টের হাতে ক্যাচ তুলে বিদায় নেন সৌম্য সরকারও। তামিম ও সৌম্য দুজনের ব্যাট থেকেই এসেছে মাত্র ১টি করে রান।

লিটন দাস পাল্টা আক্রমণের পথ বেছে নেন। কিন্তু ২১ বলে ২১ রানের ইনিংস খেলে বিদায় নেন তিনিও। হেনরির বলে পুল করতে চেয়েছিলেন লিটন। কিন্তু বল ব্যাটের কানায় লেগে থার্ড ম্যান অঞ্চলে চলে যায়। সেখানে অনেকটা দৌড়ে গিয়ে ডাইভ দিয়ে অসাধারণ এক ক্যাচ নেন বোল্ট।

২৬ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যাওয়ার পর টিকে থাকার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলেন মুশফিক ও মিঠুন। ধৈর্যের প্রতিমূর্তি হয়ে টেস্ট ক্রিকেটের স্টাইলে ব্যাট করছিলেন দুজনেই। কিন্তু ৩৯ বল খেলে মাত্র ৬ রান করা মিঠুন জেমিসনের বলে তুলে মারতে গিয়ে মিচেল স্যান্টনারের হাতে সহজ ক্যাচ তুলে দিয়ে বিদায় নেন।

মিঠুনের বিদায়ের পর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি মুশফিকও। শর্ট বলে পুল করতে গিয়ে বোলার নিশামের হাতেই ক্যাচ তুলে দিলে শেষ হয় তার ৪৪ বলে ২১ রানের ইনিংস। এক বল বাদেই নিশামের অফ স্ট্যাম্পের বাইরের বলে স্কয়ার ড্রাইভ করতে গিয়ে কনওয়ের হাতে ক্যাচ তুলে দেন মিরাজ (০)। বাকিদের ব্যর্থতার মাঝে মাহমুদউল্লাহর অপরাজিত ৭৩ বলে ৬ চার ও ৪ ছয়ে ৭৬ রানের ইনিংসও কোনো কাজেই আসেনি।

এর আগে টসে জিতে শুরুতে ব্যাট করতে নেমে ডেভন কনওয়ে ও ডেরিল মিচেলের অভিষেক সেঞ্চুরিতে ভর করে টাইগারদের সামনে ৩১৯ রানের বিশাল লক্ষ্য ছুড়ে দেয় স্বাগতিকরা। আর এতে বাংলাদেশের ফিল্ডারদেরও বড় ভূমিকা ছিল। দ্বিতীয় ম্যাচের মতো আবারও সেই বাজে ফিল্ডিং আর ক্যাচ মিসের মহড়ার দেখা মিললো। ক্যাচ মিস হয়েছে অন্তত তিনটি। যার একটি আবার মুশফিকের অবদান।

ডানহাতি পেসার তাসকিনের করা ইনিংসের অষ্টম ওভারের দ্বিতীয় বলেই উইকেটের পেছনে ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন কিউই ওপেনার হেনরি নিকোলস। কিন্তু ডান দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে দুই হাতেই বলের নাগাল পেয়েও ক্যাচ মিস করেন বাংলাদেশের উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহিম। তবে এক বল পরেই ফের ক্যাচ তুলে দেন নিকোলস (১৮)। এবার অবশ্য গালিতে থাকা লিটন দাস অনায়াসেই বল তালুবন্দী করেন।

এক ওভার পরেই আঘাত হানেন রুবেল হোসেন। এই ডানহাতি পেসারের শর্ট বলে পুল করতে চেয়েছিলেন গাপটিল। কিন্তু বল ব্যাট ছুঁয়ে জমা হয় মিড-অনে থাকা লিটন দাসের তালুতে। এরপর আবারও ক্যাচ মিস। রুবেলের চতুর্থ ওভারে ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন টেইলর। কিন্তু মিড উইকেটে থাকা মোস্তাফিজ হাঁটুর উচ্চতার ক্যাচটি দুই হাত লাগিয়েও ধরতে পারেননি। তবে ওভারের শেষ বলে অফ স্ট্যাম্পের বাইরের বলে কাট করতে গিয়ে মুশফিকের হাতে ক্যাচ তুলে দেন টেইলর (৭)।

আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান টম ল্যাথামকে এবার আর ইনিংস লম্বা করতে দেননি সৌম্য সরকার। উইকেটে থিতু হয়ে বসা জুটি ভাঙার জন্য পার্ট টাইম স্লো মিডিয়াম পেসারকে আনেন ওয়ানডে দলপতি তামিম। অধিনায়কের আস্থার প্রতিদান দিতে একটুও সময় নিলেন না সৌম্য। নিজের প্রথম বলেই ল্যাথামের (১৮) উইকেট তুলে নিলেন তিনি। সৌম্যর নিরীহদর্শন বলে ড্রাইভ করেছিলেন ল্যাথাম। কিন্তু পয়েন্টে থাকা মিরাজ দুর্দান্ত এক ডাইভ দিয়ে ক্যাচ লুফে নেন।

বাংলাদেশের আনন্দের উপলক্ষ আসলে ল্যাথামের উইকেট নেওয়া পর্যন্তই। ১২৪ রানে ৪ উইকেট ফেলে দেওয়ার পরও কিউইরা রানের পাহাড় গড়ে আসলে বাংলাদেশের ফিল্ডারদের ক্যাচ মিস আর বাজে বোলিংয়ের কারণে। এই সুযোগে কনওয়ে আর মিচেলের জুটিতে চালকের আসনে বসে যায় নিউজিল্যান্ড। দুজনে মিলে ১৫৯ রানের দুর্দান্ত এক জুটি গড়েন।

৯৯ বলে কনওয়ে তুলে নেন ক্যারিয়ারের প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরি। মোস্তাফিজের বলে বদলি ফিল্ডার আফিফ হোসেনের হাতে ক্যাচ তুলে দেওয়ার আগে তার ব্যাট থেকে আসে ১১০ বলে ১৭ চারে সাজানো ১২৬ রানের ঝলমলে এক ইনিংস। তবে ৪৫তম ওভারে মাহমুদউল্লাহর ক্যাচ মিসে জীবন পাওয়া মিচেল শেষ পর্যন্ত টিকে থেকে রানের ফোয়ারা ছুটিয়ে তুলে নেন দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি।

রুবেলের করা ইনিংসের ৪৯তম ওভারে আসে ১৬ রান। এরপর মোস্তাফিজের করা ইনিংসের শেষ ওভারে আসে ২১ রান, যার মধ্যে ১৮ রানই মিচেলের। যা আবার তাকে এনে দেয় অভিষেক ওয়ানডে সেঞ্চুরিও। মাত্র ৯২ বলে ৯ চার ও ২ ছক্কায় সাজানো ইনিংসটি নিউজিল্যান্ডের ইনিংসকে ৩০০ পার করতে বড় ভূমিকা রাখে। যদিও শেষ বলে ২ রান নিতে গিয়ে অল্পের জন্য রান আউটের হাত থেকে বেঁচে যান তিনি। এখানেও সেই মুশফিকের অবদান। ঠিক সময়ে বলটা ধরে স্ট্যাম্পে লাগাতে পারলে নিশ্চিত সেঞ্চুরিবঞ্চিত হতেন মিচেল।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!