খুলনা, বাংলাদেশ | ৬ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২১ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ডেঙ্গুতে একদিনের ৯ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১ হাজার ২১৪

না ফেরার দেশে নিমগাছি হাইস্কুলের তোজাম স্যার

আব্দুল কুদ্দুস তালুকদার

গত ৮ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার সকালে তার প্রিয় ছাত্র-ছাত্রী, সহকর্মী, আপনজন, ভক্ত অনুরাগী তথা এলাকাবাসীকে শোকে ভাসিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেলেন রায়গঞ্জের ঐতিহ্যবাহী নিমগাছি বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক খোন্দকার তোজাম্মেল হক।

পারিবারিক সূত্র জানায়, আগের দিন তার শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে ঢাকার হসপিটালে নেয়া হয়। পরদিন সকাল নয়টার দিকে তিনি সেখানেই শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল প্রায় ৮২ বছর। মরহুমের নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয় তাঁর গ্রামের বাড়ীর পাশে সোনাখাড়া ঈদগাহ মাঠে ঐদিন বাদ এশা। জানাজায় শরীক হয়ে তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বক্তব্য রাখেন রায়গঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ইমরুল হোসেন তালুকদার ইমন, সোনাখাড়া ইউপি চেয়ারম্যান আবু হেনা মোস্তফা কামাল রিপন, নিমগাছি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মনিরুজ্জামান জিন্না, মরহুমের ছোট ভাই সাবেক শিক্ষা অফিসার কে এম আজিজুল হক, বড় ছেলে ড. খ ম রেজাউল করিম। জানাজা বেশ শীতের রাতে হলেও বিপুল সংখ্যক গুনগ্রাহী শরীক হন। শেষে তাঁর পিতৃভূমি রূপাখাড়া কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

উল্লেখ্য, নিমগাছি এলাকার একটু বয়স্ক শিক্ষিতজন বলা চলে প্রায় সবাই তার ছাত্র-ছাত্রী। তিনি ১৯৪১ সালের ১ অক্টোবর তৎকালীন পাবনা জেলার (বর্তমান সিরাজগঞ্জ জেলা) রায়গঞ্জ থানার রুপাখাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম মোঃ নজাব আলী খোন্দকার এবং মায়ের নাম নেকজান বানু। তিনি ১৯৫২ সালে ঐতিহ্যবাহী রুপাখাড়া ফ্রি প্রাইমারী স্কুল হতে ৪র্থ শ্রেণিতে মেধাবৃত্তি লাভ করেন, ১৯৬১ সালে চান্দাইকোনা হাইস্কুল থেকে মানবিক বিভাগে ম্যাট্রিকুলেশন এবং ১৯৬৪ সালে সিরাজগঞ্জ বিএ কলেজ থেকে আইএ পাশ করেন। একই বছর তিনি নিমগাছি জুনিয়র হাইস্কুলে সহকারী শিক্ষক হিসাবে যোগদান করেন। চাকুরীরত অবস্থায় তিনি ১৯৬৭ সালে সিরাজগঞ্জ ডিগ্রী কলেজ থেকে বিএ পাশ করেন। ইংরেজী শিক্ষক হিসাবে তাঁর যথেষ্ঠ সুনাম ছিল। তিনি ১৯৭৬ সালে তদানীন্তন বাংলাদেশ শিক্ষা সম্প্রসারণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, ঢাকা থেকে ইংরেজীতে বিশেষ প্রশিক্ষণ গ্রহন ও ১৯৭৮ সালে শিক্ষক প্রশিক্ষণ মহাবিদ্যালয় থেকে বিএড ডিগ্রী লাভ করেন।

তিনি ১৯৮০ সালের শুরুতে নিমগাছি বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। এ দায়িত্ব পালনকালে তিনি ১৯৯১ সালে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব এডুকেশনাল এডমিনিষ্ট্রেসন এক্সটেনসন এন্ড রিচার্স ( নিয়েরার), ঢাকা থেকে মাসব্যাপী শিক্ষা প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। তিনি একটানা ২১ বছর ( ১৯৮০ – ২০০১) প্রধান শিক্ষক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। বিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এর বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে তার সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল। তার সময়ে বিদ্যালয়টি সরকারী সাধারণ উন্নয়ন পরিকল্পনাভূক্ত হয়। ফলে বিদ্যালয়ের দোতলা ভবন নির্মাণ, বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি, আসবাবপত্র ও গ্রন্থাগারের বই ক্রয়সহ খেলার মাঠের প্রভূত উন্নয়ন সাধিত হয়।

তিনি বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা হাজী আহম্মদ আলী সরকারের অত্যন্ত স্নেহভাজন ছিলেন। ব্যক্তিজীবনে তিনি দুই পুত্র ও তিন কন্যা সন্তানের জনক। তিনি ছিলেন সদা হাসিমাখা মুখের বিরল গুনের অধিকারী একজন অসাধারণ মানুষ । স্বাভাবিক সময়ে তো বটেই এমনকি প্রচন্ড রেগে থাকার সময়েও দেখে মনে হতো তিনি হাসছেন। তাঁর বড় ছেলে ড. খ ম রেজাউল করিম যশোর এম এম সরকারী কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এবং পুত্রবধূ অধ‌্যাপক ড. সেলিনা আহ‌মেদ খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান ডি‌সি‌প্লি‌নের প্রধান। ছোট ছেলে এনামুল হক একটা বেসরকারী কোম্পানীতে কর্মরত।

মরহুম খোন্দকার তোজাম্মেল হক ২০২০ সালে তার আজীবনের কর্মস্থল নিমগাছি হাইস্কুল বিষয়ে একটা গবেষনাধর্মী বই লিখেন, যে বইয়ের নাম – ইতিহাস ও ঐতিহ্যে নিমগাছি বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়।




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!