ওয়াশিংটনগামী ফ্লাইট ধরার প্রস্তুতিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী তখন ব্যাগ গোছাচ্ছিলেন। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি জে ব্লিনকেনের সঙ্গে বৈঠক করতে যাচ্ছেন তিনি। ২৪ ঘণ্টা পর ফ্লাইট। এমন সময় মন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেনকে জানানো হলো চীনের স্পেশাল এনভয় দেং শিজুন জরুরি ঢাকায় এসেছেন, তিনি সাক্ষাৎ করতে চান। দ্বিপক্ষীয় স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয় ছাড়াও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে আলোচনায় আগ্রহী তিনি- এমন ইঙ্গিত দেয়া হয় দূতাবাসের তরফে। শর্ত দেয়া হয় মন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের অ্যাপয়েনমেন্টসহ অন্যান্য বিষয় যতটা সম্ভব গোপনীয়তা রক্ষার। তাদের কথামতো সেগুনবাগিচার তরফে গোপনীয়তা রক্ষা করা হয়, যাতে সফরের বিষয়টি তাৎক্ষণিক প্রকাশ না পায়। ৬ই এপ্রিল বিকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেনের সঙ্গে কাক্সিক্ষত সেই বৈঠকে বসেন চীনের বিশেষ দূত দেং শিজুন। সঙ্গে ছিলেন ঢাকায় নবনিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও উয়েন এবং তার টিম। কূটনৈতিক সূত্র অবশ্য মন্ত্রীর সঙ্গে চীনা বিশেষ দূতের আলোচনার বিস্তারিত প্রকাশে এখনো রাজি নয়।
তবে একটি সূত্র মানবজমিনকে ওই আলোচনার খানিকটা শেয়ার করেছে। জানিয়েছে, বাংলাদেশ প্রশ্নে বিশেষত: রোহিঙ্গা ইস্যুতে পশ্চিমা বিশ্বের অবস্থানের ঠিক বিপরীতে চীন।
বেইজিং মনে করে মিয়ানমার তাদের বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠীকে যখনই গ্রহণে রাজি হবে তখনই তাদের ফেরৎ পাঠানো উচিত। এখানে নিরাপত্তা ছাড়া অন্য কোনো ইস্যুতে কারও বাগড়া বা শর্ত জুড়ে দেয়া উচিত নয়। চীনের বিশেষ দূত ঢাকাকে জানান, প্রেসিডেন্ট শি জিং পিংয়ের নেতৃত্বাধীন সরকার সর্বতোভাবে বাংলাদেশের পাশে আছে। কেবল অবকাঠামো উন্নয়ন আর মেগা প্রজেক্টই নয়, বাংলাদেশের চলমান সব সংকটে বেইজিং ঢাকার পাশে থাকবে।
বিশেষ দূত জানান, বেইজিংয়ের মধ্যস্থতায় ত্রিদেশীয় প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া এগিয়ে নেয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে। বিশেষত মিয়ানমারকে এটা রাজি করানো যে তারা যেন চলতি বছরের মাঝামাঝিতে তাদের বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠীর একটি উল্লেখযোগ্য অংশকে গ্রহণের প্রক্রিয়াটি শুরু করে। এ নিয়ে বেইজিংয়ে পরবর্তী বৈঠক আহ্বান এবং রোহিঙ্গাদের আশ্বস্ত করতে মিয়ানমারের একাধিক প্রতিনিধিদলকে কক্সবাজার পাঠানোর প্রস্তাবও করেন চীনা বিশেষ দূত।
উল্লেখ্য, এ রিপোর্ট লেখার সময় খবর আসে চীনা দূতের মতোই অনেকটা নীরবে বেইজিংয়ের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছেড়ে গেছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। বিশেষ দূতের সফরের ফিরতি সফর হিসেবে তাকে পাঠানো হয়েছে। শনিবার সচিব বেইজিংয়ের পথে রওনা করেন, ফিরবেন আগামী ১৯ এপ্রিল। সচিবের সফরে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ছাড়াও সমসাময়িক বিশ্ব পরিস্থিতি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব, বাংলাদেশের স্বাধীন ইন্দো-প্যাসিফিক ধারণা এবং চীনের বিআরআই’র আওতায় প্রতিশ্রুত প্রকল্প এবং বিনিয়োগের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা হতে পারে।
স্মরণ করা যায়, আফগানিস্তান এবং আসিয়ানে চীনের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালনকারী দেং শি জুন গত ডিসেম্বরে মিয়ানমার সফর করেন। মিয়ানমারের সাতটি জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীর (ইএও) প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠক করা ছাড়াও সেই সময়ে দেশটির শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে তার আলোচনা হয়। তিনি মিয়ানমারে বিবদমান উত্তরাঞ্চলও পরিদর্শন করেন। ঢাকা সফরকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছাড়াও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো এনামুর রহমানের সঙ্গে তার বৈঠক হয়েছে বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।
খুলনা গেজেট/এনএম