খুলনা, বাংলাদেশ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২২ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ৪ দিনের সরকারি সফরে ঢাকায় পৌঁছেছেন বাইডেনের বিশেষ প্রতিনিধি দল
  পাকিস্তানে যাত্রীবাহী গাড়িতে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত ৪৫

নানা সীমাবদ্ধতায়ও সাফল্যে এগিয়ে খুলনা বিকেএসপি

আল মামুন

দেশের ক্রীড়াঙ্গনের আতুর ঘর বলা হয় বিকেএসপিকে। যার পূর্ণাঙ্গ রূপ বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। দেশের একমাত্র সরকারি ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও এটি। আঞ্চলিক শাখা হিসেবে খুলনা বিকেএসপি প্রায় এক যুগ ধরে নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও সাফল্য ধরে রেখেছে। করোনাকালে গত প্রায় পাঁচ মাস বন্ধ থাকলেও ডিজিটাল প্ল্যাটফরমে ক্লাস ও কোচিং করাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। বর্তমানে খুলনা বিকেএসপিতে ৮০ জন প্রশিক্ষনার্থী থাকলেও তাদের জন্য নেই নিয়মিত চিকিৎসক। ক্রিকেট অনুশীলনের জন্য ইনডোর ফ্যাসিলিটিজ। রয়েছে আরও কিছু সীমাবদ্ধতা। এসব সীমাবদ্ধতার মধ্যেও গত এক দশকে বেশ কিছু বড় সাফল্য রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির।

শহর থেকে ১৮ কিলোমিটার পশ্চিমে, আফিল গেট এলাকায় সবুজের আচ্ছাদনে দাঁড়িয়ে আছে খুলনা বিকেএসপি। ১৩ একর জমির উপর চারতলা একটি ভবন, ৫২ কক্ষ বিশিষ্ট একটি ট্রেনিং হোস্টেল, একটি জিমনেশিয়াম, একটি করে ক্রিকেট ও ফুটবল মাঠ, চারতলা বিশিষ্ট দুই ইউনিটের একটি অফিসার্স কোয়ার্টার ও একটি স্টাফ কোয়ার্টার ভবন মিলিয়ে খুলনা বিকেএসপি। ২০০৪ সালে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। চার বছরে শেষ হয় বিকেএসপির অবকাঠামো নির্মাণ কাজ। তবে একাডেমি ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু করতে লেগে যায় আরও দুই বছর। যাত্রা শুরু হয় ফুটবল ডিসিপ্লিন দিয়ে। এরপর সেখানে যুক্ত হয় টেবিল টেনিস। সর্বশেষ, মাত্র দুই বছর আগে, ২০১৮ সালে খুলনা বিকেএসপিতে চালু হয় ক্রিকেট ডিসিপ্লিন।

প্রায় এক দশকেরও বেশী সময় ধরে এই প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে বয়স ভিত্তিক ও মূল জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছেন বেশ কয়েকজন প্রতিভাধর ফুটবলার। বর্তমানে ফুটবল, ক্রিকেট ও টেবিল টেনিস এই তিনটি ডিসিপ্লিনে খুলনা বিকেএসপিতে মোট প্রশিক্ষণার্থী আছেন ৮০ জন। যারা খেলাধুলার পাশাপাশি পড়াশুনাও চালিয়ে যাচ্ছেন। অষ্টম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনার ব্যবস্থা আছে এখানে।


দুই বছর আগে ক্রিকেট কার্যক্রম শুরু হয় মাশরাফি, সাকিব, সৌম্যদের ডেরায়। শুরুর মাত্র দুই বছর হলেও চলতি মৌসুমে অনূর্ধ্ব-১৮ জাতীয় ক্রিকেটে খুলনা বিকেএসপির ১১ জন ক্রিকেটার খেলেছেন বিভিন্ন দলের হয়ে। সর্বশেষ অনুষ্ঠিত হওয়া ইয়ুথ ক্রিকেট লিগেও খেলেছেন খুলনা বিকেএসপির তিন ক্রিকেটার। বিকেএসপির গন্ডি পেরিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে এখানকার ক্রিকেটাররা। ব্যাট-বলের প্রশিক্ষণের জন্য এখানে রয়েছে বিশাল একটি মাঠ। অনুশীলন উইকেটসহ এখানে মোট উইকেট তিনটি।

প্রতিষ্ঠানটির ক্রিকেটের হেড কোচ সালাহ উদ্দীন বলেছেন,‘প্রতিদিন দুই সেশনে তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। সকালে একাডেমিক ক্লাস চলে। ক্লাস শুরুর আগে একবার এবং দুপুরের পর অনুশীলন করানো হয়। এছাড়া নিজেদের মধ্যেই প্রায়ই ম্যাচ খেলে এখানকার ক্রিকেটাররা।’ নিজের ছাত্রদের নিয়ে বেশ আশাবাদী সালাহ উদ্দীন। তিনি বিশ্বাস করেন দ্রুতই বয়সভিত্তিক দলে খুলনা থেকে ভালোমানের ক্রিকেটার পাবে।
‘আমি একঝাঁক মেধাবী ক্রিকেটার পেয়েছি। যারা দেশের হয়ে খেলার জন্য বেশ প্রত্যয়ী। হয়তো সবাই সুযোগ পাবে না, কিন্তু এই বিশ্বাসটাই তাদের ক্রিকেটে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যাবে।’ – বলেছেন সালাহ উদ্দীন।

সম্প্রতি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জয়ী দলে খেলা ৭ ক্রিকেটার ছিলেন দিনাজপুর বিকেএসপির প্রশিক্ষাণার্থী। একই রকম স্বপ্ন দেখেন এখানকার ক্রিকেটাররাও। শুধু অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ নয়, জিততে চান দেশের হয়ে বড়দের বিশ্বকাপও। তবে এখানে ক্রিকেট হয় গ্রীষ্ম ও শীত মৌসুমে। কোচ আক্ষেপ করে জানালেন, ইনডোর ফ্যাসিলিটিজ না থাকায় বর্ষা মৌসুমে ব্যাট-বল নিয়ে মাঠে নামতেই পারেন না ক্রিকেটাররা।

খুলনা বিকেএসপির সবচেয়ে বড় সীমাবদ্ধতা চিকিৎসা ব্যবস্থা। প্রতিষ্ঠানটিতে ৮০ জন প্রশিক্ষণার্থী থাকলেও নিয়মিত চিকিৎসক নেই এখানে। ফলে কেউ একটু গুরুতর অসুস্থ্ হলে বিপাকে পড়ে যান কর্মকর্তারা। আবার শহর থেকে বিকেএসপি দূরে অবস্থিত হওয়ায় তাৎক্ষণিক চিকিৎসাও মেলে না। প্রতি সপ্তাহে একজন মেডিকেল অফিসার সব প্রশিক্ষণার্থীর চেকআপ করেন। ভারপ্রাপ্ত উপ পরিচালক মতিউর রহমানের দাবি, ‘একজন মেডিকেল অফিসার সপ্তাহে একদিন যে চেকআপ করান সেটাই যথেষ্ট। ভবিষ্যতে ডিসিপ্লিন ও প্রশিক্ষণার্থীর সংখ্যা বাড়লে নিয়মিত চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হবে।’

তবে খুলনা বিকেএসপির নানা সীমাবদ্ধতার কথা স্বীকার করেছেন তিনি। আশ্বাস দিয়েছেন ক্রিকেটার ইনডোর ফ্যাসিলিটিজ সমস্যা সমাধানের,‘আমরা ইতিমধ্যে আমাদের বেশ কিছু চাহিদার বিষয়ে ঢাকা বিকেএসপিতে চিঠি পাঠিয়েছি। সেখান থেকে বেশ কিছু ব্যাপারে ইতিবাচক সাড়া পেয়েছি। আশা করছি ক্রিকেটারদের সমস্যা দ্রুতই সমাধান হয়ে যাবে।’

খুলনা গেজেট/এএমআর




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!